‘জেড’ ক্যাটাগরির কোম্পানির বিষয়ে বিএসইসির পদক্ষেপ প্রসংশনীয়

Posted on August 25, 2020

সম্পাদকীয় : পুঁজিবাজারে ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে মোট ৫৩টি কোম্পানি রয়েছে। সাধারণত দুর্বল মৌলভিত্তি ও ঝুঁকিপূর্ণ কোম্পানির শেয়ার হিসেবে ‘জেড’ ক্যাটাগরিকে বিবেচনা করা হয়। স্টক এক্সচেঞ্জের স্যাটলমেন্ট অব ট্রান্সজকশন রেগুলেশন, ২০১৩ অনুসারে কোনো কোম্পানি শেয়ারহোল্ডারদের জন্য লভ্যাংশ ঘোষণা না করলে, লভ্যাংশ ঘোষণা করলেও নির্ধারিত সময়ে বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) আয়োজনে ব্যর্থ হলে, ৬ মাসের বেশি সময় ধরে উৎপাদন বা ব্যবসা বন্ধ থাকলে অথবা কোম্পানির পুঁঞ্জিভুত লোকসান তার পরিশোধিত মূলধনকে ছাড়িয়ে গেলে ওই কোম্পানিকে জেড ক্যাটাগরিতে অন্তর্ভূক্ত করা। অনেক সময় মন্দা বাজারে দুর্বল মৌলভিত্তি ও ঝুঁকিপূর্ণ কোম্পানির শেয়ার দর বাড়তে থাকে। এ কারণে একশ্রেণির বিনিয়োগকারী কোনো প্রকার যাচাই বাচাই না করেই স্বল্পমূলধনী ও দুর্বল কোম্পানির বিনিয়োগ করেন। এতে খুব দ্রুতই ওইসব বিনিয়োগকারী ক্ষতিগ্রস্ত হন। আর বাজারের ভিত্তিও দুর্বল হয়। পুঁজিবাজার থেকে টাকা উত্তোলন করে এসব কোম্পানি বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ না দিয়ে  জেড ক্যাটাগরিতে অবস্থান করছে। এরপর বছরের পর বছর বিনিয়োগকারীদের ক্ষতির মধ্যে থাকতে হচ্ছে। 

সম্প্রতি 'জেড' ক্যাটাগরি কোম্পানির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থা নিয়েছে বিএসইসি। কোম্পানিগুলোর মধ্যে সুশাসন আনার লক্ষ্যে একাধিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।এমন বাস্তবতায় বিএসইসের  পদক্ষেপ কিছুটা হলেও আশার সঞ্চার করবে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে অন্যদিকে ওইসব কোম্পানির পরিচালকদের মধ্যেও জবাবদিহিতা তৈরি হবে।

শেয়ারবাজারে বিভিন্ন অনিয়মের কারনে  সম্প্রতি বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি ) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের নেতৃত্বে গত দেড় মাসে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে সাড়ে ৪২ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এরমাধ্যমে বাজারে সুশাসন প্রতিষ্ঠার একটি বার্তা প্রকাশ পেয়েছে। পাশাপাশি ‘জেড’ ক্যাটাগরির কোম্পানির শেয়ারে কারসাজি বন্ধে  নিয়ন্ত্রক সংস্থা তাদের ৩ শ্রেণীতে বিভাজন করে কোম্পানিগুলোর বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহন করেন। প্রথমত, যেগুলোর অস্তিত্ব নেই বা বছরের পর বছর বন্ধ বা কোনোভাবেই চালুর সম্ভাবনা নেই কিংবা মালিক বা উদ্যোক্তারা পলাতক, তাদের এক শ্রেণিতে রাখা হয়েছে।

দ্বিতীয় শ্রেণিতে রয়েছে যেসব মূল মালিকপক্ষ স্বল্প সংখ্যক শেয়ার নিয়ে কোম্পানি নিয়ন্ত্রণ করছে বা ইচ্ছাকৃতভাবে লোকসান দেখিয়ে ফায়দা তুলছে।

তৃতীয় শ্রেণিতে রয়েছে ব্যবসায়িক কার্যক্রম চালু থাকা কোম্পানি, যেগুলো ব্যবস্থাপনাগত দুর্বলতায় লোকসান করছে। উল্লেখিত তিন শ্রেণীতে বিভক্ত করে প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে।

এছারা পুঁজিবাজারে জেড ক্যাটাগরির কোম্পানিগুলোর পরিচালন মান উন্নয়ন ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় একগুচ্ছ কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরটিজ অ্যান্ড কমিশন (বিএসইসি)। বিএসইসির নেওয়া সিদ্ধান্তগুলো হচ্ছে-

