শার্শায় ভারতীয় কেমিক্যাল দিয়ে আম পাকানোর মহোৎসব

Posted on May 20, 2023

বেনাপোল প্রতিনিধি : যশোরের শার্শা উপজেলার বেলতলা আম বাজার। যশোরের দক্ষিণের শার্শা উপজেলার ও সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার শেষ সীমান্ত বাগআঁচড়ার বেলতলা আমের সর্ববৃহৎ বাজার। প্রতি বছরের ন্যায় চলতি মৌসুমে আমের ব্যাপক বেচাকেনা হলেও প্রতিটা আমের গোডাউনে ভারতীয় ট্যাগপন নামের একটি রাসায়নিক কেমিক্যালদিয়ে আম পাকানোর উৎসব চলছে।

কৃত্রিম উপায়ে আমের গায়ে পাকা রং তৈরি করা হচ্ছে। আর এসব রাসায়নিক কেমিক্যাল দিয়ে পাকানো আম খেয়ে স্বাস্থ্যের মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে সাধারণ ভোক্তারা।

জানা যায়, শার্শা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আম সংরক্ষণ ও বাজারজাত করণের দিন ধার্য করা হয় বিভিন্ন নির্দিস্ট তারিখে। কোন প্রকার কার্বাইড ও রাসায়নিক কেমিক্যাল স্প্রে দিয়ে আম পাকানো যাবে না, এই মর্মে একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়।

কিন্তু এক শ্রেণীর অসাধু আম ব্যবসায়ী বেশি লাভের আশায় নির্দেশনা অমান্য করে কৃত্রিম উপায়ে আম পাকিয়ে বাজারজাত করছে। এদের মধ্যে জিনারুল বেপারী, জালাল বেপারী, কিরণ বেপারীসহ অনেক ব্যাপারী রাসায়নিক কেমিক্যাল স্প্রে দিয়ে আম পাকাচ্ছে। বিকেলে স্প্রে করলেই পরের দিন সকাল হওয়ার সাথে সাথে সেসব আম গায়ে রং দ্রুত পাল্টিয়ে পাকা আমে পরিণত হচ্ছে। এতে করে আমের প্রকৃত স্বাদ এবং মান নষ্ট হচ্ছে, একই সাথে ভোক্তারা ব্যাপক ভাবে প্রতারণার শিকার হচ্ছে। কেমিক্যাল স্প্রে দিয়ে পাকানো আম খেয়ে প্রকৃত আমের স্বাদ ভুলে গেছেন তারা।

উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে, যশোর তথা দক্ষিণাঞ্চলের বাগআঁচড়া বেলতলা বাজারে বিক্রিয়কৃত আমের সুনাম রয়েছে দেশ এবং বিদেশে। কিন্তু কেমিক্যাল দিয়ে আম পাকানোর মহোৎসবের কারণে সেই সুনাম আজ নষ্ট হতে চলেছে।বিদেশে আম রপ্তানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকার এ খাত থেকে প্রতিবছর অনেক টাকা রাজস্ব আয় করে থাকে, এতে অর্থনৈতিক ভাবে দেশ লাভবান হয়। এবছর বিষমুক্ত আম সরবরাহ না করা গেলে বিদেশে রপ্তানির ক্ষেত্রে কিছুটা অনিশ্চিতার মুখে পড়তে পারে।
এসব অনিয়মের বিষয়ে আম বেপারী জিনারুলের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, আমারা তো স্প্রে করার জন্য প্রশাসনের টাকা দিয়েছি।

আর বেপারী জালাল উদ্দিন জানান, সব ঘরেই তো স্প্রে দিয়ে আম পাকাচ্ছে, সবাই যে ভাবে পাকাচ্ছে আমিও সেই ভাবে আম পাকাচ্ছি।

শার্শা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের (আরএমও) লক্ষিনদার বলেন, আম পাকানোর জন্য সরকার নির্ধারিত স্প্রে ছাড়া অন্যযে সব কেমিক্যাল দিয়ে আম পাকানো হবে তা অবশ্যই মানব দেহের জন্য চরম ঝুঁকিপূর্ণ।

শার্শা উপজেলা সেনেটারী ইন্সপেক্টর শেফালী খাতুন বলেন, আম কেনাবেচা শুরু হয়েছে আমি এখনো জানিনা। তবে ভোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে এমন কোন বিষয় সামনে আসলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

শার্শা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রতাপ মন্ডল জানান, আমরা সার্বিক বিষয়ে বাজার মনিটরিং করছি। অসাধু ব্যবসায়ীরা যদি আম কেনা বেচা বা বিষাক্ত কেমিক্যাল দিয়ে আম পাকানোর চেষ্টা করে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিবো।

এ বিষয়ে শার্শা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) নারায়ন চন্দ্র পাল জানান, প্রতি বছরের ন্যায় এবারো আম বাজারে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিভিন্ন অনিয়ম তদারকি করছে। কোন রকম বাজারে চাঁদাবাজদের প্রশ্রয় দেওয়া হবে না। পাশাপাশি কোন অসাধু ব্যবসায়ী যদি আমে বিষাক্ত কেমিক্যাল স্প্রে করে তার বিরুদ্ধে আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। #