নিজস্ব প্রতিবেদক: ঢাকা-৭ আসনের সংসদ সদস্য হাজী মো. সেলিমের ছেলে ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোহাম্মদ ইরফান সেলিমকে অবৈধ অস্ত্র ও মাদক রাখার দায়ে এক বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
সোমবার (২৬ অক্টোবর) সন্ধ্যায় র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সরোয়ার আলম তাকে এ সাজা দেন।
আজ সন্ধ্যায় র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিক বিল্লাহ এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।
এর আগে হাজী মো. সেলিমের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে আগ্নেয়াস্ত্র, মদ, বিয়ার ও ওয়াকিটকিসহ বিপুল পরিমাণ নিরাপত্তা সরঞ্জাম উদ্ধার করেছে র্যাব।
সোমবার (২৬ অক্টোবর) দুপুর ১টা থেকে সাড়ে ৩টা পর্যন্ত চকবাজারের ২৬ নম্বর দেবীদাস ঘাট লেনের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে সাংসদপুত্র মোহাম্মদ ইরফান সেলিমকে আটক করা কালে বাড়ি তল্লাশি চালিয়ে ওইসব দ্রব্য উদ্ধার করা হয়।
তার রুমের তোশকের নিচে ম্যাগজিন ভর্তি একটি বিদেশী পিস্তল পাওয়া গেছে। এছাড়া ৫ম তলায় পূর্ব পাশের কর্নারে ৫টি ওয়ারল্যাস এবিএস সিস্টেম ও ৪০টি ওয়াকিটকি সেট, একটি হ্যান্ডকাপ, একটি বন্দুক, বিদেশী মদের বোতল ও বিয়ার মদ পাওয়া গেছে।
এর আগে, আজ ভোরে ভুক্তভোগী নৌবাহিনীর কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট ওয়াসিম নিজেই বাদী হয়ে ধানমন্ডি থানায় মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় সংসদ সদস্য হাজী সেলিমের ছেলে ইরফান সেলিম (৩৭), তার বডিগার্ড মোহাম্মদ জাহিদ (৩৫), হাজী সেলিমের মদীনা গ্রুপের প্রটোকল অফিসার এবি সিদ্দিক দিপু (৪৫), গাড়িচালক মিজানুর রহমানসহ (৩০) অজ্ঞাতপরিচয়ের দু-তিনজনকে আসামি করা হয়েছে। সেই মামলায় এর আগে গাড়িচালক মিজানুর রহমানকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
আরও পড়তে পারেন: ওয়্যারলেস চার্জার আনছে শাওমি, ১৯ মিনিটে ফোন ফুল চার্জ
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, রোববার (২৫ অক্টোবর) রাতে বাংলাদেশ নৌবাহিনী কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট ওয়াসিফ আহমদ নীলক্ষেত থেকে বই কিনে তাঁর স্ত্রীসহ মোটরসাইকেলে করে ক্যান্টনমেন্টে যাচ্ছিলেন। একটি জিপ যার মধ্যে সংসদ সদস্যের স্টিকার লাগানো ছিল। ওই গাড়িটি পেছন থেকে মোটরসাইকেলকে ধাক্কা দেয়। পরে মোটরসাইকেলটি থামিয়ে পরিচয় দেন লেফটেন্যান্ট ওয়াসিফ আহমদ। তিনি ধাক্কা দেওয়ার বিষয়টি জানতে চান। তখন গাড়ি থেকে আসামিরা একসঙ্গে বলতে থাকেন, তোর নৌবাহিনী/সেনাবাহিনী বের করতেছি, তোর লেফটেন্যান্ট/ক্যাপ্টেন বের করতেছি। তোকে এখনি মেরে ফেলব’ বলে কিল-ঘুষি মারেন এবং আমার স্ত্রীকে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করেন।
তারা আমাকে মারধর করে রক্তাক্ত অবস্থায় ফেলে যায়। পরে আমার স্ত্রী, স্থানীয় জনতা এবং পাশে ডিউটিরত ধানমন্ডি থানার ট্রাফিক পুলিশ কর্মকর্তা আমাকে উদ্ধার করে আনোয়ার খান মডেল হাসপাতালে নিয়ে যায়।
মামলায় মোট পাঁচটি ফৌজদারি অপরাধের ধারার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। অপরাধগুলো হলো- দণ্ডবিধি ১৪৩ অনুযায়ী বেআইনি সমাবেশের সদস্য হয়ে কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে অপরাধমূলকভাবে বল প্রয়োগ করা, ৩৪১ অনুযায়ী কোনো ব্যক্তকে অবৈধভাবে নিয়ন্ত্রণ করা, ৩৩২ ধারা অনুযায়ী সরকারি কর্মকর্তার কাজে বাধাদানের উদ্দেশ্যে আহত করা, ৩৫৩ ধারা অনুযায়ী সরকারি কর্মকর্তার ওপর বল প্রয়োগ করা এবং ৫০৬ ধারায় প্রাণনাশের হুমকি দেয়ার।
এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এতে ওয়াসিফ আহমেদকে রক্তাক্ত দেখা যায়। ভিডিওতে তাঁকে মারধর করে তাঁর দাঁত ভেঙে ফেলা হয়েছে দাবি করলেও জিডিতে এ কথা উল্লেখ করা হয়নি।