বিএসইসি’র কমিশনে সিএ, সিএমএ ও সিএস প্রফেশনাল নিয়োগ চাই

Posted on May 9, 2020

মো. মিজানুর রহমান, এফসিএস ; ২০১০ সালে পুঁজিবাজারে ধসের পর গঠিত তদন্ত কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী ঢেলে সাজানো হয় বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন বা বিএসইসিকে। এরই ধরাবাহিকতায় ২০১১ সালের ১১ মে বিএসইসি’র চেয়ারম্যান হিসেবে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয় অধ্যাপক এম খায়রুল হোসেনকে, অধ্যাপক হেলাল উদ্দীন নিজামী কমিশনার পদে নিয়োগ পান ২০১১ সালের ৪ মে, ২০১১ সালের ২৯ মে কমিশনার পদে নিয়োগ পান মো. আমজাদ হোসেনে ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইডিএলসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আরিফ খান পরে আরিফ খান স্বেচ্ছায় কমিশন ছেড়ে গেলে অধ্যাপক স্বপন কুমার বালা  আরিফ খানের স্থলে কমিশনার পদে আসেন ২০১৬ সালের ১৯ এপ্রিল এবং সর্বশেষ ২০১৭ সালের ১২ অক্টোবর কমিশনার হিসেবে নিয়োগ পান খোন্দকার কামালুজ্জামান। বিএসইসি’র চেয়ারম্যানসহ কমিশনের সদস্য সংখ্যা ৫ জন যাদের পুঁজিবাজার সম্পর্কে ভালো জ্ঞান, কর্মদক্ষতা, সততা ও প্রফেশনাল হওয়া আবশ্যক ।

মো. আমজাদ হোসেনের চুক্তিভিত্তিক কমিশনার পদের মেয়াদ শেষ হয় ২০১৮ সালে ৩০ এপ্রিল। এরপর থেকেই কমিশনের ওই পদ খালি রয়েছে, কাউকে নিয়োগ দিতে পারেনি সরকার। ১৮ এপ্রিল, ২০২০ অধ্যাপক স্বপন কুমার বালার কমিশনার পদের মেয়াদ শেষ হয়। তিনি আগের কর্মস্থল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগে চলে গেছেন। আরেক কমিশনার অধ্যাপক হেলাল উদ্দীন নিজামী মেয়াদ শেষে ৩ মে, ২০২০ তার আগের কর্মস্থল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিষ্টেমস বিভাগে ফিরে গেছেন। আর বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)-এর চেয়ারম্যান অধ্যাপক এম খায়রুল হোসেনের মেয়াদ শেষ হবে ১৪ মে, ২০২০।

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)-এ, ৪ কমিশনারের পদ থাকলেও তাদের মধ্যে মো. আমজাদ হোসেনের মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০১৮ সালে ৩০ এপ্রিল। এরপর গত ২ বছর ধরে কমিশনের ওই পদ খালি রয়েছে, কাউকে নিয়োগ দিতে পারেনি সরকার।আর অন্য ২ জনের মেয়াদ ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। বিএসইসি’র চেয়ারম্যান হিসেবে অধ্যাপক এম খায়রুল হোসেনের মেয়াদ শেষ হবে ১৪ মে, ২০২০। ফলে কার্যত ৪ জনের মধ্যে এখন মাত্র একজন কমিশনার রয়েছেন বিএসইসিতে। কিন্তু চেয়ারম্যানসহ ৪ জনের মেয়াদ শেষ হলেও এখনো কাউকেই নিয়োগ দেয়নি অর্থ মন্ত্রণালয়। একসঙ্গে ৪ পদ শূন্য হতে যাওয়ার পথে অথচ এখনও মেয়াদোত্তীর্ণ পদগুলোতে সরকার কোন নিয়োগ চুড়ান্ত  করেনি, ফলে বিএসইসির হাল ধরবেন কে বা কারা তা এখনো অস্পষ্ট ?