জেড ক্যাটাগরির কোম্পানির সকল স্পন্সর ও বর্তমান পরিচালকদের ধারণকৃত শেয়ার বিক্রয়, হস্তান্তর, স্থানান্তর এবং প্লেজ বন্ধ থাকবে। অর্থাৎ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত তারা নিজ কোম্পানির ধারণকৃত শেয়ার বিক্রি করতে পারবেন না, কারো নামে স্থানান্তর করা যাবে না, কাউকে উপহার দেওয়া যাবে না, এসব শেয়ার জামানত রেখে কোনো ধরণের ঋণও নেওয়া যাবে না।

জেট ক্যাটাগরিতে লেনদেনকৃত কোম্পানীসমুহকে ৬ মাসের মধ্যে বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) করতে হবে।

সকল ধরণের শেয়ার হােল্ডার মিটিং (এজিএম/ইজিএম) ই ভোটিং/ অনলাইনের সুবিধা প্রদানপূর্বক ডিজিটাল প্লাটফর্মে অথবা হাইব্রিড সিস্টেমে করতে হবে;

যে সকল কোম্পানী দুই বছর বা তদূর্ধ সময় ধরে জেট ক্যাটাগরিতে অন্তর্ভূক্ত সেই সমস্ত কোম্পানি, ৪৫ কর্মদিবসের মধ্যে চলমান বাের্ড পুনর্গঠন করতে ব্যর্থ হলে বর্তমান পরিচালক ও স্পন্সরগণ অন্য কোনো তালিকাভুক্ত কোম্পানীতে ও পুঁজিবাজার মধ্যস্থতাকারী এবং পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট কোন কোম্পানীর পরিচালক হিসেবে থাকতে পারবেন না। কমিশন এক্ষেত্রে বিশেষ নিরীক্ষক ও কমিশন কর্তৃক পর্যবেক্ষক নিয়ােগের। মাধ্যমে বাের্ড পুনর্গঠন করে জেট ক্যাটাগরির কোম্পানীর সুশাসন নিশ্চিত করবে।

পুনর্গঠিত পরিচালনা পর্ষদ চার বছরের মধ্যে কোম্পানীর সার্বিক অবস্থার উন্নয়ন করতে ব্যর্থ হলে স্টক এক্সচেঞ্জ উক্ত কোম্পানীকে তালিকাচ্যুতিসহ অন্যান্য আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

এদিকে কোনো কোম্পানিকে জেড ক্যাটাগরিতে স্থানান্তরের বিষয়ে নতুন করে বেশকিছু শর্তারোপ করেছে কমিশন। শর্তগুলো হচ্ছে ৬ মাস বা ততােধিক সময় কোম্পানির উৎপাদন বা কার্যক্রম বন্ধ থাকলে; অথবা যদি পরপর ২ দুই বছর নীট কার্যকর লােকসান অথবা নেগেটিভ ক্যাশ ফ্লো অপারেশন থাকলে অথবা যদি তালিকাভুক্তি কোম্পানীর পুঞ্জিভূত লােকসান তার পরিশােধিত মূলধনকে অতিক্রম করে; এছাড়াও, কোনো তালিকাভুক্ত কোম্পানিকে সিকিউরিটিজ আইন ভঙ্গের জন্য কমিশনের অনুমতিক্রমে স্টক এক্সচেঞ্জয় জেট ক্যাটাগিরিতে স্থানান্তর করতে পারবে।

তাছাড়া জেড ক্যাটাগরির কোম্পানির শেয়ার কেনাবেচার প্রক্রিয়া সহজ করার জন্য শেয়ার দেনদেনে নিষ্পত্তির সময় কমিয়ে টি প্লাস থ্রি করেছে বিএসইসি। এতদিন এই ক্যাটাগরির শেয়ারের লেনদেন নিষ্পত্তি হতো টি প্লাস নাইন (T+9) ভিত্তিতে। নতুন সিদ্ধান্তের ফলে শেয়ার কেনার চতুর্থদিনে বিনিয়োগকারীর বিও হিসাবে ওই শেয়ার জমা হবে। একইভাবে কেউ শেয়ার বিক্রি করলে চতুর্থ দিনে তার টাকা পাবেন। এতদিন দশম দিনে শেয়ার বা টাকা পাওয়া যেত।বর্তমানে জেড ক্যাটাগরি ছাড়া বাকি সব ক্যাটাগরির (এ, বি ও এন) শেয়ার লেনদেনের নিষ্পত্তি হয় টি প্লাস ২ ভিত্তিতে।

দেরিতে হলেও জেড ক্যাটাগরির কোম্পানির বিষয়ে বিএসইসির বর্তমান পদক্ষেপ কে সাধুবাদ জানাই। এই পদক্ষেপ গ্রহনের ফলে কোম্পানির পরিচালকদের মধ্যে যেমন জবাবদিহিতা তৈরি হবে তেমনি বিনিয়োগকারীদের মধ্যেও আস্থার সংকট দুর হবে।