বেনাপোল প্রতিনিধি : পেঁয়াজ আমদানির খবরে আবারও নড়েচড়ে বসেছে দুই দেশের ব্যবসায়ীরা। পেঁয়াজের বাজার ক্রমেই অস্থিতিশীল হয়ে উঠছিল। ৩০ টাকার পেঁয়াজ ভোক্তাদের কিনতে হয়েছে ৮০ টাকা কেজিতে। পেঁয়াজ আমদানি না করা পর্যন্ত দাম কমার সম্ভাবনা নেই বলে সাধারন ব্যবসায়ী ও ভোক্তারা দাবি জানানোর পর পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে আমদানির অনুমতি (আইপি) প্রদানের ব্যবস্থা নিতে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিবকে চিঠি দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম নিয়ন্ত্রক শামীমা আকতার স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এ তথ্য জানানো হয়।
চিঠিতে বলা হয়েছে, খুচরা বাজারে পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধি পাচ্ছে। টিসিবির তথ্যানুযায়ী প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম একমাস আগে ৩০ টাকা ছিল, যা গত সপ্তাহে ৫০ টাকা করে বিক্রি হয়েছে এবং বর্তমানে ৭০-৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। পেঁয়াজের সরবরাহ বৃদ্ধি করে স্থিতিশীল করার উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন।
এমতাবস্থায়, পেঁয়াজের বাজার স্থিতিশীল করার স্বার্থে জরুরি ভিত্তিতে সীমিত পরিসরে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি প্রদানের বিষয়টি বিবেচনা করার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ জানানো হলো।
এদিকে এ খবরে অন্যান্য বন্দরগুলোতে ভারতীয় ট্রাক ভর্তি পেঁয়াজ ভারত সীমান্তে অপেক্ষা করছে বাংলাদেশে প্রবেশের জন্য। তবে বেনাপোলের বিপরীতে বিপুল পরিমাণ পেঁয়াজ ভারতের বনগাঁ এলাকার বিভিন্ন গোডাউনে মজুত করে রাখা হয়েছে। উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রে যোগাযোগ রাখছেন বাংলাদেশি পেঁয়াজ ব্যবসায়ীরা। সরকারের অনুমতি পাওয়ার সাথে সাথে তারা আইপি ইস্যু করলেই পেঁয়াজ আসবে বাংলাদেশে।
সংশ্লিস্ট সূত্রে জানা গেছে, চাষিদের উৎপাদিত পেঁয়াজের ন্যায্য দাম নিশ্চিত করতে চলতি বছরের ১৬ মার্চ থেকে পেঁয়াজ আমদানি নিষিদ্ধ করে সরকার। সরকার ইমপোর্ট পারমিট বন্ধ করে দেয়। সরকারের এমন সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়েছিল চাষীসহ ব্যবসায়ীরা। কিন্থু এক শ্রেণী ব্যবসায়ীরা অধিক মুনাফা লোভে নানা অজুহাতে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি করতে থাকে। হঠাৎ করে দাম বৃদ্ধির কারনে বিপাকে পড়েন নিম্ন আয়ের মানুষগুলো। সরকারকে নিয়মিত বাজার মনিটরিংয়ের দাবি জানান তারা।
বাজারের অস্বাভাবিক পেঁয়াজের মূল বৃদ্ধি হওয়ায় বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি ও কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, কিছুদিন ধরে পেঁয়াজের দাম নিয়ে অস্থিরতা যাচ্ছে। হঠাৎ করে দাম বেড়ে, আবার কিছু কমে যায়, আবার বাড়ে। দু-তিনদিনের ব্যবধানে বাজার ওঠানামা করে। এটা কেন হবে, সবকিছুর ধারাবাহিকতা থাকে। গত ৪-৫ দিন আমরা আরও কাছ থেকে বাজার বোঝার চেষ্টা করেছি। পেঁয়াজের কেজি ৮০ টাকা এটা কোনোক্রমেই গ্রহণযোগ্য নয়, আমরা এটা মেনে নেই না।’
তারা বলেন, ‘মধ্যম আয়ের, সীমিত আয়ের সব মানুষেরই কষ্ট হচ্ছে। ৮০ টাকা কেজি তো পেঁয়াজ হতে পারে না। নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে আমরা শেষ পর্যন্ত চাষির স্বার্থটা দেখতে চাচ্ছি। ‘আমরা মাঠ থেকে তথ্য পাচ্ছি যথেষ্ট পেঁয়াজ আছে। তাহলে দাম কেন কমছে না, এটা তো হওয়ার কথা নয়। দাম যদি সহনীয় অবস্থায় রাখা না যায় তাহলে আমাদের আমদানিতে যেতে হবে। তবে দাম কোনোক্রমেই ৮০ টাকা থাকবে না। আমরা চেষ্টা করছি, এ সিন্ডিকেট বা যারা এটা নিয়ন্ত্রণ করছে, তাদের নিয়ন্ত্রণের মধ্যে নিয়ে আসা যায় কি না।’
