যশোর-বেনাপোল মহাসড়ক উন্নয়নে ক্ষতিগ্রস্ত গাছে বাড়ছে ঝুঁকি

Posted on April 25, 2023

বেনাপোল প্রতিনিধি : উন্নয়নের স্বার্থে যশোর-বেনাপোল মহাসড়কটি ফোর লেনে উন্নীত হলেও বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে রাস্তার দু’ধারে শতবর্ষী রেইন্ট্রি গাছগুলো। আদালতে রীট থাকায় গাছ না কেটেও রাস্তা সম্প্রসারণ সম্ভব নয়। এমনকি মরা গাছগুলোও অপসারণ না করায় অনেক সময় ঘটছে নানা দূর্ঘটনা। কর্তৃপক্ষের আশ্বাস আদালতে রীটের মীমাংসা হলেই সমস্যার সমাধান হবে।

ভুক্তভোগীরা বলছেন, সড়কটি ছয় লেনে উন্নতিকরণ হলে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে বেনাপোল স্থলবন্দরসহ ভারতের কোলকাতার যোগাযোগ অনেক সহজ হয়ে যাবে। এতে রাজধানীর সঙ্গে বেনাপোল স্থল বন্দরের দূরত্ব কমবে ৮৬ কিলোমিটার।

এদিকে যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ করতে যাচ্ছে সরকার। ১২৯ দশমিক ১৭ কিলোমিটারের এ সড়কও সার্ভিস লেনসহ ছয় লেনের হবে। এজন্য প্রাথমিকভাবে ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে ১১ হাজার ৭২ কোটি টাকা। তবে ছয় লেন নির্মাণের আগে ‘ভাঙ্গা-যশোর-বেনাপোল’ মহাসড়ককে ৬ লেনে উন্নীত করতে ভূমি অধিগ্রহণ ও ইউটিলিটি স্থানান্তর প্রকল্প নিতে যাচ্ছে সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর। ভূমি অধিগ্রহণে প্রস্তাবিত ব্যয় ধরা হয়েছে চার হাজার ২৩৬ কোটি ৬০ লাখ টাকা। চলতি সময় থেকে ২০২৫ সালের জুন নাগাদ ভূমি অধিগ্রহণ করা হবে।

১২৯ দশমিক ১৭ কিলোমিটার সড়কটি ছয় লেনে নির্মিত হলে বেনাপোল হয়ে ভারতের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য বছরে ১৫-২০ শতাংশ বাড়বে। প্রকল্পে ১২৯ দশমিক ১৭ কিলোমিটার সড়ক উভয় পাশে সার্ভিস লেনসহ ছয় লেনে উন্নীত করা হবে। এজন্য ১ দশমিক ৯২ লাখ ঘনমিটার সড়ক বাঁধে মাটির কাজ ও ৮ হাজার ৬৯২ দশমিক ১৬ মিটার স্ট্রাকচার নির্মাণ করা হবে। এর মধ্যে থাকবে ফ্লাইওভার, ওভারপাস, ব্রিজ, ফুটওভার ব্রিজ, কালভার্ট ও আন্ডারপাস। ১ হাজার ২৮ কোটি ৫৫ লাখ টাকার সাইট ফ্যাসিলিটিজের কাজ করা হবে। প্রকল্পে পরামর্শক সেবা ব্যয় ধরা হয়েছে ১৫৪ কোটি টাকা। উচ্চ আদালত থেকে দ্রুত মামলা নিস্পত্তি না হলে ছয় লেন সড়ক করতে প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়াবে সড়কের পাশের আধামরা গাছগুলো।

অপর দিকে যশোর-বেনাপোল মহাসড়কের প্রাচীন গাছের কারণে কারও মৃত্যু হলে যারা গাছ রক্ষার জন্য উচ্চ আদালতে রিট করেছে তাদের বিরূদ্ধে হত্যা মামলা করা হবে বলে হুশিয়ারি প্রদান করেছেন নাগরিক অধিকার আন্দোলন যশোরের নেতৃবৃন্দ। মানুষ বড়, না গাছ বড় প্রশ্ন রেখে বক্তারা বলেন, মহাসড়কের পাশে গাছ কখনোই পরিবেশের জন্য নয়। সড়কের দুপাশে দু’শ’ বছর আগের গাছ গুলোতে কোন পাতা নেই, পাতার মত যা দেখা যায় সব পরগাছা কয়েকটি বাদে প্রায় সব গুলি মৃত ও অর্ধমৃত্যু গাছ। পরিবেশবাদীরা ঢাকাতে ফটো এডিট করে মৃত গাছ জীবিত দেখিয়ে রিট করেছে বলেও অভিযোগ করেন তারা। অবিলম্বে যশোর বেনাপোল মহাসড়কের পাশের সকল গাছ কেটে সড়ক ছয় লেনে উন্নীত করে বেনাপোল বন্দরের সাথে ব্যবসা বাণিজ্যে প্রসার ঘটনোর দাবি জানান নেতৃবৃন্দ। সম্প্রতি প্রেসক্লাব যশোরের সামনে নাগরিক অধিকার আন্দোলন যশোরের আয়োজনে মানববন্ধনে বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষ অংশ নেন।

