সীমান্তের বেতনা নদীতে সেচ দিয়ে ধান চাষ : দরিদ্র কৃষকদের ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা

Posted on April 29, 2023

বেনাপোল প্রতিনিধি : কাগুজে নাম বেত্রাবতী হলেও বেতনা নামে পরিচিত যশোরের সীমান্তবর্তী শার্শা উপজেলার সবচেয়ে বড় নদীটি এখন মৃত। বঙ্গোপসাগরের সাথে সংযুক্ত নদীটি কোন এককালে ছিল পূর্ণ যৌবনা। নদীর বহমানতাকে আটকে বছরের পর বছর মাছ চাষের ফলে তলদেশ শুকিয়ে এখন খাঁ খাঁ করছে। জেলের পরিবর্তে পানি শূণ্য নদীতে নেমেছেন চাষিরা। সেচ দিয়ে নদীতে চাষ করেছেন ধান। যেখানে একদা রূপালী ঢেউ আছড়ে পড়তো সেখানে এখন বাতাসে দুলছে সোনালী ধান। এ ধান নিয়েই স্বপ্ন দেখছেন কৃষকরা। মৃত প্রায় এই নদীর একটি বিরাট অংশ জুড়ে আবাদ হয়েছে বিভিন্ন জাতের বোরো ধান। আবাদকৃত সেই আধা-পাকা সোনালি ধান বর্তমানে বাতাসে দোল খাচ্ছে।

শার্শা উপজেলার সীমানায় বেতনা নদীর একটি বিশাল অংশ জুড়ে আবাদ হয়েছে বিভিন্ন জাতের বোরো ধান। কোথাও আবার যতদূর দু‘চোখ যায় শুধু ধান আর ধান। দেখে বুঝার উপায় নেই যে এটি কোন নদী। এই নদী অংশের শত শত বিঘা জমিতে বর্তমানে বাতাসে দোল খাচ্ছে আধা-পাকা ধান।বেতনা বাংলাদেশ-ভারতের একটি আন্তঃসীমান্ত নদী। এই নদী ঝিনাইদহ, যশোর ও সাতক্ষীরা জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত। নদীটির দৈর্ঘ্য ১৯১ কিলোমিটার, গড় প্রস্থ ৫৫ মিটার এবং নদীটির প্রকৃতি সর্পিলাকার। এই নদীর উৎপত্তি ভৈরব নদের শাখা হিসেবে ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুরে, কিন্তু এই উৎসমুখ অনেক আগেই বিচ্ছিন্ন। মহেশপুরে কতগুলো বিল থেকে পানি নিয়ে এই নদী ভারতে প্রবেশ করেছে। আবার যশোর জেলার শার্শা উপজেলায় পুনরায় বাংলাদেশে প্রবেশ করে নাভারন হয়ে সাতক্ষীরা জেলায় প্রবেশ করেছে।

ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে এই নদীর অপর নাম কোদালিয়া। এই নদী সাতক্ষীরা জেলায় মরিচ্চাপ নদীর সাথে মিলে খোলপেটুয়া নদী নাম ধারণ করেছে। এর পরে নদীটি কালিয়া নদী নামে পরিচিত। কালিয়া নদীর শাখা নদীর নাম দালুয়া নদী। বেতনা নদী সুন্দরবন অংশে অর্পণগাছিয়া নদী নামে পরিচিত। অতঃপর এই একই নদী মালঞ্চ নামে পরিচিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে মিলিত হয়েছে।কয়েক দশক পূর্বে নদীটি ছিল অনন্ত যৌবনা। প্রতিদিন দুইবার করে তার বুকে জোয়ার-ভাটা প্রবাহিত হতো। এ নদীকে কেন্দ্র করে কয়েকটি বড় বড় বাজার স্থাপিত হয়েছে। এ নদীর সাথে খান সংযোগ করে উলশী যদুনাথপুর প্রকল্পের নামে দেশে প্রথম সেচ প্রকল্প চালু হয়। এ নদীর পানি দিয়েই একাধিক সেচ প্রকল্প চালু ছিল। শুষ্ক মৌসুমে এ নদীর পানিতে লবণাক্তার মাত্রা বেড়ে যেতো সে কারণে শংকরপুর এলাকায় জলঅবকাঠামো নির্মাণ করা হয়। ২০ বছর আগেও নদীটিতে ট্রলারসহ ছোট ছোট জলযান চলাচল করতো।

এসব এখন স্মৃতি। যে নদীর পানি সেচ কাজে ব্যবহার হতো সেই নদীর বুকে শুরু হয়েছে সেচ কাজ। বর্তমান বৈশ্বিক মন্দা মোকাবেলা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা আবাদ যোগ্য এক ইঞ্চি জমিও ফেলে না রাখার এমন ঘোষনায় উজ্জীবিত হয়ে হত দরিদ্র কৃষকরা করেছেন ধান চাষ। হতাশা আর দারিদ্র্যের অভিশাপ থেকে কিছুটা মুক্ত হতে এখন এ অঞ্চলের চাষিরা নতুন স্বপ্নের জাল বুনতে শুরু করেছেন। নুন আনতে পান্তা ফুরানোর মত অবস্থায় জীবন যুদ্ধে কাহিল হয়ে পড়া এসব পরিবার গুলো এখন সুযোগের সদ ব্যবহার করে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

কথা হয় নিজামপুর ইউনিয়নের গোড়পাড়া উত্তরপাড়া গ্রামের আসানুর, ডিহির নৈহাটি গ্রামের জিয়া, ডিহির দিপন, লক্ষণপুরের সালতা শেখপাড়ার সামাদ ও আহাদ, শুড়ারঘোপ গাজীপাড়া গ্রামের বাককু, হযরত ও ইসমাইলসহ অনেক চাষির সাথে। তারা বলেন, বেতনা নদী পলি জমে প্রায় ভরাট হয়ে গেছে। অধিকাংশের মাঠে নিজস্ব তেমন আবাদি জমি না থাকায় বছরের বোরো চাষের সময় শুষ্ক থাকায় বাড়ির নিকট বেতনা পরিষ্কার করে ধান চাষ করেছেন। ফলনও খুব ভাল হয়েছে। একাজে কোন পক্ষ হতে তেমন কোন বাধা আসেনি। তাই অধিকাংশ বেতনা নদী জুড়ে দরিদ্র ও ভূমিহীন মানুষ ধান চাষ করেছেন।

এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রতাপ কুমার মন্ডল বলেন, আমরা বিষয়টি নিয়ে উপজেলা প্রশাসন বসেছিলাম। সেখানে বলা হয়েছিল সরকারি নদীতে ধান চাষ করতে দেওয়া হবেনা। আমি বলেছিলাম সরকারি নির্দেশনা আছে যে কোথাও জমি ফেলে রাখা যাবেনা। আমি কৃষি অফিসার হিসেবে ধান চাষ করতে নিরুৎসাহিত করতে পারিনা। আমরা বলছি যদি খনন হয় আর নাব্যতা থাকে তাহলে এমনিতেই কেউ ধান চাষ করতে পারবেনা। আর এটি তো বছরে একবার চাষ করার যোগ্য। অতএব, অনাবাদি পতিত জমিতে চাষ হলে আমরা কৃষি বিভাগ থেকে উৎসাহ দেবো। #