ভারতে পেঁয়াজের দাম কম জানিয়ে মন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘সেখান (ভারত) থেকে আমদানি করে আমাদের বাজারকে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আনতে হবে।’ দামটা ৪৫ টাকার বেশি হওয়া উচিত নয়। আমদানি করলে দাম আরও কমে যাবে। ভারতে এত পেঁয়াজ হয়েছে। ওদের উচ্চ পর্যায় থেকে আমাদের বারবার অনুরোধ করছে। বাজারে মূল্য কমাতে সিদ্ধান্ত নিয়ে ভারত থেকে জরুরি ভিত্তিতে সীমিত পরিসরেপেঁয়াজ আমদানির নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ হওয়ার আগে চলতি অর্থবছরের ৬ মাসে বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারত থেকে ৯ হাজার ৮৮৭ টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে। তবে দেশে পর্যাপ্ত পেঁয়াজ উৎপাদন ও দাম স্বাভাবিক পর্যায়ে থাকায় গত জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি ২ মাস ধরে ভারতীয় পেঁয়াজের আমদানির পরিমাণ অনেকাংশে কমেছিল।
বেনাপোল বন্দরের পেঁয়াজ আমদানিকারক শামিম হোসেন জানান, আমাদের অনেক এলসির পেঁয়াজ ভারত সীমান্তের গোডাউনে রয়েছে। সরকার পারমিশন দেওয়ার পর আমরা আমদানির জন্য প্রয়োজনীয় কার্যক্রম শুরু করবো। বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি হলে দাম অর্ধেকে নেমে আসবে।
পেঁয়াজ আমদানিকারক মেসার্স গাজী ইন্টারন্যাশনালের প্রতিনিধি আবু জাফর জানান, খবর পেয়েছি বাণিজ্য মন্ত্রণালয় পেঁয়াজ আমদানির জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন কৃষি মন্ত্রনালয়কে। নির্দেশনা আসলেই আমরা আমদানির জন্য প্রস্তুুত রয়েছি।
বেনাপোল পাইকারি পেঁয়াজ বিক্রেতা মুজিবর রহমান জানান, আমদানির খবরে স্থানীয় বাজারে এক দিনেই দাম কমেছে কেজিতে ৪ থেকে ৫ টাকা। আমদানি বাড়লেই আরও দাম কমে আসবে।
বেনাপোল আমদানি-রপ্তানিকারক সমিতির সহ সভাপতি আমিনুল হক আনু বলেন, গত ১৫ মার্চ থেকে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানির ইমপোর্ট পারমিট বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশ সরকার। যার কারনে এতদিন পেঁয়াজ আমদানি হয়নি। সামনে কোরবানি ঈদ। এই দিনে পেঁয়াজের প্রয়োজন বেশি হয়। সরকার যদি ইমপোর্ট পারমিট দেয় তাহলে পেঁয়াজ আমদানি হবে এবং দাম অনেকটাই কমে আসবে।
বেনাপোল বন্দরের উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের কর্মকর্তা হেমন্ত কুমার সরকার জানান, এখনো কোন নির্দেশনা আসেনি। নির্দেশনা আসলে আমরা এখান থেকে আইপি ও উদ্ভিদ সার্টিফিকেট ইস্যু করবো। আমদানিকারকদের তখন পেঁয়াজ আমদানি করতে কোন বাধা থাকবে না।
বেনাপোল বন্দরের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক আব্দুল জলিল জানান, তিন মাসেরও বেশি সময় ধরে বেনাপোল দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রয়েছে। সরকার পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দিলে ব্যবসায়ীরা যাতে বন্দর থেকে দ্রুত পেঁয়াজ খালাস নিতে পারেন সে ব্যবস্থা বন্দর কর্তৃপক্ষ করবেন বলে তিনি জানান।
© ২০২৩ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | কর্পোরেট সংবাদ সম্পাদক - মোঃ মিজানুর রহমান । উপদেষ্টা সম্পাদক- জেসমিন আক্তার, এফসিএস ই-মেইলঃ corporatesangbad@gmail.com । ফোনঃ ০২২২-৩৩৫৪১২৫ । মোবাইলঃ ০১৭১১০৭৬৮১৫ অফিসঃ ৫৫/বি, নোয়াখালী টাওয়ার, ১১ তলা, সুইট ১১-এফ, পুরানা পল্টন, ঢাকা ১০০০ |
সীমান্তে মজুত পেঁয়াজ: আমদানির খবরে নড়েচড়ে বসেছে দুই দেশের ব্যবসায়ীরা https://corporatesangbad.com/29882/ |