পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে কঠোর পদক্ষেপ নিন

Posted on December 7, 2019

চরম নৈরাজ্য চলছে পেঁয়াজের বাজারে। দাম বাড়তে বাড়তে ২৫০ টাকা ছাড়িয়ে গেছে। ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করার পর থেকেই বাজারের লাগাম ধরে রাখা যাচ্ছে না। ভোক্তারা কেউ দুষছে সরকারকে আবার কেউ ব্যবসায়ীদের। উঠে আসছে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কথাও। কিন্তু এবার পেঁয়াজ নিয়ে ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট যে অস্বাভাবিক অবস্থা সৃষ্টি করেছে, তা সন্দেহাতীতভাবেই উদ্বেগজনক। দেশের বাজারে পেঁয়াজের অব্যাহত মূল্যবৃদ্ধি অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। এতে শুধু নিম্নবিত্ত নয়, সমাজের মধ্যবিত্ত শ্রেণিরও নাভিশ্বাস চরমে উঠেছে। যদিও সরকার এ অবস্থা সামাল দিতে বিভিন্নভাবে পেঁয়াজের আমদানি বাড়িয়ে দিয়েছে।

গত বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) দেশে ৪ হাজার ১৫৯ মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানি করা হয়েছে। এর মধ্যে টেকনাফ হয়ে দেশে এসেছে ১ হাজার ২২৭ মেট্রিক টন পেঁয়াজ এবং চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর হয়ে এসেছে ২ হাজার ৯৩২ মেট্রিক টন পেঁয়াজ। আমদানিকৃত পেঁয়াজের মধ্যে মিয়ানমার থেকে ১ হাজার ২২৭ মেট্রিক টন, চীন থেকে ৩৮৪ মেট্রিক টন, মিসর হতে ৮৪ মেট্রিক টন এবং তুরস্ক থেকে ২ হাজার ৫শ’ মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানি করা হয়েছে।

তবু কেন পেঁয়াজের দাম কমছে না, সর্বত্রই একই প্রশ্ন। অধিকাংশের ধারণা, কৃত্রিম সংকট সৃষ্টিকারী অসাধু ব্যবসায়ীদের কারণে এখনো নিয়ন্ত্রণহীন পেঁয়াজের বাজার। অতি মুনাফালোভী ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট ইচ্ছামতো বাজার নিয়ন্ত্রণ করে অন্যায্যভাবে বিপুল মুনাফা লুটে নিচ্ছে। এই অবস্থা নিয়ন্ত্রণে প্রায় ৩৩২ পেঁয়াজ আমদানিকারকের বিস্তারিত তথ্য-উপাত্ত নিয়ে মাঠে নেমেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আওতাধীন শুল্ক গোয়েন্দা ও অধিদফতর। প্রকৃত কারণ খতিয়ে দেখতে এরই মধ্যে ৪০ আমদানিকারককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করেছিল শুল্ক গোয়েন্দা।

আমদানিকারকদের তলব করা চিঠিতে বলা হয়েছে, বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির উদ্দেশ্যে আমদানি করা পেঁয়াজ অবৈধভাবে মজুদ করা হয়েছে। এছাড়া তাদের বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিংয়েরও অভিযোগও রয়েছে। এ বিষয়ে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, দেশে নিয়মিত পেঁয়াজ আমদানি হচ্ছে। তার পরও বাজারে পেঁয়াজের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির মাধ্যমে যেসব ব্যবসায়ী একটি অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরির চেষ্টা করেছে, মূলত তাদের চিহ্নিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

অন্যদিকে কাস্টমস কর্মকর্তাদের দাবি, চাহিদা অনুযায়ী যথেষ্ট পেঁয়াজ মজুদ ছিল। কোনোভাবেই পেঁয়াজের সংকট হওয়ার কথা নয়। কিন্তু অসাধু ব্যবসায়ীদের গুদামে বিপুল পরিমাণ পেঁয়াজ আটকে থাকায় বাজার অস্থিতিশীল হয়ে পড়ে। অতি মুনাফার লোভে এক শ্রেণির ব্যবসায়ী কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করেন। আবার কয়েকজন আমদানিকারক নিজেরা বিশেষ সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। গুদামে পেঁয়াজ পচে গেলেও তারা বাজারে ছাড়ার উদ্যোগ নেননি। ফলে খুচরা বাজারে পেঁয়াজের কেজি ২৫০ টাকা ছাড়িয়ে যায়।

অভিযোগ রয়েছে সিন্ডিকেট করে বাজারে পণ্যের মূল্য বাড়িয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু এর অবসান হওয়া জরুরি। বাজারের অস্থিরতা দূর করতে হলে অবশ্যই অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট দমন করতে হবে।

আমরা চাই, পেঁয়াজ নিয়ন্ত্রণে সরকার কঠোর পদক্ষেপ নিক। পেঁয়াজকাণ্ডে ছাড় পেয়ে তারা লবণ ও চাল নিয়েও কারসাজি করার অপচেষ্টা চালিয়েছে। তাই এদের শাস্তির আওতায় আনার পাশাপাশি বাজার নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।