অর্থ-বাণিজ্য ডেস্ক : বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বস্ত্র খাতের অবদান সবচেয়ে বেশি। তাই প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে চামড়া খাত, টেলিকম খাত, সফটওয়্যার ও আইটি খাতে বিনিয়োগ বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)।
রোববার (৭ মে) রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ‘ট্রান্সফরমিং বাংলাদেশ’স পার্টিসিপেশন ইন ট্রেড অ্যান্ড গ্লোবাল ভ্যালু চেইন’ বা ‘বৈশ্বিক মূল্য সংযোজন ব্যবস্থা ও বাণিজ্যে বাংলাদেশের অংশগ্রহণের রূপান্তর’ শীর্ষক প্রতিবেদন এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
অনুষ্ঠনে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম। বক্তব্য দেন এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর এডিমন গিন্টিং। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এডিবির চিফ ইকোনমিস্ট আলবার্ট এফ পার্ক। বক্তব্য দেন ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের ডিরেক্টর আরিফ সোলায়মান।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে এতদিন ধরে যে উন্নতি হয়েছে, তার পেছনে ছিল দেশের বস্ত্র খাতের রপ্তানি। কিন্তু এই উন্নতি বাধাগ্রস্ত হতে পারে। কারণ, মজুরি বাড়বে। রপ্তানি আদেশ কম আসবে পরিবেশগত কারণে। তাই বাংলাদেশকে এখন ভিন্ন পথে এগোতে হবে। রপ্তানিকে বহুমুখীকরণ করতে হবে। এ ছাড়া দেশে বৈদেশিক বিনিয়োগ টানতে হবে। আগের চেয়ে আরও বেশি প্রযুক্তি নির্ভরতা বাড়াতে হবে।
এতে আরো বলা হয়, চামড়া ও চামড়ার জুতা খাতে বিনিয়োগ বাড়ানো বেশি লাভজনক হবে। এ খাতে বিনিয়োগ করলে দেশে প্রবৃদ্ধি হবে কর্মসংস্থান বাড়বে। যেসব দেশ টেক্সটাইলে ভালো করেছে তারা সহজে চামড়া খাতে ভালো করে। চামড়া ছাড়া টেলিকম খাত, সফটওয়্যার ও আইটি খাতে বিনিয়োগ বাড়ানো যেতে পারে।
ড. শামসুল আলম বলেন, ‘আমরা পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় রফতানির ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছি। এটি শিকার করতে অসুবিধা নেই যে আমাদের শুল্ক অনেক উচ্চ। এটি আলোচনা করে কমাতে হবে। করও কোন কোন ক্ষেত্রে বেশি, সেটিও আলোচনা করতে হবে। আমাদের কর জিডিপি রেশিও কম, বাজেট ঘাটতি ৬ শতাংশ। এটাকে ৫ শতাংশে কমিয়ে আনতে হবে। আমাদের শুধু ফরেন ফান্ড নয়, প্রযুক্তিগত সহায়তাও নিতে হবে।’
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আইএমএফ যেকোনো শর্ত দিলেই, আমরা যে মেনে নেব তা কিন্তু নয়। তারা আমাদের সহযোগী। আমাদের নিজের প্রয়োজনেই কার্যক্রম হাতে নিতে হবে। সুদ হার আপাতত বাড়ানো ঠিক হবে না। আমেরিকা যদিও সুদ হার বড়িয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করেছে। কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ধীর যেতে হবে। সেটি একইভাবে কাজ নাও করতে পারে।’
এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর এডিমন গিন্টিং বলেন, ‘বাংলাদেশের রপ্তানি টু জিডিপি রেশিও ভালো না। আমরা যদি ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড এর মতো দেশের সাথে তুলনা করি বাংলাদেশ পিছিয়ে আছে।’
‘আর এই সমস্যা থেকে উত্তরন করতে হলে বাংলাদেশকে এক পণ্য থেকে বের হয়ে আসতে হবে। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ বিশ্বে মূলত তৈরী পোশাক রপ্তানি করে থাকে। বাংলাদেশকে চেষ্টা করতে হবে যাতে বাংলাদেশ অন্যান্য পণ্য বিশ্বের দরবারে তুলে ধরতে পারে।’, বলেন এডিমন গিন্টিং।
এডিবির প্রধান অর্থনীতিবিদ এলবার্ট এফ পার্ক বলেন, ‘আমরা যে প্রতিবেদন আজকে প্রকাশ করতে যাচ্ছি। সেটা বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আর যে সময়ে প্রকাশ করতে যাচ্ছি সেটাও খুব গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এখন বিশ্ব অর্থনীতির গতি ধারা পরিবর্তিত হচ্ছে। অন্যদিকে বাংলাদেশ সামনে মধ্যম আয়ের দেশ হতে যাচ্ছে। এই দুটি পরিবর্তন বাংলাদেশকে চ্যালেঞ্জ এর মধ্যে ফেলেছে। আমরা মনে করি আজকের এই প্রতিবেদন দেশের নীতি নির্ধারকদের গুরুত্বপূর্ণ কৌশল নিতে সাহায্য করবে।’
এডিবির প্রধান অর্থনীতিবিদ এলবার্ট এফ পার্ক বলেন,‘বাংলাদেশের রপ্তানিতে বস্ত্রখাতের যে প্রধান্য সেটা কমাতে হবে।আমাদের প্রতিবেদন বলছে বাংলাদেশ যে বস্ত্র রপ্তানি করছে ২০১৬ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত। সেটা বিশ্বের মোট চাহিদার শূন্য দশমিক ২ শতাংশ থেকে শূন্য দশমিক ৩ শতাংশ পূরণ করেছে। বাংলাদেশ রপ্তানি বাড়াতে পারে যদি অন্যান্য খাতে ডাইভার্সিফাই করে।’
এডিবির প্রধান অর্থনীতিবিদ এলবার্ট এফ পার্ক বলেন, ‘বাংলাদেশ যখন মধ্যম আয়ের দেশে যাবে তখন অনেক সুবিধা হারিয়ে ফেলবে। তখন বিশ্বের অন্যান্য দেশ থেকে তীব্র প্রতিযোগিতা আসবে সেই প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে বাংলাদেশকে নতুন পণ্য নতুন বাজার খুঁজতে হবে। আমাদের এই প্রতিবেদনে আমরা বলার চেষ্টা করেছি বাংলাদেশের জন্য নতুন বাজার কোনটা হতে পারে।’
© ২০২৩ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | কর্পোরেট সংবাদ সম্পাদক - মোঃ মিজানুর রহমান । উপদেষ্টা সম্পাদক- জেসমিন আক্তার, এফসিএস ই-মেইলঃ corporatesangbad@gmail.com । ফোনঃ ০২২২-৩৩৫৪১২৫ । মোবাইলঃ ০১৭১১০৭৬৮১৫ অফিসঃ ৫৫/বি, নোয়াখালী টাওয়ার, ১১ তলা, সুইট ১১-এফ, পুরানা পল্টন, ঢাকা ১০০০ |
প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে চামড়া ও আইটিতে বিনিয়োগ বাড়ানোর পরামর্শ এডিবির https://corporatesangbad.com/27775/ |