চমৎকার সেতো হতেই হবে হুজুরের সাথে অমত কার ?

Posted on December 15, 2020

সজল রোশন : উপনিবেশিক শাসকরা আমাদের অবচেতন মনে ভয় আর দাসত্বের বীজ বপন করেছিলো, যা আজো আমাদের রাজনৈতিক দুর্বৃত্তদের দাস বানিয়ে রেখেছে। রবার্ট ক্লাইভ- মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ চলে গেলেও সরকার বান্ধব সেসব কালো আইন এখনো আমাদের দেশে চালু আছে। যারাই একবার ক্ষমতায় যাচ্ছে তারা জন নিরাপত্তা আইন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের নামে ক্ষমতার নিরাপত্তা আইন প্রণয়ন করে।

যেসব কথিত বুদ্ধিজীবীরা বিবেক বুদ্ধি শিকেয় তুলে, সাহেবের চমৎকার বলার সাথে সাথেই, চমৎকার সেতো হতেই হবে হুজুরের সাথে অমত কার ? বলতে পারবেন, তারাই পেয়ে যাবেন গুরুত্বপূর্ণ সব রাষ্ট্রীয় পদ, লুট-পাটের ভাগ। আর যারা এই বিবেকটাকে শিকেয় তুলতে না পারায় হুজুরের সাথে অমত করে বসবেন, তারাই গুম, খুন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বা দুদকের জালে আটকা পড়বেন। ব্রিটিশ ভারতেও ক্ষুদিরাম, সূর্যসেন জন্মেছিলো, যারা হাসতে হাসতে ফাঁসির মঞ্চে গিয়েছেন। আর স্বাধীন বাংলাদেশে আমরা জন্মাই বাবুই পাখি হয়ে, যে পাখি কাকতাড়ুয়ায় ভয় পাই।

একটি জাতির মেরুদন্ড ভেঙ্গে দিতে হলে, সবার আগে শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করতে হবে। মানুষের আস্থার জায়গাগুলোকে বিতর্কিত করে দিতে হবে। যুব সমাজ কে লক্ষচ্যুত করতে হবে। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে পোষা বিড়াল বানাতে হবে। গণমাধ্যম কে নখদন্তহীন বাঘ বানিয়ে জাতিকে সবসময় একটা গোলক ধাঁধায় রাখতে হবে। এই সকল বিষয়ে আমাদের সাফল্য পদ্মা সেতুর চেয়েও বড়।

যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা আইয়ুব-ইয়াহিয়া পরোয়া করতো না, সে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাইস চ্যান্সেলর হওয়ার যোগ্যতা ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের নেতাদের আজ্ঞাবহ থাকার নিশ্চয়তা। কি হবে এমন মেরুদন্ডহীন ভাইস চ্যান্সেলর হয়ে ? উপাচার্য ভবনে থাকতে পারবেন, ইউনিভার্সিটি থেকে একটা গাড়ী পাবেন, আরো কিছু সুযোগ সুবিধা হয়তো পাবেন। কিন্তু ঢাকা ইউনিভার্সিটির উপাচার্যের যে মর্যাদা, তা কি পাবেন ? শিক্ষক যদি অনুকরণীয় আদর্শ না হয় তবে তার শিক্ষকতায় না আসাই ভালো।

ব্রিটিশ আমলে, পাকিস্তান আমলেও আমাদের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পেতেন, তাদের সম্পর্কে আমাদের শিক্ষক দের কাছ থেকে শুনেছি। তাদের ব্যক্তিত্ব এমন ছিল যে তিনি শিক্ষক, তিনি সবার উর্ধে | সত্যই তো তাই, প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ বা প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা সুযোগ থাকলেও আর ভাইস প্রেসিডেন্ট এর চাকুরী করতে পারবেন না মান সম্মানের ভয়ে। কিন্তু কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা গর্বের সাথেই করতে পারেন। শিক্ষকের উপরে আর কে ? কিন্তু আমাদের এইসব শিক্ষকেরা কি তা জানেন ?

যে কয়জন আত্মমর্যাদা সম্পন্ন শিক্ষক কে জানি, সত্যিই দেশ নিয়ে ভাবেন, শিক্ষকতা কে পেশা নয় দায়িত্ব হিসেবে নিয়েছেন। তাদের ভাবনা আমাদের খুব একটা কাজে লাগছে না। টিভি চ্যানেলগুলোর টক শোতে তারা ডাক পান না। পত্রিকাগুলো তাদের লেখা ছাপানোর সাহস পায় না। কারণ তারা শিক্ষকের মর্যাদা জলাঞ্জলি দিয়ে রাবনের স্তুতি গায় না। একটা প্রশাসনিক পদের জন্য ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের কাছে ধরনা দেন না। তাঁদের একটি মেরুদন্ড আছে। এই দুঃসময়েও যারা রাবনের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে জাতির মেরুদন্ড হয়ে দাঁড়িয়েছেন, নিখোঁজ হয়েছেন, খুন হয়েছেন, "শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে" তাদেরও শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করি।
লেখক: সজল রোশন, নিউ ইয়র্ক