বিটিভি-তে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তামাক-বিরোধী প্রচারণা

Posted on May 16, 2020

হাসানুজ্জামান সোহাগ : “আমরা হারাই বাবা, মা, বন্ধু, আপনজন- যাদের শূণ্যতা কোন দিন পূরণ হয়না! অথচ তামাক কোম্পানিগুলো কত সহজেই তাদের ক্রেতাদের শূন্যস্থান পূরণ করে নেয়! গড়ে তোলে সম্পদের পাহাড়- আমাদের কেবলই হাহাকার!” তামাক তথা তামাক কোম্পানী-বিরোধী এমনই এক অভূতপূর্ব বার্তা নিয়ে বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি) ত্রিশ সেকেন্ডের একটি স্পট প্রচারিত হচ্ছে। দেড় মাসব্যাপী চলা এই প্রচারণার মূল লক্ষ্য হলো জনসাধারণের মধ্যে তামাক ব্যবহার নিরুৎসাহিত করা। এই স্পট নির্মাণে কারিগরী সহায়তা দিয়েছে আন্তর্জাতিক গণস্বাস্থ্য উন্নয়নসংস্থা, ভাইটাল স্ট্র্যাটেজিস।

বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে তামাকের অতিরিক্ত ঝুঁকি মোকাবেলায় প্রতিবেশী ভারত’সহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ যেখানে তামাকপণ্য প্রস্তুত, বিপনন ও ব্রিক্রয় নিষিদ্ধ বা এর ওপর অতিরিক্ত সারচার্জ আরোপ করছে, সেখানে বাংলাদেশে এটিকে নিত্যপণ্য ঘোষণা দিয়ে তামাক কারখানা ও বিপনন চালু রেখে অবাধ ব্যবহারের পথ সুগম করা হয়েছে। এরকম একটি সময়ে সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এই সাহসী প্রচারণা সময়োচিত এবং ব্যাপক প্রশংসার দাবী রাখে। তামাক নিয়ন্ত্রণের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে গণমাধ্যমে স্পট প্রচারিত হলেও তামাক-কোম্পানি বিরোধী এমন স্পট এই প্রথম দেখা গেল। উল্লেখ্য যে, তামাক কোম্পানিগুলো তাদের বিভিন্ন অপকর্ম ও কুটকৌশলের জন্য সারা বিশ্বেই ব্যাপক ভাবে সমালোচিত। বাংলাদেশের তামাক কোম্পানি গুলোও ভ্যাট ও কর ফাঁকি দেয়া, অবৈধ বিজ্ঞাপন, শিশু শ্রমের ব্যবহার, আইন লঙ্ঘন পরিবেশ ধ্বংস করাসহ বহু অভিযোগে অভিযুক্ত।

আগামী ৩১ মে, বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস ২০২০ পালন উপলক্ষে বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের আওতাভুক্ত জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেল এই স্পটটির প্রচার শুরু করেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ঘোষিত এবারের বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবসের প্রতিপাদ্য হলো তামাক কোম্পানির কুটকৌশল থেকে যুব সমাজকে সুরক্ষা দেয়া এবং তামাক ও নিকোটিন ব্যবহার থেকে বিরত রাখা। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক তামাকজাত দ্রব্যের ওপর আরোপিত স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ তহবিলের বিপরীতে প্রদত্ত রাজস্ব তহবিলের আওতায় গত ০১ মে থেকে বিটিভি-তে শুরু হওয়া এই প্রচারণাটি আগামী ১৪ জুন পর্যন্ত চলবে। এ তহবিলের আওতায় ইতোমধ্যে আরো ৩টি স্পট প্রচারিত হয়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে মধ্য জানুয়ারি থেকে শুরু হয়ে পুরো ফেব্রুয়ারি মাসব্যাপী ধোঁয়া বিহীন তামাক বিষয়ক স্পট, মার্চ মাসে তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন, প্রচার-প্রচারণা ও স্পন্সর এবং অপ্রাপ্ত বয়স্কদের কাছে তামাকজাত দ্রব্য বিক্রয়ের শাস্তি বিষয়ক স্পট এবং এপ্রিলে পাবলিক প্লেসে ধূমপান নিরোধ বিষয়ক স্পট।

আর্ন্তজাতিক অলাভজনক স্বাস্থ্য উন্নয়ন সংস্থা ভাইটাল স্ট্র্যাটেজিস ২০১১ সাল থেকে বাংলাদেশ সরকারের সাথে অংশী দারিত্বের ভিত্তিতে গণমাধ্যমে প্রচারণা কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। ২০১৭ সাল থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুকেও স্টপ টোব্যাকো বাংলাদেশ পেইজের মাধ্যমে ব্যাপক প্রচারণা চলছে। এই পেইজের ফলোয়ার সংখ্যা ইতোমধ্যে ৬ লাখ ছাড়িয়ে গেছে এবং এর পোস্ট ও পেইজের বার্তা পৌঁছানোর সংখ্যা ১৮ কোটির বেশী। টেলিভিশনে প্রচারের পাশাপাশি যুবসমাজের মধ্যে প্রচারের জন্য স্পট গুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচার করা হয়।
ভাইটাল স্ট্র্যাটেজিস-এর একক তহবিল, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সাথে যৌথ তহবিল এবং সরকারের একক তহবিল মিলিয়ে এ র্পযন্ত মোট ১৭টি ক্যাম্পেইন করা হয়েছে যার মধ্যে রয়েছে স্পঞ্জ, অ্যাজমা, ধোঁয়া, বিষবাতাস, ইটিং ইউ অ্যালাইভ, বিষধোঁয়া, ফুসফুসক্যান্সার, গলারক্যান্সার, ক্লিনিক্যাল ও অন্যান্য।

লেখক : অ্যসিস্টেন্ট ম্যানেজার, একপ্রেস মিডিয়া