বাংলাদেশে যোগাযোগ ব্যবস্থাসমূহের মধ্যে রেল পথ হলো যোগাযোগ ও পরিবহনের দ্বিতীয় প্রধান মাধ্যম। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ ও মালপত্র রেলের মাধ্যমে স্থানান্তরিত হয়ে থাকে। অন্যান্য পরিবহন ব্যবস্থার মধ্যে রেলকে তুলনামূলকভাবে নিরাপদ বাহন হিসেবে গণ্য করে যাত্রীরা। এর অন্যতম কারণ রেল ভ্রমণ আরামদায়ক এবং যানজট না থাকাতে রেল পৌঁছায়ও দ্রুততম সময়ে। তাছাড়া রেল ভ্রমণ তুলনামূলকভাবে নিরাপদ। বাংলাদেশের রেল পরিবহন ব্যবস্থা মূলত এসেছে ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ পরিচালিত ‘আসাম-বাংলা’ রেল পরিবহন থেকে। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা অর্জনের পর থেকে রেল পরিবহন ক্রমশ বাড়তে থাকে।
কিন্তু বর্তমান সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর রেলের উন্নয়নে ব্যাপক উদ্যোগ গ্রহণ করেন। রেলপথ সেবাকে উন্নত ও গতিশীল করতে দেশে বিদ্যুৎচালিত ও দ্রুতগতির ট্রেন চালুর পরিকল্পনা করছে বতমান সরকার। বাংলাদেশের পরিবহন ব্যবস্থা দেশের অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।
কিন্তু রেলের সেই ভাবমূর্তি আর থাকছে না। কিছুদিন পর পর রেল দুর্ঘটনা ঘটেই চলেছে। যদিও গত এক দশকে রেল দুর্ঘটনা এক তৃতীয়াংশে নামিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে, কিন্তু তারপরও দুর্ঘটনা থামানো যাচ্ছে না।
গত মঙ্গলবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় আন্তনগর তূর্ণা নিশীথা ও আন্তনগর উদয়ন এক্সপ্রেস দুই ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষে ১৬ যাত্রীর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন অন্তত শতাধিক যাত্রী।
জানা যায়, তূর্ণা নিশীথার চালক প্রায় ৭০০ গজ দূর থেকে সিগন্যাল অমান্য করে দ্রুতগতিতে রেলটি চালিয়ে আসছিলেন। যখন বিপরীত দিক থেকে উদয়ন এক্সপ্রেস তার দৃষ্টিসীমায় আসে, তখন তার আধুনিক এয়ার ব্রেক করার সুযোগ ছিল। কিন্তু চালক তা না করে দ্রুতগতিতে এসে উদয়ন এক্সেপ্রেসকে ধাক্কা দেয়। তূর্ণা নিশীথা উদয়ন এক্সপ্রেসের মাঝ বরাবর ঢুকে যায়। হতাহতের ঘটনা আরো বাড়তে পারত। কিন্তু উদয়ন এক্সপ্রেস ৬টি বগি মন্দবাগ স্টেশনে রেখে ১২টি বগি নিয়ে চট্টগ্রামের উদ্দেশে রওনা হয়। মোট ১৮টি বগির পূর্ণাঙ্গ ট্রেন হলে হয়ত আরো বেশি হতাহত হতে পারত। কিন্তু তারপরও যা হয়েছে তা মোটেই কম নয়। এ ধরনের দুর্ঘটনা মোটেই কাম্য নয়। আমরা আশা করব রেল কর্তৃপক্ষ দুর্ঘটনা কমিয়ে আনার জন্য চেষ্টা করবে। এ ক্ষেত্রে প্রযুক্তির সহায়তা গ্রহণ করা যেতে পারে।
বর্তমান বিশ্বে প্রযুক্তি অনেক কিছু সহজ করেছে। বলা হয়, যদি গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম (জিপিএস) ব্যবস্থা থাকত, তাহলে টাইটানিক দুর্ঘটনা ঘটত না। জিপিএস সিস্টেমের কারণে বিশ্বে এখন দুর্ঘটনা কমে আসছে। জিপিএস সিস্টেম বতমানে উড়োজাহাজ ও নৌযান থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের ছোট-বড় স্থল যানেও ব্যবহার করছে। ফলে চালক নিজের অবস্থান, রাস্তার অবস্থান সবকিছু বুঝে যানবাহন পরিচালনা করেন। যদি সকল ধরনের যানে জিপিএস সিস্টেম ব্যবহার করা হয় তাহলে ছোট-বড় দূর্ঘটনা অনেকাংশেই হ্রাস পাবে।
রেল কর্তৃপক্ষও জিপিএস এই প্রযুক্তির আশ্রয় নিতে পারে। সব রেলে জিপিএস সিস্টেম সংযুক্ত করা হলে রেল দুর্ঘটনা অনেক কমে আসবে। কারণ তখন চালকরা রেল সড়কের বাস্তব চিত্র অনেক দূর থেকে দেখতে পাবেন। ফলে তারা আরো অনেক সর্তক হতে পারবেন। এ ছাড়া রেলওয়ের ব্যবস্থাপনাগত উন্নতিও প্রয়োজন। এই যে দুর্ঘটনা ঘটে গেল, তার জন্য স্টেশনের সিগন্যাল ম্যানদের কোনো গাফিলতি পাওয়া যায়নি। তবে চালকের বেপরোয়া মনোভাব ছিল। শুধু সাময়িক বরখাস্ত বড় কোনো শাস্তি নয়। এমন শাস্তি দিতে হবে যাতে অন্য চালকরাও সর্তক হয়ে যান। রেলের ডবল লেন এখন সময়ের দাবি। চলমান মেগা প্রকল্প না শেষ হয়ে গেলে, রেলের দুই লেনের বিষয় নিয়ে ভাবতে হবে।
© ২০২৩ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | কর্পোরেট সংবাদ সম্পাদক - মোঃ মিজানুর রহমান । উপদেষ্টা সম্পাদক- জেসমিন আক্তার, এফসিএস ই-মেইলঃ corporatesangbad@gmail.com । ফোনঃ ০২২২-৩৩৫৪১২৫ । মোবাইলঃ ০১৭১১০৭৬৮১৫ অফিসঃ ৫৫/বি, নোয়াখালী টাওয়ার, ১১ তলা, সুইট ১১-এফ, পুরানা পল্টন, ঢাকা ১০০০ |
রেল যোগাযোগ ব্যবস্থার আধুনিকায়নে জিপিএস সংযুক্ত হওয়া দরকার https://corporatesangbad.com/257575/ |