ভ্যাট আইন-২০১২; ভাষার বিন্যাসেও বিনাশ বাস্তবায়ন !

Posted on May 22, 2020

মোঃ আলীমুজ্জামান : আমার নিজের একটা প্রবাহমান ছোট নদী ছিল। ভাল দাম পেয়ে সেটা বিক্রি করে, খুব অল্প দামে দুইটা পাহাড় কিনলাম। সেই পাহাড়টা ভালবাসত একটা মেঘকে। মেঘ ভালবেসে পাহাড়কে বলেছিল একদিন বৃষ্টি হয়ে তোমাকে ভিজিয়ে দিব, হঠাৎ কোথা হতে বাতাস এসে মেঘকে উড়িয়ে নিয়ে গেল পাহাড় থেকে বহুদূরে।গল্পটা এখানে বন্ধ রেখে যা লেখার কথা দিয়েছিলাম সেটা শুরু করি। যাহোক জুলিয়াস সিজার (এটি) এর বিনাশ নিয়ে লেখার কথা।

গত লেখায় বলেছিলাম, আইনে বলা আছে আবেদনের ১৫ দিনের মধ্যে কমিশনার মহোদয় ফেরত দিবেন কথাটা লেখার আগে একবারের জন্য কি চিন্তা করা উচিত ছিল না কিভাবে সেটা ফেরত দেয়া হবে সে কথাও লিখতে হবে। আসলে উনাদের অভ্যাস শুধু ব্যবসায়ীর কাছ থেকে টাকা নেওয়ার, ফেরত দেওয়ার অভ্যাস না থাকায় ফেরতের নীতিমালার কথা ভূলে গেলেন।

একবার কিছু অলস লোক রাস্তার মাঝখানে বসেছিলেন। এমন সময় ঘোষণা হল রাজার হাতীবহর সেই রাস্তা দিয়ে যাবে। সবাই উনাদের রাস্তা থেকে সড়ে যেতে বললেন। তখন অলস লোকগুলি বললেন ভাই আমরা যাব কিভাবে? আমরা বুঝতে পারছিনা কার পা কোনটা। যার যেটা পা সেটা না মিলাতে পারলে যাব কিভাবে? একথা শুনে রাজার সেপাহীরা বিশাল একটা বাশদিয়ে মারা শুরু করলেন তখন আর পা মিলানো দরকার পড়লনা যে যার জীবন বাচাতে দোড় শুরু করল।

নতুন ভ্যাট আইনে বলা আছে আমদানীর সময় আদায় করা এটি যে সকল প্রতিষ্টানের উৎপাদন ও ব্যবসায় পর্যায়ে বিক্রয়ের উপর ভ্যাট প্রদান করতে হবে সকল অবস্থায় এটা বিক্রয়ের উপর প্রদত্ত ভ্যাট এর সাথে সমন্বয় করা যাবে। জুলিয়াস সিজারের হালকা জ্বর শুরু হল যখন ব্যবসায়ীরা বললেন ক্যাপিটাল মেশিনারিজ আমদানীতে এটা প্রত্যাহার না করলে বিনিয়োগ বন্ধ হয়ে যাবে। বিদেশ ভ্রমনের সংযোগ থাকার কারণে তাকে ক্যাপিটাল মেশিনারিজ থেকে করোনা মহামারীর আশংকায় প্রত্যাহার করা হল। এক মাস বয়স না হতে ই জ্বরের পরিমান বাড়ল সাথে হালকা গলা ব্যাথা যখন বিভিন্ন কমিশনারেট এর কমিশনার গণ বুঝতে পারলেন এটি আদায়ের সমস্ত টাকা কাষ্টমস হাউজের কোড এ জমা হচ্ছে কিন্ত ব্যবসায়ীরা সেটা সমন্বয় করছেন স্ব স্ব কমিশনারেটে বিক্রয়ের উপর প্রদত্ত ভ্যাটের সাথে যা পূর্বের আইনে ক্যাশ ভ্যাট হিসাবে ট্রেজারীর মাধ্যমে জমা হত এবং সেটা তাদের ভ্যাট আদায়ের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে প্রকৃত আদায় হিসাবে সফলতা বা ভ্যাট আদায়ের লক্ষ্য মাত্রার অর্জন দেখাতেন।

এবার উনারা সরকারী পাতলা কাগজ খাওয়ার ভয়ে উপরের গল্পের মত পা মিলানো ছাড়াই দোড় শুরু করলেন এনবিআর এর দিকে কারণ জুলিয়াস সিজারকে (এটি) জন্ম থেকে তাদের কোডে না আনতে পারলে ভ্যাট আদয়ের লক্ষমাত্রা অর্জনে করোনা মহামারী দেখা দিবে। অনেক সভা সেমিনার করে সিন্ধান্ত হল, করোনা লক্ষন বেশী হওয়ায় জুলিয়াস সিজারকে হোম কোয়ারেন্টাইনে পাঠানোর অর্থাৎ কাষ্টমস হাউজে আদায় করা হলে যে প্রতিষ্ঠান যে কমিশনারের অধীনে সে কোডে জমা হতে হবে শুরু থেকে। বহু পরীক্ষা করে সামান্য সিন্ধান্ত পেতে ৩ মাস ব্যস্ত থাকলেন সকল কমিশনার মহোদয়গণ। এতে করে ফিল্ড লেভেলে ভ্যাট আদায়ের পরিস্থিতি অনুমান করতে থাকেন প্রকৃত অবস্থার সাথে মিলে কিনা।

