দুবাই ফেরত জিতু মিয়া আয়কর আইনে একজন বাড়ীওয়ালা

Posted on June 1, 2020

এ.কে.এম শফিকুল ইসলাম: দুবাই ফেরত জিতু মিয়া ২৫ বছর দুবাইতে ছিলেন, ঢাকা শহরের মিরপুরে ৫তলা বাড়ী তৈরী করেছেন, রাজস্ব অফিসের রফিক স্যারের মাধমে আজ ৩ বৎসর যাবৎ উনি আয়কর দিয়ে আসছেন, এখন বলার সময় আসছে যে, রফিক স্যার রাজস্ব অফিসের কোন কমকর্তা না, রাজস্ব অফিসের অন্য একটা সার্কেল অফিস এর পিয়ন পদে চাকরি করে, চাকরি করার পাশাপাশি বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এভাবে, এই রকমের জিতু মিয়াকে খুঁজে বের করে, আয়ও ভাল্ই করে, একটা বাড়ীও করেছে।

একদিন জিতু মিয়া বাড়ীর সামনে বসে আছেন, এমন সময় এক ডাক পিয়ন এসে জিতু মিয়া হাতে একটা চিঠি ধরিয়ে দেন এবং এক জায়গায় স্বাক্ষরও নিয়ে চলে যান অর্থাৎ রেজিষ্টার চিঠি তাও আবার রাজস্ব অফিস থেকে। চিঠিটা আসলে একটা নোটিশ, আয়কর আদায়ের নোটিশ শুধু জিতু মিয়া বুঝতে পারলো যে, আগামী এত তারিখ অর্থাৎ যে তারিখের কথা উল্লেখ করা হয়েছে সে তারিখটাও পার হয়ে গেছে আর টাকা পরিমান দেখে তো মাথায় হাত। জিতু মিয়া রফিকের দেওয়া ফোন নাম্বারের বার বার ফোন দিচ্ছেন কিন্তু ফোন আর রিছিভ হচ্ছে না, এতে জিতু মিয়ার টেনশন আরও বেড়ে তিনগুন হলো অবশেষে; একদিন পর ফোনটা রিছিভ হলো, যা বললো তাহলো রফিক বদলি হয়ে ঢাকার বাহিরে গেছে তার পক্ষে কিছু করার না্ই। আর জিতু মিয়ার বুঝতে আর বাকী থাকলো না, তিনি মহাচিন্তায় পড়ে গেলেন। হঠাৎ করে তাঁর মনে পড়লো পাশের বাড়ীওয়ালা জনাব হাসান সাহেব উনি একজন সাবেক সরকারী কর্মকর্তা যে কথা সেই কাজ, জিতু মিয়া তখনই হাসান সাহেবের কাছে গেলেন। জিতু মিয়াকে দেখেই হাসান সাহেব বলে উঠলেন আপনাকে চিন্তিত দেখাচ্ছে, তারপর জিতু মিয়া সব কথা খুলে বললেন, সব শুনে জনাব হাসান সাহেব জিতু মিয়াকে উনার নিজের আয়কর আইনজীবির ঠিকানা দিয়ে বললেন, আপনি আগামি কালই যাবেন, আর আমার কথা বলবেন, আপনাকে ভাল উপদেশ দিবেন।

