মুহাম্মদ রিদোয়ানুল হক: পানি যে পাত্রে রাখে সেই পাত্রের আকার ধারণ করবে। এটাই পানির ধর্ম। আর টাকাও যাঁর কাছে যায়, টাকা তাঁর। যদিও টাকার গায়ে লিখা থাকে, ‘চাহিবা মাত্র ইহার বাহককে দিতে বাধ্য থাকিব।’ আদৌও কী চাইলেই সহজেই কেউ ফেরত দেয়? বলা যায়, টাকা একটি মূল্যবান তরল সম্পদ। তরল হলো পদার্থের চারটি অবস্থার একটি অবস্থা। অন্য তিনটি অবস্থা হল কঠিন, প্লাজমা, ও বায়বীয়। যার নির্দিষ্ট আয়তন আছে, কিন্তু কোন নির্দিষ্ট আকার নেই। তবে তরলের মধ্যে থাকা অণুগুলো স্বাধীনভাবে চলাচল করতে পারে, তরলের সবচেয়ে সাধারণ উদাহরণ কিন্তু পানি।
স্বভাবতই টাকাও আমার মতে তরলের মতো। টাকা আয় করা যেমন কঠিন, তেমনি খরচ বা ব্যয় করা তাঁর চেয়ে বেশি সহজ। আপনি না চাইলেও অনেক সময় খরচ করতে হয়। কারণ টাকা আসলে মানুষের নানা ধরনের ইচ্ছার বা চাহিদার সৃষ্টি করে। আবার যোগান বা চাহিদা পুরণ করেন। এটাই স্বাভাবিক। একে কখনো বাদ দেওয়া যাবে না।
এই খরচের পর আপনি একটা সময় বেশ তৃপ্তি পাবেন। এখন আসল কথায় আসি। যেমন-কখন খরচ বা ব্যয় গলার কাটা হয়ে দাঁড়ায়। আপনার জন্য নয় শুধু, সকলের জন্য। মনে করেন-নতুন চাকরি পেয়েছেন। মাস শেষে হাজার হাজার টাকা আপনার বেতন। নিজের প্রয়োজনীয় খরচ এবং পারিবারিক খরচ ব্যয় করার পর মাস শেষে কিছু টাকা জমা হয়। আপনি ধীরে ধীরে নতুন একটি ব্যবসা খুঁজছেন। হয়তো মনে মনে ভাবছেন, কি করা যায়। বাড়তি কিছু টাকা আয় করার জন্য। ঠিক তখনি আপনার কিছু বন্ধু, আত্মীয়, প্রতিবেশীও পেয়ে যাবেন। আপনি খুশিতে মনে মনে শান্তির নিঃশ্বাস নিবেন। এতদিন পরে বুঝি বাড়তি কিছু টাকা আয় করার পথ তৈরি হবে। নতুন ব্যবসা হবে নিজের নামে। স্বপ্ন বিভোর। কিন্তু আপনার সেই বন্ধু, আত্মীয় বা প্রতিবেশী ভাবছেন ভিন্ন কিছু। তিনি বিভোর অমুক কে এইবার পাইছি। সর্বশান্ত করে ছাড়ব। অনেক দিন সুযোগ পাইনা। টাকা ফাঁদে ফেলে খাওয়ার জন্য।
এবার একটু শোনেন পাঠক। কোন কোন ব্যবসার ফাঁদ বা লোভ আপনাকে দেখাতে পারেন-১. প্রথমে কয়েকজন মিলে গ্রুপ ব্যবসা করতে অফার করবে, যাতে আপনার বিশ্বাস যোগ্যতা বাড়ে। ২. গ্রুপ সমিতির মাধ্যমে জায়গা জমি কিনে রাখতে বলবে। ৩. জমি বন্ধক নিতে বলবে, যা তাঁর কাছে পুর্ব প্ল্যান মতে তৈরি থাকবে। ৪. ছোট ছোট মাছের প্রজেক্টে শেয়ার দিতে বলবে, যেখানে সে থাকবে বলবে। লাভ ও বেশি দেখাবে। ৫. লবণের মাঠের ব্যবসা বা লবণের ব্যবসা দেখাবে। যা সে নিজের মতো পরিচালনা করবে জানাবে। টেনশন ব্যবসার গল্প শোনাবে। ৬. মাঝে মাঝে টাকা ধার নেওয়া শুরু করবে। ৭. হঠাৎ হঠাৎ তার সমস্যা সৃষ্টি হবে, আজ তাঁর মা অসুস্থ বা ছেলে-মেয়ে অসুস্থ বা পারিবারিক সমস্যা কিছু টাকা লাগবে। কত বাহনা। ৮. মাঝে মাঝে তাঁর ব্যাংকের কার্ড বুথে আটকে যাবে। তার জরুরী কিছু টাকা লাগবে।
