সেন্ট্রাল হাসপাতালের ২ চিকিৎসক গ্রেপ্তার

Posted on June 15, 2023

কর্পোরেট সংবাদ ডেস্ক : ভুল চিকিৎসায় নবজাতকের মৃত্যু ও মা মৃত্যুপথযাত্রী হওয়ার ঘটনায় হওয়া মামলায় রাজধানীর গ্রিন রোডের বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সেন্ট্রাল হাসপাতালের দুই চিকিৎসককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১৫ জুন) সকালে তাদের গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠায় ধানমন্ডি থানা পুলিশ।

ধানমন্ডি মডেল থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মাসুদ পারভেজ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, গতকাল রাতে সেন্ট্রাল হাসপাতালের ডা. শাহজাদী ও ডা. মিলির বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। সেই প্রেক্ষিতে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পরে আদালতে পাঠানো হয়েছে।’

সেন্ট্রাল হসপিটালে ভুল চিকিৎসা ও কর্তৃপক্ষের প্রতারণায় মাহবুবা রহমান আঁখি নামে এক প্রসূতি মৃত্যুঝুঁকিতে পড়েছেন বলে অভিযোগ করেন তার স্বামী ইয়াকুব আলী সুমন। তার দাবি, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অবহেলায় মারা গেছে তাদের নবজাতক সন্তানও।

আঁখি বর্তমানে ল্যাবএইড হাসপাতালের সিসিইউতে চিকিৎসাধীন। ঘটনা ধামাচাপা দিতে তার সঙ্গে দালালের মাধ্যমে সমঝোতার চেষ্টা চালানোর অভিযোগ উঠেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে।

জানা গেছে, তিন মাস ধরে ডা. সাহার অধীনে চেকআপে ছিলেন আঁখি। তার শারীরিক অবস্থা ভালো থাকায় নরমাল ডেলিভারিরও আশ্বাস দিয়েছিলেন তিনি। প্রসব ব্যথা উঠলে গত শুক্রবার কুমিল্লার তিতাস থেকে রাত সাড়ে ১২টার দিকে ঢাকায় আনা হয় আঁখিকে। হাসপাতালে ভর্তির পর নরমাল ডেলিভারির জন্য ৪০ মিনিটের ব্যায়াম করানো হয়। এ সময় হাসপাতাল থেকে জানানো হয়, ডা. সংযুক্তা সাহাই এই প্রসব করাবেন। তিনি অপারেশন থিয়েটারে আছেন। যদিও ডা. সাহা হাসপাতালে ছিলেন না।

আঁখির স্বামী সুমন বলেন, একদিকে তারা মিথ্যা তথ্য দিয়েছে, অন্যদিকে কোনো ধরনের চেকআপ ছাড়াই ডেলিভারি করে।

তিনি বলেন, গত শুক্রবার রাতে আঁখি জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। এখনো পর্যন্ত একই অবস্থায় রয়েছে। ডাক্তার বলেছে, রোগীর ফিরে আসার সম্ভাবনা এক ভাগেরও কম। বর্তমানে তার কিডনি, লিভার, হার্ট এবং অন্য কোনো অংশ কাজ করছে না। এর মধ্যে ব্রেনস্ট্রোকও করেছে, পাশাপাশি রক্তক্ষরণও বন্ধ হচ্ছে না। গত চার দিনে ১৭ ব্যাগ রক্ত লেগেছে। রক্তক্ষরণ বন্ধ না হওয়ায় ডাক্তার বলেছে, এভাবে কতক্ষণ তাকে তারা বাঁচিয়ে রাখা যাবে এর কোনো নির্দিষ্ট সময় নেই।

সুমন আরও বলেন, ‘ওরা আমার সন্তানকে মারল, স্ত্রীও যায় যায় অবস্থা। কার কাছে বিচার দেব। আমার স্ত্রী-সন্তানকে মেরে তারা দালালের মাধ্যমে সমঝোতার চেষ্টা করছে। তার চাইতে আমাকে গুলি করে ফেলুক।’

ল্যাবএইড হাসপাতালের অধ্যাপক ডা. সোহরাবুজ্জামানের অধীনে আঁখি চিকিৎসাধীন। তার জন্য মেডিকেল বোর্ডও গঠন করা হয়েছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, আঁখির অবস্থা একেবারে সংকটাপন্ন।

একজন সুস্থ রোগী কীভাবে হঠাৎ করেই সংকটাপন্ন হলেন? এমন প্রশ্নের জবাবে সেন্ট্রাল হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. আফসানা বিনতে গাউস বলেন, ‘রোগী নিজ ইচ্ছাতেই সেদিন নরমাল ডেলিভারি করাতে চেয়েছিলেন। সে চেষ্টা করতে গিয়েই রোগী ধীরে ধীরে কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের দিকে চলে যায়। যতটুকু জানতে পেরেছি, সারাদিন ধরে রোগীর লেবার পেইন ছিল, বিলম্বিত প্রসবে এটা হতে পারে।’

তিনি আরও বলেন, এখানে আসলে কোনো ভুল চিকিৎসা হয়নি। এক্ষেত্রে ভুল হতে পারে ডা. সাহা যে ছিলেন না, সেটি যদি রোগী ও স্বজনদের না জানিয়ে থাকে। এ ছাড়া চিকিৎসাজনিত কোনো বিষয়ে কোনো ভুল হয়নি।

এদিকে, এ ঘটনায় ডা. শাহজাদী ও ডা. মিলিসহ ১১ জনকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করেছে সেন্ট্রাল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ঘটনা তদন্তে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে।