অগ্নিঝুঁকি নিয়ন্ত্রণে সরকারের শক্ত পদক্ষেপ অনিবার্য

Posted on December 14, 2019

বারবার ঘটছে অগ্নিকাণ্ড। আগুনে পুড়ে আর কত লোক মারা যাওয়ার পর আমাদের বোধোদয় হবে! সম্ভবত এ জিজ্ঞাসার কোনো সদুত্তর পাওয়া যাবে না। আতঙ্ক নামের শব্দটিকে পাশবালিশ বানিয়ে ঘুমাতে হচ্ছে এসব মানুষকে। যতবারই আগুনে তছনছ হয়েছে এলাকা, ততবারই ঢাকঢোল পিটিয়ে প্রতিরোধের কথা বলা হয়েছে। শুরুতে তোড়জোড় এতটাই তীব্র থাকে তখন মনে হয়, এবারই বুঝি সমাধান হয়ে গেল। কিন্তু না! সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে সেই শুরুর তীব্রতা কমতে কমতে একেবারে শূন্যের কোঠায় নেমে আসে। সবাই যেন অপেক্ষায় থাকে আরো এক ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের। পূর্ব সতর্কতা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে, কিন্তু পরিকল্পনামাফিক স্থায়ী কোনো সমাধান চোখে পড়ছে না। ২০০৮ সালের পর থেকে সারা দেশে আগুনে পুড়ে মারা গেছে প্রায় এক হাজার ৭০০ জন। এ সময়ে অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে প্রায় এক লাখ ৬৯ হাজারটি। চিত্রটি নিঃসন্দেহে ভয়াবহ।

এমনকি প্রতিবছর অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে এবং গত বছর সবচেয়ে বেশি অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে। এ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের শক্ত পদক্ষেপ অনিবার্য। পাশাপাশি বিভিন্ন ভবন মালিক, কারখানা কর্তৃপক্ষ এবং সর্বোপরি জনসাধারণেরও সচেতনতার প্রয়োজন রয়েছে। এ ব্যাপারে সরকারের নির্দেশনা থাকলেও যারা মানছে না তাদের খুঁজে বের করার দায়িত্বও সরকারের ওপর বর্তায়।

এভাবেই চলছে। সম্ভবত আগামীতেও এর ব্যত্যয় হবে না। কেননা, যে কারণে পুরান ঢাকায় বারবার এই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে, তার মূলোৎপাটন করা হয়নি। এখনো কেমিক্যাল গুদাম ও প্লাস্টিক কারখানা সরিয়ে নেওয়া সম্ভব হয়নি। সরকারের পক্ষ থেকে যে চেষ্টা করা হয়নি, তাও নয়। কিন্তু সে চেষ্টা কোনো কাজে আসেনি। তাই এলাকার আতঙ্ক থেকেই গেছে।

তবে এবারের ঘটনা পুরান ঢাকার নয়। দক্ষিণ কেরানীগঞ্জে। প্লাস্টিক কারখানায়। ঘটেছে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা। এতে একজন নিহত ও ৩৪ জন দগ্ধ হয়েছে। আহতরা এখন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, আহতদের বেশির ভাগের অবস্থা ভালো নয়। পাঁচজনের শরীরের প্রায় শতভাগই দগ্ধ হয়েছে। কারখানায় অগ্নিকাণ্ড এ দেশে কোনো নতুন ঘটনা নয়। অনেকটা ধারাবাহিকতার অংশ হয়েই চলে আসছে। এখানেও সেই একই ঘটনা। তদন্ত হয়। ক্ষেত্রবিশেষে মৃত ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের হাতে কিছু ক্ষতিপূরণ তুলে দেওয়া হয়। কিন্তু সমস্যার শেকড় থেকে যায় মাটির গভীরেই। এখানেও তার প্রতিফলন স্পষ্ট। সূত্রমতে, কী কারণে বা কীভাবে অগ্নিকান্ডের সূত্রপাত, তা এখনো জানা যায়নি। তবে কারখানার শ্রমিকরা অনুমান করে বলছেন, গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয়ে আগুন লাগতে পারে।

হয়তো তদন্ত হবে, রিপোর্টও বেরিয়ে আসবে। কিন্তু তারপর! এই তারপরের কোনো উত্তর নেই। সমস্যার কোনো স্থায়ী সমাধান দিতে পারেনি কেউ। আগামীর কথা এ মুহূর্তে বলাও সম্ভব নয়। তবে একটি তথ্য পাওয়া গেছে, ফায়ার সার্ভিসের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এর আগেও কারখানাটিতে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে।

আরো একটি তথ্য বলছে, কারখানাটির অনুমোদন ছিল না। এখানেই প্রশ্ন, প্রশাসনের নাকের ডগায় বসে এ কারখানা চালু থাকে কী করে? এখানেও কবি নীরব। এ নীরবতার কারণ স্বাধীনতার ৪৭ বছরেও কেউ দিতে পারেনি। তবে এ দেশের সাধারণ মানুষ এ নীরবতার কারণ জানতে চায়। পেতে চায় সমাধান।

চলতি বছরের ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে পুরান ঢাকার চুড়িহাট্টায় আগুন লেগে ৭০ জন নিহত হয়। ২০১৬ সালের ১০ সেপ্টেম্বর টাম্পাকো প্যাকেজিং ফ্যাক্টরিতে আগুনে নিহত হয় ২৪ জন। এদের সবাই সাধারণ শ্রমিক। সম্ভবত এদের মৃত্যু নিয়ে যেন কারো কোনো মাথাব্যথা নেই। বিত্তবানরা এদের গিনিপিগ বলেই বিবেচনা করে থাকেন। সম্ভবত সে কারণেই থামছে না অগ্নিকাণ্ডের এ ধারাবাহিক উপাখ্যান।

আমরা মনে করি, এর একটা বিহিত হওয়া দরকার। প্রতিনিয়ত এভাবেই মানুষ মারা যাবে, এটা কারো কাম্য হতে পারে না। আমরা এ ধরনের মৃত্যুকে অপমৃত্যুর সঙ্গে তুলনা করতে পারি। এ ধরনের অপমৃত্যুর ইতিটানাই যেন হয় সরকারের লক্ষ্য। আর এটুকুই সর্বসাধারণের প্রত্যাশা।