এবার শোনেন পাঠক। যা আপনার অবশ্যই বর্জনীয়ঃ ১. আপনার প্রকৃত আয় বা বেতন কাউকে বলা যাবে না। ২. খুব খুব কাছে আত্মীয়, বন্ধু এবং প্রতিবেশীকে টাকা ধার দেওয়া যাবে না। যা কখনো আপনি খুঁজতে পারবেন না এবং নিতেও পারবেন না। সেও আপনার দুঃখ বুঝবে না। ৩. হঠাৎ করে পরিচিত বন্ধুর সাথে কোনো ধরনের ব্যবসায় জড়ানো যাবে না। ৪.যার হঠাৎ হঠাৎ সমস্যা সৃষ্টি হয়। সেই ধরনের মানুষের কাছ থেকে দূরে থাকতে হবে। ৫. যার মাঝে মাঝে ব্যাংকের এটিএম কার্ড বুথে আটকে যায়। তাঁকে কখনো টাকা ধার দেওয়া যাবে না। ৬. ছায়া বন্ধক জমি নেওয়া যাবে না। ৭. যে ব্যবসাতে নিজে সময় দিতে পারবেন না; তা কখনো করা যাবে না। যত লাভের হোক।
এবার পাঠকের করণীয় কী হতে পারে, তা একটু বলি-১. যদি গ্রুপে বা যৌথ ব্যবসা করতে হয়, যাদের সাথে ব্যবসা করবেন তাঁদের সবাইকে চিনতে হবে এবং নিজেকে সময় দিতে হবে। ২. গ্রুপে বা সমিতির মাধ্যমে জমি নিলে, জমির খতিয়ান, হালসন খাজনা, দলিল ভালো করে দেখতে হবে। দাতা-গ্রহীতার জাতীয় পরিচয়পত্র ক্স চেক করতে হবে। প্রয়োজনীয় আইনি পরামর্শ নিতে হবে। ৩. জমির প্রকৃত মালিক কে না দেখে বা জমি না দেখে বন্ধক নেওয়া যাবে না। ভোগ দখলে থাকতে হবে। ৪. জমি কেনাবেচার সময় নামজারি করার আগে উকিল এবং সার্ভেয়ার নিয়ে জমির খতিয়ান বা দাগের সাথে সমন্বয় আছে কীনা দেখে নিতে হবে।৫. কোন অংশীদার সম্মত না হলে কোন ভূতড়ে ব্যবসায় না জড়ানোই উত্তম।
অন্যতায়, নিজের মাথার চুলও যাবে, ঘুমও হারাম হবে। টাকা কিন্তু জীবনেও উদ্ধার হবে না। টাকা চাইতে চাইতে গলার পানি শুকিয়ে যাবে। কিন্তু সেই বন্ধু বা আত্মীয়ের মন ভিঁজবে না। সে তোমার কলও রিসিভ করবে না। অনেক সময়, কথা বলার সময় দুই টাকার দামও দিবে না। কারণ আপনি আটকে গেছেন, কাউকে বলতে পারবেন না। টাকা পরিশোধে তারিখের পর তারিখ পরিবর্তন হবে। কিন্তু নির্দিষ্ট সেই তারিখ বা সময় আর আসবে না। আপনার নিজের ধারের টাকা কত আকুতি মিনতি করতে হবে। কত ধরনের মিথ্যার আশ্রয় নিতে হবে। কারণ আপনি আটকে গেছেন, আপনার গলায় কাঁটা আটকে গেছে, কষ্ট আপনারই হবে। সে হবে নিখোঁজ।
লেখকঃ বেসরকারি চাকরিজীবী, কক্সবাজার।
© ২০২৩ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | কর্পোরেট সংবাদ সম্পাদক - মোঃ মিজানুর রহমান । উপদেষ্টা সম্পাদক- জেসমিন আক্তার, এফসিএস ই-মেইলঃ corporatesangbad@gmail.com । ফোনঃ ০২২২-৩৩৫৪১২৫ । মোবাইলঃ ০১৭১১০৭৬৮১৫ অফিসঃ ৫৫/বি, নোয়াখালী টাওয়ার, ১১ তলা, সুইট ১১-এফ, পুরানা পল্টন, ঢাকা ১০০০ |
‘নিজের মাথার চুলও যাবে, ঘুমও হারাম হবে’ https://corporatesangbad.com/30830/ |