বেনাপোল-যশোর মহাসড়কে মৃত প্রায় অর্ধশত গাছ : মৃত্যু আতঙ্কে পথচারী

Posted on May 15, 2023

বেনাপোল প্রতিনিধি : বেনাপোল-যশোর মহাসড়কের দুই পাশে যমদূত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে অর্ধশত মরা গাছ। বর্ষা ও ঝড়ের মৌসুমে শতবর্ষী রেইনট্রিগুলো আধমরা ও শুকিয়ে যাওয়ায় মৃত্যু আতঙ্কে আছে সাধারণ পথচারি মানুষ। গত পাঁচ বছরে গাছের ডালের কারণে সড়ক দুর্ঘটনায় অন্তত ১০ জন প্রাণ হারিয়েছেন। গাছগুলো অপসারণের জন্য ঝিকরগাছা ও শার্শা উপজেলা নির্বাহী অফিসার যথাক্রমে মাহবুবুল ইসলাম ও নারায়ণ চন্দ্র পাল জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান ও সড়ক ও জনপথ বিভাগের প্রধান নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদ বরাবর চিঠি দিলেও উচ্চ আদালতের নিষোধাজ্ঞা থাকায় গাছ কাটা যাচ্ছে না।

জেলা পরিষদ, সড়ক ও জনপথ বিভাগ এবং মামলা জটিলতা নিয়ে গাছ অপসারণের কাজ দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে আছে। অচিরেই এর সমাধান না হলে প্রাণহানির আশঙ্কা করছে শার্শা ও ঝিকরগাছা দুই উপজেলার মানুষ। এরই মধ্যে আতঙ্ক নিয়েই মানুষকে চলাচল করতে হচ্ছে। এরমধ্যে মল্লিকপুর ধেভড়িপাড়া, কীর্ত্তিপুর পালপাড়া, হাজিরালী মহিলা কলেজ মোড়, বালিখোলা, বেনেয়ালী, গদখালী ফুল বাজার, নবীবনগর মোড়, কলাগাছি, নাভারণ কলোনী পাড়া এবং নাভারণ পুরাতন বাজার এলাকায় সড়কের উপরে গাছ হেলে রয়েছে। এসব স্থানে আরও ২০টি মরা গাছের নিচ দিয়ে ঝুঁঁকি নিয়ে মানুষ ও যানবাহন চলাচল করছে। এছাড়া, ঝিকরগাছা বাজারে কপোতাক্ষ নদের উপর সেতুর পশ্চিমপাশে মাঝখানে তিনটি গাছ রেখে সড়ক প্রসস্ত করা হয়েছে। বেনেয়ালী গির্জার সামনে মহাসড়কের দুইপাশে ৫টি গাছ এমনভাবে হেলে রয়েছে যে কোনো বাস-ট্রাক চলার সময়ে সড়কের একপাশ দিয়ে যেতে পারে না। আর বড় কাভার্ডভ্যান ও পরিবহনগুলো সড়কের মাঝখান দিয়ে চলাচল করা ছাড়া উপায় নেই। এখানকার হেলে থাকা গাছগুলোর যানবহনের সাথে ধাক্কা খেয়ে গাছের অর্ধেক ভেঙে পড়েছে। গত তিন বছরে শুধু এখানে সড়ক দুর্ঘটনায় ৭জন মারা গেছেন।

দেখা গেছে, যশোর-বেনাপোল মহাসড়কের ঝিকরগাছা অংশে শতবর্ষী ও নতুন রোপণ করা অন্তত ৩০টি রেইনট্রি মৃতপ্রায়। এর মধ্যে ঝিকরগাছা উপজেলা মোড়ে চারটি, ঝিকরগাছা বাসস্ট্যান্ডে চারটি, পারবাজারে চারটি, ঝিকরগাছা মহিলা কলেজ মোড়ে তিনটি, বেনেয়ালি বালিখোলায় তিনটি, দেশের বৃহৎ ফুলের বাজার গদখালীতে পাঁচটি, নবীবনগরে একটি, চারাতলায় দুটি, কলাগাছিতে দুটি, নাভারণ পুরাতন বাজারে সড়কের পাশে তিনটি গাছ মরে গেছে। এসব মৃত গাছ ছাড়াও ডালপালাবিহীন অন্তত ২০টি মরা শুকনা গাছ দাঁড়িয়ে আছে। ঘূর্ণিঝড় আম্ফানে ঝিকরগাছা মহিলা মোড়ে দুটি, বেনেয়ালি বাজারে তিনটি ও কলোনি বাজারে একটিসহ মোট ছয়টি শতবর্ষী গাছ উপড়ে পড়ে গেছে। এসব গাছ উপড়ে পড়ায় ফল ব্যবসায়ী কলোনি গ্রামের জাহাঙ্গীর হোসেনের পুরো বসতভিটা ভেঙে পড়েছিল। তিনি জানান, মহাসড়ক তৈরির সময় গাছের বড় বড় শিকড় কেটে ফেলার কারণে এসব গাছ পড়ে গেছে। অন্য গাছগুলোও ঝুঁকিতে আছে।

