জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের (আইসিজে) মিয়ানমারের বিরুদ্ধে যে অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ দিয়েছেন তাতে বাংলাদেশ ও মানবতার জয় হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন। তিনি বলেন, মানবাধিকার কর্মীদের জন্য এটি একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে। গাম্বিয়া, ওআইসি, রোহিঙ্গা এবং অবশ্যই বাংলাদেশের জন্য এটি বড় বিজয়। বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) নেদারল্যান্ডসের রাজধানী দ্য হেগে আইসিজের আদেশের পর তাৎক্ষণিক এক প্রতিক্রিয়ায় এ মন্তব্য করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে মোমেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরো বলেন, দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর বাংলাদেশ রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে একধাপ এগিয়ে গেল। এ সমস্যা ইতিবাচক সমাধান প্রশ্নে বাংলাদেশ এখন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অনেক দেশকেই পাশে পাবে। তবে আদেশপ্রাপ্তির পর এ বিষয়ে বাংলাদেশকে এখন আরো বেশি তৎপর হতে হবে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে।
মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর মানবাধিকার লঙ্ঘন বিষয়ে জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের প্রতিবেদন বাস্তবায়নে সুপারিশ করবেন জাতিসংঘের মিয়ানমারবিষয়ক বিশেষ দূত অধ্যাপক ইয়াংহি লি। তিনি বলেছেন, মিয়ানমারের নিরাপত্তাকর্মীরা রোহিঙ্গাদের ওপর ধর্ষণ, নির্যাতন ও হত্যাকান্ড চালিয়েছে। এসব মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় এখনো মিয়ানমারে বিচার পাওয়ার পরিবেশ নেই। আর এ কারণেই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে উদ্যোগী হতে হবে। তিনি আরো বলেন, নিরাপত্তা পরিষদে ভেটো ক্ষমতাধর দেশের শীর্ষ নেতৃত্বের উচিত কক্সবাজারে এসে রোহিঙ্গাদের অবস্থা দেখে যাওয়া, প্রকৃত অবস্থা অনুধাবন করা। নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য হিসেবে মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো তাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। তিনি আইসিজের আদেশ দেওয়ার দিনটিকে ঐতিহাসিক একটি ঘটনা উল্লেখ করে বলেন, সিয়েরলিওন, রুয়ান্ডা ও বসনিয়া হার্জেগোভিনায় যেভাবে গণহত্যার বিচার হয়েছে, মিয়ানমারের ক্ষেত্রেও তা হওয়া উচিত।
বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) রোহিঙ্গাদের সুরক্ষায় মিয়ানমারকে জরুরি ভিত্তিতে একগুচ্ছ অন্তর্বর্তীকালীন পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ আদলত। জাতিসংঘের এই সর্বোচ্চ আদালত বলেছেন, মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী বা কোনো পক্ষ এমন কিছু করতে পারবে না, যা গণহত্যা হিসেবে পরিগণিত হতে পারে। মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ এনে গাম্বিয়ার করা এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আইসিজের ১৭ সদস্যের বিচারিক প্যানেল গত বৃহস্পতিবার সর্বসম্মতিক্রমে এই আদেশ দেন। আদালতের চারটি আদেশ হলো, জাতিসংঘ কনভেনশন অনুযায়ী রোহিঙ্গাদের সুরক্ষা দিতে হবে। গণহত্যার প্রমাণ ধ্বংস করা যাবে না। সশস্ত্র বাহিনী আবার কোনো গণহত্যা ঘটাতে পারবে না। চার মাস পরপর মিয়ানমারকে আদালতে প্রতিবেদন দিতে হবে, যত দিন না পর্যন্ত বিচারের চূড়ান্ত রায় প্রকাশিত হয়। পশ্চিম আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়ার অভিযোগ ছিল, দুই বছর আগে রোহিঙ্গাদের গ্রামে গ্রামে সেনাবাহিনীর অভিযানে যে বর্বরতা চালানো হয়েছে, তার মধ্য দিয়ে ১৯৮৪ সালের আন্তর্জাতিক গণহত্যা কনভেনশন বঙ্গ করেছে মিয়ানমার।
এদিকে আদেশ ঘোষণার তিন দিন আগে আদালতকে জানিয়েছে, ২০১৭ সালে রাখাইনে দেশটির সেনাবাহিনীর অপারেশন ক্লিয়ারেন্সের সময় কিছু সৈন্য সেখানে যুদ্ধাপরাধ করলেও গণহত্যার মতো ঘটনা ঘটেনি। তবে আইসিজে ওই বক্তব্যকে প্রতারণামূলক হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
অন্যদিকে মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চি বলেছেন, রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের মতো ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। তবে তিনি গণহত্যার অভিযোগ অস্বীকার করেন। আমরা মনে করি, প্রতিটি ক্রিয়ারই একটি প্রতিক্রিয়া আছে। সেখানকার ঘটনা যদি বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা হয়ে থাকে, তাহলে সাত লাখ মানুষ কেন দেশ থেকে পালিয়ে অন্য দেশে আশ্রয় নেবে। অত্যাচার ও নিপীড়নের মাত্রা এতটাই প্রবল ছিল, সাত লাখ রোহিঙ্গা জীবন বাঁচাতে সবকিছু ত্যাগ করে অন্যত্র আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে। সুতরাং মিয়ানমারকে তার পূর্ব অবস্থান থেকে সরে এসে নতুন পথের সূচনা করতে হবে। যে পথ হবে রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার ব্যবস্থাকে নিশ্চিত করা। তাদের নাগরিক অধিকার ফিরিয়ে দেওয়া এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করার মধ্যেই নিহিত।
© ২০২৩ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | কর্পোরেট সংবাদ সম্পাদক - মোঃ মিজানুর রহমান । উপদেষ্টা সম্পাদক- জেসমিন আক্তার, এফসিএস ই-মেইলঃ corporatesangbad@gmail.com । ফোনঃ ০২২২-৩৩৫৪১২৫ । মোবাইলঃ ০১৭১১০৭৬৮১৫ অফিসঃ ৫৫/বি, নোয়াখালী টাওয়ার, ১১ তলা, সুইট ১১-এফ, পুরানা পল্টন, ঢাকা ১০০০ |
মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আইসিজের আদেশ মানবতার জয় https://corporatesangbad.com/271738/ |