জেনারেল ওসমানী দিয়ে গেছেন, নিয়ে যান নি

Posted on August 16, 2020

এফ এইচ ফারহান : জেনারেল ওসমানী সাহেবের ঘনিষ্ঠজনদের একজন ছিলেন আমার পিতা। জিয়ার শাসনামলে তাঁর পদাবনতি ঘটিয়ে কর্ণেল করা হয়। ওসমানী এর প্রতিকার চেয়ে হাইকোর্টে মামলা করেন। কর্নেল হামিদ জিয়াউর রহমানকে ওসমানী প্রসঙ্গে বলেছিলেন, ‘তুমি জেনারেলের ফাইলটি আটকে রেখেছ কেন? ওটা ছেড়ে দাও।’ উত্তরে জিয়া বলেছিলেন,‘ এই কথাটি ওসমানী আমাকে বলতে পারেন না?’

বঙ্গবীর ওসমানী এতটাই ব্যক্তিত্ববান ছিলেন! '৭৪ সনে আমার পিতা শেখ তজমুল আলী চেয়ারম্যানের দাবির প্রেক্ষিতে জেনারেল ওসমানীর প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় ফেঞ্চুগঞ্জ সারকারখানায় সর্বপ্রথম ৫জন স্থfনীয় লোকের কোটাভিত্তিক চাকুরি নিশ্চিত করেন। এছাড়াও সেদিন পাশ্ববর্তী কচুয়াবহর, মির্জাপুর, পানিসাইল, মাইজগাঁও, চেলারচক, বকশিপুর, বারহাল, শিমুলতলা, কর্মদা ও নিজামপুর গ্রামকে সারকারখানার নির্গত দূষিত বর্জ্য গ্যাসে ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা চিহ্নিত করে ও দুর্গত চিলুয়া বিল হাওরকে ফসলী ও জমির পরিমাণে নির্দিষ্ট হারে প্রথম বারের মতো ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করে দেন। তখন ওসমানী ডাক, তার, টেলিযোগাযোগ, অভ্যন্তরীণ নৌ যোগাযোগ, জাহাজ ও বিমান মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী। ’৭৩-এর নির্বাচনে ৯৪ শতাংশ ভোটে নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি।

'৭০-এর নির্বাচনে আওয়ামীলীগে যোগদান করে ফেঞ্চুগঞ্জ-বালাগঞ্জ-বিশ্বনাথ এলাকা থেকে সাংসদ নির্বাচিত হোন তিনি। মুক্তিযুদ্ধের এই সর্বাধিনায়ক খুবই অভিমানী ছিলেন। বাকশাল গঠনের প্রস্তাবনা আসলে তিনি পদত্যাগ করেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধু হত্যার পর জিয়ার শাসনামলে জনতা পার্টি গঠন করে তার প্রথম সংবাদ সম্মেলনেই তিনি বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার দাবি করেন। পরবর্তীতে জাতীয় ৪ নেতাকে হত্যার পর যখন তিনি নিশ্চিত হলেন যে, কাপুরুষদের অধীনে থেকে রক্তপাত এড়ানো সম্ভব নয়, তখন তিনি স্বেচ্ছায় ধোঁকাবাজ মোস্তাকের প্রতিরক্ষা বিষয়ক উপদেষ্ঠার পদ থেকে অব্যাহতি নেন। নিজেকে ব্যবহার করা হয়েছে, এমনটি বুঝতে পেরে জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত স্বাধীনতা বিরোধীদের পরাজিত করার রাজনৈতিক প্রচেষ্টা চালিয়ে গিয়েছেন তিনি।

যে যেটা করে যায়, সেটা থেকে যায়। ওসমানীও তাদের একজন যিনি আমাদের শুধুই দিয়ে গেছেন। কিছু নিয়ে যান নি।

লেখক : এফ এইচ ফারহান, কলামিস্ট।