জুলিয়াস সিজারের (এটি) বিনা সুদে সরকারী কোষাগার ভর্তি হওয়ার আশায় সরকারের বিভিন্ন বন্ড/সার্টিফিকেট বিক্রির নীতিমালার যে পরিবর্তন আনা হলেছিল সেটার ফলাফল বাজেটে ব্যাংকিং সেক্টর থেকে যে লোন সারা বছরে নেওয়ার কথা সেটা ৬ মাস না যেতে ১২ মাসের টাকা নেওয়া শেষ। ফলাফল উহানে করোনা কালীণ সময়ে আমাদের অর্থনীতির শরীরে হালকা জ্বর শুরু। এই হালকা জ্বর যাতে কোরনার দিকে না যায় সেটার আগাম সর্তকতায় সরকারী বন্ড/সার্টিফিকেট ক্রয়ে কিছু শীথিলতা আনা হল। এখন আমের সাথে বস্তাফ্রি দেওয়ার মত অবস্থা। আজ সাত/আট বছর আগের একটা সমস্যার সমাধান এই লিখতে গিয়ে পেয়ে গেলাম। সেটা হল আমার ছোট ছেলেটা কেন বড় ছেলেটাকে ছোট ভাই বলে ডাকে। সেই ছোট বেলা থেকে ওকে যতবার বোঝাতে চেষ্টা করেছি ততবার ফেল। আসলে অভ্যাসটা সে আমার কাছ থেকে পেয়েছে। এই দেখুন না, আমি সব সময় শেষেরটা দিয়ে শুরু করি। যেমন প্রথম লেখায় হেডিংএর শেষ অংশ থেকে শুরু করি, এই লেখায় বলা গল্পের শেষ অংশের উদাহরণ আগে বলা। আরো প্রমান একটু অপেক্ষা করলে পাবেন।

যে সমস্ত আমদানীকারক ভ্যাট আইনে বলা পদ্ধতি অনুসরন করে কমিশনার বরাবর এটি এর টাকা ফেরতের আবেদন করলে তখন উনারা বুঝলেন ফেরত প্রদানের নীতিমালা এখনও বাকী রয়েছে। সেই নীতিমালায় তো আর লক্ষমাত্রা অর্জনের বিপরীতে যাবে তাই কমিশনারগণ গল্পে বলা অলস লোকগুলির মত নিজেদের কার পা কোনটা সেটা মিলাতে না পেরে এনবিআর এ আসতে পারলেন না। আর আমদানীকারকগন তো রাজার সিপাহী না যে ঢাল তলোয়ার নিয়ে ভয় দেখাবেন। তাই নিজেরা চেষ্টা শুরু করলেন কিছু একটা করার। আইনে বলা ১৫ দিনে ফেরত হবে সেটার নীতিমালা বহু কাঠ খড় পুরিয়ে ২৭৬ দিনের মাথায় বের করতে পারলেও ততদিনে অনেক দেরী হওয়ার কারনে ও করোনা মহামারী বিবেচনায় জুলিয়াস সিজারকে (এটি) আইসোলুশনে পাঠানো হয়েছে। ব্যবসায়ীরা জীবন মহামূল্যবান ভেবে সেটা আর চাইতে পারছেন না। আইন এ লেখা ১৫ দিন সেটা আজ পর্যন্ত হল ৩১৫ দিন। আরো কত দিন লাগবে ফেরত পেতে সেটা একমাত্র আল্লাহ্ জানেন।

নতুন ভ্যাট আইনের এক বোনাস নিয়ে দুইটা লেখা, আপনারা জানতে চাইতে পারেন এখনও আসল বেতন, বাড়ীভাড়া, মেডিক্যাল ভাতাসহ বাকীগুলি কত দিনে লিখে শেষ করব। বিশ্বাস করুন আমি মাত্র তিনটান দিয়েছিলাম, তাতে নিজেকে রাজাউজির ভেবে লেখার শুরু নিজের প্রবাহমান নদী ছিল, সেটা বিক্রি করে পাহাড় কিনে ফেললাম। পাহাড়ের সাথে মেঘের প্রেম ও হল। কিছু মনে করবেন না ৫ টানেতে মাটি থেকে শূণ্যে উঠা যায়, ৬ টানেতে শূণ্যের উপর ভেষে থাকা যায়, ৭ টানে কি মহিমা। আমার মনে হয় সেই মহিমায় জন্ম আমাদের এই আইনের। তাই আর সমালোচনা নয়। এরপর থেকে লিখব কিভাবে আইনের স্বমহিমায় উপস্থাপন করা যায়।
রাজস্ব ভাবনা নামে একটি সংগঠন তৈরী করতে চেষ্টা করছি যার স্লোগান হল স্বচ্ছ আইনের সহজ প্রয়োগে ব্যবসায়ীরা স্বচ্ছ হবেন। দক্ষ- ভ্যাট আদায় ও প্রদানে দক্ষ জনশক্তি তৈরী করতে হবে। ন্যায্য- আগের দুইটার সমন্বয়ে সরকার ন্যায্য ভ্যাট পাবেন এবং ব্যবসায়ীরা ও ন্যায্য সম্মান পাবেন। এটা নিয়ে অন্য একদিন লিখব। দোয়াকরবেন ও ভাল থাকবেন।

লেখক : লিডকন্সালটেন্ট, ফাউন্ডার দ্যা রিয়েলকন্সালটেশন