মো. মিজানুর রহমান, এফসিএস : কোম্পানি আইন ১৯৯৪ নির্দেশিত ফাইনান্সিয়াল অডিট এর রেগুলেটরি অথরিটি ‘‘Institute of Chartered Accountants of Bangladesh (ICAB)’’ এবং অডিটর হিসেবে কাজ করছেন ICAB এর তালিকাভুক্ত চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্টস ফার্ম।
একই আইনে নির্দেশিত কস্ট অডিট এর রেগুলেটরি অথরিটি ‘‘Institute of Cost and Management Accountants of Bangladesh (ICMAB)’’ এবং কস্ট অডিটর হিসেবে কাজ করছেন আইসিএমএবি এর তালিকাভুক্ত কস্ট অডিট ফার্ম।
আর ফাইনান্সিয়াল রির্পোটিং অ্যাক্ট, ২০১৫ মোতাবেক “Financial Reporting Council (FRC)” ফাইনান্সিয়াল রির্পোটিং কীভাবে হবে সেটা রেগুলেট করছে এবং কাজ করছেন আইসিএবি ও আইসিএমএবি এর সদস্য ও ফার্মসমূহ।
এছাড়া চার্টার্ড সেক্রেটারিজ অ্যাক্ট, ২০১০ দ্বারা বর্তমান সরকার ‘‘Institute of Chartered Secretaries of Bangladesh (ICSB)’’ প্রতিষ্ঠা করেছে। চার্টার্ড সেক্রেটারিজ পেশার উন্নয়ন, বিকাশ ও নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে আইসিএসবি কাজ করছে। ফলে আইসিএসবি চার্টার্ড সেক্রেটারিজ প্রফেশনের রেগুলেটরি বডি বা অথরিটি। এই প্রফেশনের সদস্য এবং সদস্যভুক্ত ফার্মের কাজের পরিধি চার্টার্ড সেক্রেটারিজ অ্যাক্ট, ২০১০ এর সেকশন ১৯ এর সাব সেকশন ৮ এর (ঘ) -তে পরিষ্কার করা হয়েছে।
সেকশন ৮ এর (ঘ) এ বলা হয়েছে, ‘আইসিএসবি এর সদস্যভুক্ত প্রফেশনের ফার্ম সেক্রেটারিয়াল অডিট বা কমপ্লায়েন্স অডিটর হিসেবে কাজ করবে।’
অন্য কোন পেশার কথা যেহেতু আইনে বলা হয়নি সুতরাং শুধুমাত্র সিএস পেশাদার ফার্মই সেক্রেটারিয়াল বা কমপ্লায়েন্স অডিটর হবার যোগ্য হবেন।
বিএসইসি এর কর্পোরেট গভর্নেন্স কোড ২০১৮ নির্দেশনার আলোকে কমপ্লায়েন্স বা সেক্রেটারিয়াল অডিট এর কাজ করছেন আইসিএবি, আইসিএমএবি ও আইসিএসবি তালিকাভুক্ত পেশাদার অ্যাকাউন্টেন্টস ও চার্টার্ড সেক্রেটারিজ ফার্মসমূহ। অর্থাৎ তিনটি প্রফেশনাল বডির তালিকাভুক্ত ফার্ম দ্বারা সম্পন্ন হচ্ছে কমপ্লায়েন্স বা সেক্রেটারিয়াল অডিটের কাজ।
সুতরাং প্রশ্ন হচ্ছে- এ ক্ষেত্রে কমপ্লায়েন্স বা সেক্রেটারিয়াল অডিটের রেগুলেটরি বডি বা ইনস্টিটিউট কে? আইসিএবি, আইসিএমএবি, এফআরসি নাকি আইসিএসবি। উত্তর আসতে পারে ‘‘Bangladesh Securities and Exchange Commission”| কিন্তু না, বিএসইসি হলো ক্যাপিটাল মার্কেট রেগুলেটর বা অথরিটি। কোন প্রফেশনাল বডিকে বিএসইসি রেগুলেট করে না। ক্যাপিটাল মার্কেট বা পুঁজিবাজার রেগুলেট করাই বিএসইসি’র কাজ। বিএসইসি পুঁজিবাজারকে সঠিকভাবে পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ করার জন্য তাদের প্রয়োজনে যে কোনো প্রফেশনাল ইনস্টিটিউট বা বডির কাছ থেকে সার্পোট নেবে এবং কাদের কাছ থেকে কি ধরনের সার্ভিস নেবে সেটাই শুধু নির্দেশণা দেয়।
কাজটি যারা সম্পন্ন করেন, তারা স্ব স্ব ক্ষেত্রে নিজস্ব রেগুলেটরি বডি বা অথরিটি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত বা পরিচালিত হয়ে থাকে। যেমন- ফাইনান্সিয়াল অডিট কীভাবে করা হবে তার একটি স্ট্যান্ডার্ড আছে, যা আইসিএবি দ্বারা প্রতিষ্ঠিত ও নিয়ন্ত্রিত এবং অডিটের কাজ সিএ ফার্ম এর মাধ্যমে সম্পন্ন ও পরিচালিত হয়। এক্ষেত্রে আইসিএবি হলো ফাইনান্সিয়াল অডিটের জন্য রেগুলেটরি বডি বা অথরিটি।
একইভাবে কস্ট অডিটের একটা স্ট্যান্ডার্ড আছে, যা আইসিএমএবি দ্বারা প্রতিষ্ঠিত ও নিয়ন্ত্রিত এবং অডিটের কাজ সিএমএ ফার্ম দ্বারা সম্পন্ন ও পরিচালিত হয়। ফলে আইসিএমএবি হলো কস্ট অডিটের রেগুলেটরি বডি বা অথরিটি।
আইসিএসবি’র নিজস্ব সেক্রেটারিয়াল স্ট্যান্ডার্ড ও সেক্রেটারিয়াল অডিট স্ট্যান্ডার্ড আছে এবং সিএস এক্ট ২০১০ মোতাবেক সেক্রেটারিয়াল অডিটের কাজ সিএস ফার্ম দ্বারা সম্পন্ন ও পরিচালিত হওয়ার কথা, কিন্তু বাস্তবে তা হচ্ছে না।
তাহলে দেখা যাচ্ছে যে, বিএসইসি নির্দেশিত কমপ্লায়েন্স বা সেক্রেটারিয়াল অডিটের কাজ সিএ, সিএমএ এবং সিএস তালিকাভুক্ত পেশাদার ফার্ম দ্বারা পরিচালিত হলেও এর কোন রেগুলেটরি বডি বা অথরিটি সম্পর্কে বিএসইসি পরিষ্কার করে কিছু বলেনি। বিএসইসি বলছে, তিনটি প্রফেশনাল বডির যে কোনো একটিতে তালিকাভুক্ত থাকলেই সে কমপ্লায়েন্স বা সেক্রেটারিয়াল অডিট করতে পারবে। তাহলে তিনটি প্রফেশনাল বডিই কি কমপ্লায়েন্স বা সেক্রেটারিয়াল অডিটের রেগুলেটরি বডি বা অথরিটি। না-কি কমপ্লায়েন্স বা সেক্রেটারিয়াল অডিটের কোন রেগুলেটরি বডি বা প্রফেশনাল ইনস্টিটিউট বা অথরিটি নেই।
সঠিক উত্তর?
যেহেতু চার্টার্ড সেক্রেটারিজ অ্যাক্ট, ২০১০ দ্বারা প্রতিষ্ঠিত “আইসিএসবি” কমপ্লাইন্স বা সেক্রেটারিয়াল অডিট করার জন্য আইন দ্বারা প্রতিষ্ঠিত বিধিবদ্ধ পেশা ও ইনস্টিটিউট। সেহেতু আইসিএসবি কেন কমপ্লায়েন্স বা সেক্রেটারিয়াল অডিটের রেগুলেটরি বডি বা অথরিটি হবে না? হয় বিএসইসি বিষয়টি পরিষ্কার করবে, না হয় আইসিএসবি নিজে থেকে কমপ্লায়েন্স বা সেক্রেটারিয়াল অডিটের রেগুলেটরি বডি বা ইনস্টিটিউট ঘোষণা করবে। শুধুমাত্র আইসিএসবিই হবে কমপ্লায়েন্স বা সেক্রেটারিয়াল অডিটের রেগুলেটরি বডি বা অথরিটি, যা কোম্পানি আইন, ১৯৯৪ এ সংযোজন বা নতুন কোম্পানি আইনে অর্ন্তভুক্ত করতে হবে বা আনতে হবে।
এ বিষয়ে ভূমিকা রাখতে হবে অর্থ মন্ত্রণালয়, বানিজ্য মন্ত্রণালয়, বিএসইসি এবং আইসিএসবিকে। তিন/চারটি প্রফেশনাল বাডি কথনও একটি প্রফেশনের রেগুলেটর হতে পারে না। প্রতিটি প্রফেশনাল বডির অধ্যাদেশে বা আইনে পরিষ্কার বলা আছে- সংশ্লিষ্ট প্রফেশনের সদস্যরা এবং সদস্যভুক্ত ফার্মসমূহ কি কি করতে পারবে।
যেমন- ডাক্তারি পেশায় কোন সার্জন কি ধরণের অপারেশন করতে পারবে তা বলা আছে, ফলে স্ব স্ব বিভাগের সার্জন দ্বারাই সার্জারির কাজ পরিচালিত হচ্ছে। একইভাবে ইঞ্জিনিয়ার পেশার ক্ষেত্রেও কে কোন সাইডের ইঞ্জিনিয়ার তা বলা আছে। একজনের কাজ আরেকজন করে না। তাহলে কর্পোরেট প্রফেশনে কেন যার যার পেশাগত কাজ পৃথকভাবে না করে সকল কর্পোরেট প্রফেশনাল বডির সদস্য বা সদস্যভূক্ত ফার্ম একই বিষয়ে অন্যের কাজ করবে বা করার সুযোগ পাবে?
যারা এই পেশাগত জটিলতার সুযোগ করে দিচ্ছেন, তাদের কাছে সবিনয় জিজ্ঞাসা- কমপ্লায়েন্স বা সেক্রেটারিয়াল অডিটের আসল রেগুলেটর সিএ, সিএমএ নাকি সিএস প্রফেশন? এ বিষয়টি পরিষ্কার করা প্রয়োজন নয় কি? একইসঙ্গে আইসিএসবি’র পরিচালনা পর্ষদকে বলতে চাই যে, আপনারাও আপনাদের প্রফেশনের ক্ষেত্র এবং কাজের অধিকার অর্জন করতে কমপ্লায়েন্স বা সেক্রেটারিয়াল অডিটের রেগুলেটরি বডি বা ইনস্টিটিউট হিসেবে নিজেদেরকে প্রতিষ্ঠিত করুন। তা না হলে আতুর ঘরে গাইনি ডাক্তারের পরিবর্তে জেনারেল সার্জন ঢুকবে এবং কমপ্লায়েন্স অডিটের অবস্থাও যা হবার তাই হবে।
সর্বোপরি আমরা কর্পোরেট প্রফেশনে একে অন্যের প্রফেশনকে সম্মান জানাই। কাজ করার সুযোগ করে দেই। আমরা সবাই প্রফেশনাল এথিক্সের মধ্যে থাকি। এক্ষেত্রে সরকারের যারা কর্তাব্যক্তি আছেন, যারা বিভিন্ন ভাবে বিভিন্ন প্রফেশনের সেবা নেন তাদেরকেও কার কাছ থেকে কি সেবা নিবেন, সে বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা থাকতে হবে। কারণ ডাক্তারকে দিয়ে যেমন প্রকৌশলীর কাজ হবে না, তেমনি প্রকৌশলীকে দিয়েও ডাক্তারের কাজ হবে না। একইভাবে ফাইনান্সিয়াল অডিটরকে দিয়ে কস্ট অডিটের কাজ এবং কস্ট অডিটরকে দিয়ে ফাইনান্সিয়াল অডিটের কাজ করানোর যেমন সুযোগ নেই। করালেও সেটি যেমন সঠিকভাবে হবে না, ঠিক তেমনি কমপ্লায়েন্স বা সেক্রেটারিয়াল অডিটের কাজও ফাইনান্সিয়াল অডিটর বা কস্ট অডিটর দ্বারা সঠিকভাবে হবে না। যার কাজ তারই করা সমীচীন নয় কি?
ফলে আমাদের কাজ দেয়ার ক্ষেত্রে ও কাজ করার ক্ষেত্রে, পেশাদার হতে হবে। প্রতিটি কর্পোরেট প্রফেশনে কর্পোরেট বডি সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা থাকতে হবে যে, কে কোন কর্পোরেট প্রফেশনকে রেগুলেট করবে। তা না হলে পেশাগত বিড়ম্বনা আরো বাড়বে এবং এক সময় আইসিএসবি সদস্য ফার্মসমূহ “আমি কার খালুরে” অবস্থায় পরিণত হতে পারে। একইভাবে যে উদ্দেশ্যে কমপ্লায়েন্স অডিট করা হয় তাও আতুর ঘরে মারা যেতে পারে, ফলে কাজের কাজ কিছুই হবে না, শুধু শুধু অডিটের নামে প্রতিষ্ঠানের খরচ বাড়ছে।
সবশেষে বলব, বাংলাদেশের কোম্পানি আইন, বিএসইসি, অর্থ ও বানিজ্য মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সকল কর্পোরেট প্রফেশনাল বডির ক্ষেত্রে কমপ্লায়েন্স বা সেক্রেটারিয়াল অডিটের রেগুলেটরি বডি কে- তা পরিষ্কার হওয়া দরকার এবং সেই সাথে কর্পোরেট সেক্টরে সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য কেবল আইসিএসবি’র সদস্য ফার্ম দ্বারাই কমপ্লায়েন্স অডিট সম্পন্ন হওযাটা জরুরী ও সময়ের দাবি মনে করেন সংশ্লিষ্ট অনেকেই।
লেখক: সম্পাদক, কর্পোরেট সংবাদ ডটকম; ফেলো, আইসিএসবি ও কলামিস্ট
© ২০২৩ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | কর্পোরেট সংবাদ সম্পাদক - মোঃ মিজানুর রহমান । উপদেষ্টা সম্পাদক- জেসমিন আক্তার, এফসিএস ই-মেইলঃ corporatesangbad@gmail.com । ফোনঃ ০২২২-৩৩৫৪১২৫ । মোবাইলঃ ০১৭১১০৭৬৮১৫ অফিসঃ ৫৫/বি, নোয়াখালী টাওয়ার, ১১ তলা, সুইট ১১-এফ, পুরানা পল্টন, ঢাকা ১০০০ |
সবিনয় জিজ্ঞাসা- কমপ্লাইন্স অডিটের রেগুলেটরি অথরিটি কে? https://corporatesangbad.com/258379/ |