ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাবে সাতক্ষীরা উপকূলে ১-২ ফুট নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি

Posted on May 14, 2023

শহীদুজ্জামান শিমুল, সাতক্ষীরা প্রতিনিধি : ঘূর্নিঝড় মোখার প্রভাবে সাতক্ষীরার উপকুলীয় এলাকার নদ-নদীর স্বাভাবিকের চেয়ে ১-২ ফুট বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ফলে জরাজীর্ণ বেঁড়িবাধ ভাঙন আতংকে রয়েছে উকুলীয় এলাকার কয়েক লাখ মানুষ।

ঘূর্ণিঝড় "মোখা" আঘাত হানার আগে সাতক্ষীরার উপকূলীয় অঞ্চলে চলছে তীব্র তাপদাহ। সেই সাথে শ্যামনগর, আশাশুনিসহ ভাঙন কবলিত দ্বীপ ইউনিয়ন শ্যামনগরের গাবুরায় তীব্র দাবদাহে জনজীবন অতিষ্ট হয়ে পড়েছে।

এদিকে শনিবার (১৩ মে) দুপুরের দিকে সাতক্ষীরা শহরে কিছুটা গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হলেও কিছুক্ষন পরে তা বন্ধ হয়ে যায়। তবে, আকাশ কিছুটা মেঘাচ্ছন্ন ও গুমোট ভাব বিরাজ কছে।

এ ছাড়া উপকুলীয় উপজেলা শ্যামনগর ও আশাশুনির খোলপেটুয়া, কপোতাক্ষ ও চুনা নদীসহ সবগুলো নদ-নদীর পানি স্বাভাবিকের জোয়ারের চেয়ে ১-২ ফুট বৃদ্ধি পেয়েছে। ভাঙন আতংকে রয়েছেন উকূলীয় এলাকার লাখ লাখ মানুষ।

বিশেষ করে শ্যামনগর উপজেলার বিচ্ছিন্ন দ্বীপ ইউনিয়ন গাবুরা এলাকার মানুষ রয়েছেন সবচেয়ে বেশী আতংকে। অত্যান্ত নাজুক অবস্থায় রয়েছে সেখানকার বেড়িবাঁধ। গাবুররা নেবুবুনিয়াসহ অনেক জায়গায় বেড়িবাঁধ তৈরীই হয়নি বহুদিন। সুতরাং বড় ধরনের কোন দূর্যোগ এলে তলিয়ে যাবে গ্রামটি। গাবুররা ‘দৃষ্টিনন্দন’ মিঠা পানি প্রকল্পের পাশে খুবই নিচু একটি বেঁড়ি বাঁধ রয়েছে। সেখানে বেশ কিছুদিন যাবত ভাঙন শুরু হয়েছে। ভাঙ্গন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্বাবধানে ৫ হাজার জিওব্যাগ প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে। এলাকাটি তলিয়ে গেলে দৃষ্টিনন্দন এর মানুষের খাওয়ার জন্য তৈরি মিষ্টি পানির প্রকল্পটিতে লবনাক্ত পানি ঢুকে নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এতে পানি সংকট চরম আকার ধারন করবে।

ভাঙন কবলিত গাবুরা ইউনিয়ন পরিদর্শন শেষে সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড পোল্ডার-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সালাউদ্দিন জানান, ভাঙন রোধের জন্য ২০ হাজার জিওব্যাগ প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে। এ ছাড়া গাবুরায় স্থায়ী বেড়িবাঁধের জন্য একটি মেগা প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। জেলেখালী এলাকা থেকে শুরু হয়েছে এই স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মান কার্যক্রম। ২০২৪ সালের জুন মাস নাগাদ এই প্রকল্পের কাজ শেষ হবে।

সাতক্ষীরা আবহায়ওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জুলফিকার আলী রিপন জানান, ঘূর্ণিঝড় মোখা সাতক্ষীরার উপকুলে আঘাত আনার সম্ভাবনা খুবই কম। মোংলা বন্দর থেকে এটি ৭৮৫ কিলোমিটার দূরে রয়েছে। এটি কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরের আঘাত আনার সম্ভাবনা বেশী। তিনি আরো জানান, সাতক্ষীরা উপকুলে বর্তমানে ৪ সতর্ক সংকেত চলছে। তবে, ঘূণিঝড় "মোখা"র প্রভাবে সাতক্ষীরায় আজ সন্ধ্যা থেকে আগামী ২/১ দিন আকাশ মেঘাচ্ছন্নসহ বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

আতঙ্কিত না হয়ে ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলা পূর্বে প্রস্তুুতি গ্রহন জরুরী। জেলায় ৮৮৭ সাইক্লোন সেন্টার প্রস্তুতি রাখা হয়েছে। এ ছাড়া ৪১৬ মেট্রিক টন চাল, ১০ লক্ষ ৩৭ হাজার ৫০০ নগদ টাকা ও ৫ হাজার সিপিপি সদস্য প্রস্তুত রয়েছে। এ ছাড়া উপকুলীয় এলাকার মানুষকে সচেতন করার লক্ষে ও নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়ার জন্য প্রচার প্রচারনা চালানো হচ্ছে।

সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির জানান, দূর্যোগ মোকাবেলায় ইতিমধ্যে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। প্রতিটি উপজেলায় স্বেচ্ছাসেবক টিমসহ সরকারি কর্মকর্তা ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা মানুষের সচেতনতা বাড়ানোর জন্য মাইকিং শুরু করেছে ।