ধানমন্ডির ৩শ কোটি টাকার সেই বাড়ি সরকারের : আপিল বিভাগ

Posted on May 15, 2023

কর্পোরেট সংবাদ ডেস্ক : সাংবাদিক আবেদ খান ও এস নেহাল আহমেদের দাবি করা ধানমন্ডির ২ নম্বর রোডের ৩০০ কোটি টাকা দামের আলোচিত সেই বাড়িটি সরকারের বলে হাইকোর্টের রায় বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ।

সোমবার (১৫ মে) হাইকোর্টের রায় বহাল রেখে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আপিল বিভাগ এ রায় দেন।

একইসঙ্গে তথ্য গোপন করে এই বাড়ির মালিকানা দাবি করে রিট দায়ের করায় আবেদ খানকে ১০ হাজার টাকা জরিমানার আদেশও বহাল রেখেছেন আদালত।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কাজী মাঈনুল হাসান।

পরে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কাজী মাঈনুল হাসান বলেন, ‘নেহাল আহমেদের লিভ টু আপিল খারিজ করে দিয়েছেন আপিল বিভাগ। ফলে বাড়িটি পরিত্যক্ত সম্পত্তির তালিকা থেকে বাদ দিতে প্রথম কোর্ট অব সেটেলমেন্টের দেওয়া রায় বাতিল করে হাইকোর্টের দেওয়া রায় বহাল রইল। পরিত্যক্ত সম্পত্তি হিসেবে বাড়িটি সরকারের মালিকানায় থাকল। বাড়িসহ ধানমন্ডির ওই জায়গার আয়তন এক বিঘা। পরিত্যক্ত সম্পত্তি হিসেবে বাড়িটি এখন সরকারের দখলে আছে।’

এর আগে, রাজধানী ধানমন্ডির ২ নম্বর রোডের ২৯ নম্বর বাড়িটি সরকারের বলে রায় ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। পরে এই রায়ের বিরুদ্ধে এস নেহাল আহমেদ লিভ টু আপিল করেন। সেই আপিল খারিজ করে সোমবার হাইকোর্টের রায় বহাল রেখে রায় দেন আপিল বিভাগ।

আপিল বিভাগ বলেন, এখানে জালিয়াতি হয়েছে এটা প্রমাণিত। এর পেছনে একটি জালিয়াতি চক্র কাজ করেছে। একটি সাক্ষরের সঙ্গে আরেকটি সাক্ষরের কোনো মিল নেই। এ ছাড়া কোনো প্রশ্নের সদুত্তর দিতে পারেননি আইনজীবীরা।

এর আগে কোর্ট অব সেটেলমেন্টে করা দুই মামলার মূল নথি তলব করেছিলেন আপিল বিভাগ। রাষ্ট্রপক্ষকে এই সংক্রান্ত নথি ১৪ মের মধ্যে দাখিল করতে নির্দেশ দেওয়া হয়। নথি দাখিলের পর শুনানি শেষে আপিল বিভাগ লিভ টু আপিল খারিজ করে দেন।

তার আগে ধানমন্ডি আবাসিক এলাকার ২ নম্বর সড়কের ২৯ নম্বর বাড়িটি (তৎকালীন ১৩৯/এ) পরিত্যক্ত সম্পত্তির তালিকা থেকে বাদ দিতে কোর্ট অব সেটেলমেন্ট যে রায় দিয়েছিলেন, তা বাতিল ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে বাড়িটি পরিত্যক্ত সম্পত্তি হিসেবে তালিকাভুক্তির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে মালিকানা দাবি করে সাংবাদিক আবেদ খানের করা রিট খারিজ করে দেন আদালত।

বাড়ি নিয়ে পৃথক দুটি রিট নিষ্পত্তি করে গত বছরের ২১ নভেম্বর ওই রায় দেওয়া হয়। পরে বাড়ির অপর দাবিদার এস নেহাল আহমেদ হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করেন।

মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, ১৯৭২ সালে বাড়িটির তৎকালীন মালিক ছেড়ে চলে যাওয়ার পর সরকার তা পরিত্যক্ত সম্পত্তি হিসেবে ঘোষণা করে। তবে উত্তরাধিকার হিসেবে মালিকানা দাবি করে আবেদ খানসহ তার পরিবারের ৯ সদস্য ১৯৮৯ সালে কোর্ট অব সেটেলমেন্টে মামলা করেন। ওই মামলায় ১৯৯২ সালে রায় দেন আদালত।

রায়ে বাড়িটি পরিত্যক্ত সম্পত্তি হিসেবে তালিকাভুক্তি সঠিক বলা হয়। এরপর বাড়িটিকে পরিত্যক্ত সম্পত্তির তালিকাভুক্ত করার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে আবেদ খান ২০১৫ সালে হাইকোর্টে রিট করেন। ওই রিটের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৫ সালে রুল জারি করা হয়।

অন্যদিকে এস নেহাল আহমেদ নামের এক ব্যক্তি একই সম্পত্তির মালিকানা দাবি করে কোর্ট অব সেটেলমেন্টে ১৯৯৬ সালে আরেকটি মামলা করেন। ওই মামলায় ১৯৯৭ সালে রায় দেন আদালত। রায়ে বাড়িটি পরিত্যক্ত সম্পত্তির তালিকা থেকে অবমুক্ত করতে এবং নেহাল আহমেদ বাড়ির দখল পেতে পারেন বলে উল্লেখ করা হয়।

পরবর্তী সময়ে কোর্ট অব সেটেলমেন্টের দেওয়া রায়ের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে সরকারের পক্ষে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ২০১৮ সালে রিট করে। ওই রিটের পরিপ্রেক্ষিতে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। পৃথক রুল নিষ্পত্তি করে গত বছরের ২১ নভেম্বর রায় দেওয়া হয়।