জনাব হাসান সাহেবের কথা মত, জিতু মিয়া পন্টনের অফিসে হাজির হলেন, আয়কর আইনজীবি মোঃ বাতেন আলী, এ্ পেশায় বিশাল অভিজ্ঞতা আছে, শুনেই জিতু মিয়ার ব্যাপার বুঝতে আর বাকি থাকলো না তা্ই তিনি জিতু মিয়ার ফোন নাম্বার নিয়ে রাখলেন। বাতেন সাহেব সার্কেল অফিসে গিয়ে যা দেখলেন, তা হলো শুধু প্রথম বছর রির্টান দেওয়া হয়েছে আর বেশ কয়েক বার নোটিশ দেওয়া হয়েছে, কেহ শুনানি দিতে আসে নাই আর অফিস দু্ই বছর অপেক্ষা করার পর এক তরফা ভাবে বাড়ী এসেসম্যান্ট করেছে তাতে বাড়ীর মুল্য ধরেছেন এক কোটি ২৫ লক্ষ টাকা, এই টাকার আয়ের কোন উৎস না থাকায় সর্ম্পূন টাকা আয় হিসাবে ধরেছেন আর বাড়ী ভাড়ার আয়তো আছেই, জরিমানা নিয়ে মোট প্রায় ৩০ লক্ষ টাকা দাবী করেছেন।

যদিও এ্ই বাড়ীটা তৈরী করার পুরা টাকা এসেছে রেমিট্যান্স আয় থেকে। আমরা জানি যে, বাংলাদেশের কোন নাগরিক কর্তৃক বাংলাদেশের বেইরে উপার্জিত বৈদেশিক মুদ্রা আইনানুগ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে বাংলাদেশে আনয়ন করলে, উক্ত বাংলাদেশী নাগরিকের বিদেশে উপার্জিত আয়কে সর্ম্পূন কর অব্যাহতি সুবিধা প্রদান করা হয়েছে। কিন্তু জিতু মিয়া ব্যাংকের মাধ্যমে তো আনে নাই, আবার যখন আসছে তখন তো এয়ারপোর্টেও কোন প্রকার ডিক্লারেশন দিয়েও আনে নাই। জিতু মিয়াতো টাকা নিয়ে আসছে বিগত ২৫ বছর ধরে আস্তে আস্তে, কোন প্রকার আইনানুগ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে নাই, আসলে বাংলাদেশের আইনের জিতু মিয়ার রক্ষার কোন উপায় নাই। এত কিছু শোনার পর জিতু মিয়া চিন্তা করতেছেন যে কেন-বা তিনি বিদেশে গিয়েছেনে আর কেন-বা তিনি বাড়ী করতে গিয়েছেন সবকিছু উনার কাছে অর্থহীন মনে হচ্ছে।

বাতেন সাহেব যেহেতু একজন অভিজ্ঞ আয়কর আইনজীবি তা্ই তিনি আপিল করে এবং অফিসের সাথে সমঝোতা করে একটা উপায় বের করবেন, তবে ভাল টাকা খরচ করতে হবে, কিন্তু যদি প্রথমেই বাতেন সাহেবের কাছে আসতেন অভিজ্ঞতার কাজে লাগিয়ে রির্টান ফাইল সাবমিট করতেন। এখানে রেমিট্যান্সের আয় আনার আইন আর রফিক স্যার দু্ই’টাই জিতু মিয়ার জন্য ক্ষতির কারন হয়েছে।

আমার দু্ই পর্বে লেখা যদি কোন বাড়ীওলারা ভাল করে পড়েন, তাহলে কিছুটা হলেও উপকৃত হবেন বলে আমার বিশ্বাস আর যদি কেহ সামান্য পরিমানও উপকৃত হন তাহলে আমার লেখার স্বার্থকতা খুঁজে পাব এবং পরবর্তী কোন লেখা নিয়ে হাজির হওয়া উৎসাহ পাব। লেখার মধ্যে ভূল দেখা দিলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। কাহাকেও কোন কাজ দিতে হলে ভাল ভাবে বুঝে শুনে অভিজ্ঞ লোকের কাছে দিবেন। আমি মনে করি যে Lawful cost is less than unlawful cost আর সময়ে কাজ সময়েই করা উচিত।

লেখকঃ- এ.কে.এম শফিকুল ইসলাম আইটিপি কন্সালটেন্ট, শফিক কন্সালটেনসী ফার্মস
এবিসি বাংলাদেশ লিমিটেড