আর ২০১৭ সালের ১২ অক্টোবর কমিশনার হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন খোন্দকার কামালুজ্জামান। তার মেয়াদ শেষ হবে ২০২১ সালের ১১ অক্টোবর। বর্তমান পরিস্থিতিতে ১৪ মে বর্তমান চেয়ারম্যানের মেয়াদ শেষ হলে বিএসইসিতে থাকবেন শুধু মাত্র একজন কমিশনার। ফলে চলতি সপ্তাহ থেকে কোরাম সংকটে খাকছে বিএসইস‘র বর্তমান কমিশন। এটা  মোটেও  দেশের পুঁজিবাজারের জন্য ইতিবাচক নয়।

বিএসইসি’র মতো এমন একটি গুরুত্বপুর্ণ জায়গায় যদি সরকার সময় মতো পদ পূরণে ব্যার্থ হয় তবে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন চলবে কিভাবে ? আর দেশের পুঁজিবাজার ঠিক হবে কি করে? যদি কেউ আসতে না চায় বা কাউকে খুজে পাওয়া না যায় তাহলে আমার/আপনার মতো অনেক প্রফেশনাল রয়েছেন এখানে কাজ করার জন্য। তাদের ডাকেন, দায়ীত্ব দেন ১০ বছর লাগবেনা ১০ মাসেই সব ঠিক করা সম্ভব হবে। কোন আমলা আর দলবাজ বুদ্ধিজীবীদের দিয়ে প্রফেশনাল সেক্টর ঠিক করা যায় না, আমলারা দেশ চালাতে পারেন কিন্তু পুঁজিবাজার ঠিকমত চালাতে পারেন না, সুতরাং আমলাদের দিয়ে কাজ হবেনা। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বা নির্বাচন কমিশনের কোন সাবেক চেয়ারম্যান বা অন্য কোন সাবেক ড. দিয়েও এই কমিশন ঠিকমত চলবেনা। এখানে দরকার পুঁজিবাজার সম্পর্কে ভালো জ্ঞান সম্পন্ন্ প্রফেশনাল ও সাহসী লোক কারন বিএসইসি’র কাজ অর্থ মন্তীর সাথে সম্পর্কযুক্ত।

কাজেই সরকার প্রধানের কাছে অনুরোধ রাখছি বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে প্রফেশনালদের কাজে লাগানোর জন্য, যারা দায়ীত্ব নেয়ার আগেই পুঁজিবাজার সম্পর্কে সম্যকভাবে বুঝে দায়িত্ব নেবেন। আর এ ক্ষেত্রে সরকার চাইলে প্রফেশনালদের মধ্যে যারা পুঁজিবাজার সম্পর্কে ভালো জানেন এবং বোঝেন তাদের সুযোগ দিয়ে দেখতে পারেন। সম্ভব হলে  বিএসইসি’র কমিশনে সিএ, সিএমএ ও সিএস প্রত্যেক প্রফেশন থেকে অন্তত একজন করে হলেও নিতে পারেন যারা পুঁজিবাজার সম্পর্কে ভালো জানেন, কারন এই তিন প্রফেশনেই বিএসইসি’র কমিশনে কাজ করার মতো যথেষ্ঠ যোগ্য প্রফেশনাল রয়েছে।

আর আমরা যারা পুঁজিবাজার নিয়ে কাজ করছি, কর্পোরেট সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য চেষ্ঠা করছি, চাইলে আমাদেরকেও সুযোগ দিয়ে দেখতে পারেন খারাপ হবেনা বরং আগের চেয়ে ভালোভাবে চলবে। আর শেষকথা হলো মার্কেট বিএসইসি’র কোন কমিশনই ঠিক করতে পারবেনা এর সমাধান একমাত্র পুঁজিবাজারে কর্পোরেট সুশাসন প্রতিষ্ঠা তথা এসডিজি বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা, যখন তা কার্যকর হবে কেবল তখনই মার্কেট স্বাভাবিক হবে।