দুই মাস আগে গাছের ডাল ভেঙে পড়ে আহত হন গদখালী ফুল মার্কেটের শ্রমিক পটুয়াপাড়া গ্রামের আল আমিন। এতে তার চারটি দাঁত ভেঙে যায়। এ ছাড়াও মাথায় প্রচন্ড আঘাত পান তিনি। যশোর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নিলেও এখনো পুরোপুরি সুস্থ হয়ে ওঠেননি।

বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির সভাপতি আব্দুর রহিম বলেন, আমাদের ফুলের বাজার গদখালীতে পাঁচটি গাছ মরে গেছে। এখন ঝড়বৃষ্টির সময়, আমরা খুব ভয়ে থাকি। মোঃইসরাফিলনামে এক বাস চালক বলেন, উপরে গাছের ডাল ও নিচে সড়কের মধ্যে ঢুকে পড়েছে গাছের গোড়া। বামপাশ দিয়ে চলার কথা থাকলেও গাছে বডি বেধে যাওয়ায় রং সাইডে ঢুকে পড়া লাগে। তখন যদি সামনের দিক থেকে গাড়ি আসে তাহলে বিপদে পড়তে হয়। তাই খুব ঝুঁঁকি নিয়ে এ মহাসড়কে গাড়ি চালাই।

ঝিকরগাছা সেবা সংগঠনের সভাপতি ও নাগরিক অধিকার আন্দোলন কমিটির আহ্বায়ক মাস্টার আশরাফুজ্জামান বলেন, পরিবেশবাদীরা ২০১৭ সালে গাছ অপসারণের বিপক্ষে উচ্চ আদালতে রিট করলে ছয় মাসের জন্য গাছ না কাটতে নিষোধাজ্ঞা দেওয়া হয়। অথচ আজ পর্যন্ত গাছ অপসারণের কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। মানুষের নিরাপত্তায় গাছগুলো ঝুঁকিপূর্ণ।
শার্শা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, গত বছর আমার নাভারন বাসার সামনে গাছের ডাল ভেঙে একজন নিহত হয়। অনেত দোকানপাট ভেঙে পড়ে।

যশোর জেলা পরিষদ সূত্র জানায়, বেনাপোল-যশোর মহাসড়কের দুই পাশে বিভিন্ন প্রজাতির ১৭৩৭টি গাছ আছে। এসব গাছের মধ্যে শতবর্ষী পুরাতন রেইনট্রির সংখ্যা ৭৪৫টি, নতুন রেইনট্রি ৬৮টি, মেহগনি ৫৮৮টি, বট ১৭টি, শিশু ১৫টি, ঝাউ দুটি, আম পাঁচটি, কাঁঠাল ২৫৭টি, বাবলা ১৩টি, দেবদারু ১৬টি, শিমুল একটি ও সেগুন ১০টি। মহাসড়কের দুই পাশের গাছগুলোর মালিকানা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। বেনাপোল-যশোর মহাসড়কের পুননির্মাণ ও সম্প্রসারণের সময় অনেক গাছের শিকড় কাটা পড়ায় সেগুলো এখন মানুষের মৃত্যুঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

যশোর জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আছাদুজ্জামান জানান, বেনাপোল-যশোর মহাসড়কের প্রাচীন গাছগুলো জেলা পরিষদের মালিকানাধীন। উচ্চ আদালতের নিষোধাজ্ঞা থাকায় গাছ কাটা যাচ্ছে না। যশোর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদ বলেন, জেলা পরিষদ আন্তরিক হলে আমি আদালতে রিটকারীদের সঙ্গে সমঝোতা করে গাছ কাটার ব্যাপার উদ্যোগ নিতে পারি। যশোর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সাইফুজ্জামান পিকুল জানান, গাছ কাটা নিয়ে হাইকোর্টে মামলা চলমান রয়েছে। বিষয়টি সুরাহা হলে আমরা টেন্ডারের মাধ্যমে ঝুঁকিপূর্ণ সব গাছ অপসারণ করবো।