জানা গেছে, যশোর-কলকাতা ব্রিটিশ ভারতের ঐতিহ্যবাহী মহাসড়ক। দেশ ভাগের পর ৮০ কি.মি. মধ্যে যশোরের বকচর থেকে বেনাপোল চেকপোস্টের শুন্য রেখা পর্যন্ত ৩৮ কিলোমিটার পড়ে বাংলাদেশ অংশে। এ মহাসড়কের দু’ধারে অতি বর্ধনশীল শতবর্ষী রেইন্ট্রি গাছগুলো ছায়া দেওয়ার এক পর্যায়ে এখন অনেক গাছ মারা যায়। যেকোন সময় প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে এই মরা গাছগুলো ভেঙ্গে বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সর্বপরি দেশের সর্ববৃহৎ স্থলবন্দরের উন্নয়নের স্বার্থে যশোর-বেনাপোল মহাসড়কের পাশের শতবর্ষী গাছগুলো কেটে চার লেন সড়ক নির্মাণের বিকল্প নেই। তবে সরকার গাছ কেটে চার লেন সড়ক নির্মাণ করার সিদ্ধান্ত নেয়ায় যশোরের কতিপয় লোকজন দ্বিধা বিভক্ত হয়ে পড়ে। একটি পক্ষ না বুঝে উচ্চ আদালতে রীট দাখিল করায় বাধে যত বিপত্তি। এশিয়ান হাইওয়ের উন্নতিকরণ ও এলাকার অর্থনৈতিক উন্নয়নসহ সকল উন্নয়ন সাধিত করতে হলে গাছ কেটে ফোর লেন সড়ক নির্মাণ ছাড়া কোন বিকল্প নেই।

বাংলাদেশ ফুল সোসাইটির সভাপতি আব্দুর রহিম বলেন, যশোর-বেনাপোল হাইরোডে যে গাছ আছে, এই গাছ নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে অনেক মতামত আছে। সারা বাংলাদেশে ফুল সরবরাহের জন্য আমাদের এই রাস্তার উন্নয়নের দরকার। গাছ নিয়ে অনেক বিতর্ক হয়েছে। আমরা গাছ চাই কিন্তু উন্নয়নকে বাধাগ্রস্থ করে আমরা গাছ চাই না।

যশোরের শার্শা উপজেলা চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল হক মঞ্জু বলেন, এশিয়ান হাইওয়ে সরকারের প্রস্তাবিত সড়কা। সরকারের উন্নয়নের স্বার্থে ছয় লেনের স্বার্থে এই এশিয়ান হাইওয়ে যেন সম্প্রসারিত হয়, যেটা পদ্মা সেতুর সাথে যে কানেকটিং এর কথা ছিল এটাও তার অংশ। ছয় লেনের স্বার্থ এই গাছগুলো অপসারণ করা উচিত বলে মনে করি।

যশোর জেলা পরিষদের সহকারী প্রকৌশলী মো: ওহিদুজ্জামান জানান, যশোর-বেনাপোল সড়কে বর্তমানে জেলা পরিষদ থেকে কোন কার্যক্রম আমরা গ্রহণ করতে পারছি না। যেহেতু হাইকোর্টে একটা রীট আছে। পরিবেশবাদীরা এটার একটা রীট করছে যে এটা শতবর্ষী গাছ এটা সংরক্ষণ করতে হবে। যে কারণে আমরা ওই মরা গাছগুলোও অপসারণ করতে পারছি না এবং ঝুকিপূর্ণও কিছু গাছ আছে যাই অত্যন্ত জরুরী এই মুহুর্তে গাছ কাটা, না হলে যেকোন ধরণের দুর্ঘটনা ঘটবে এবং প্রাণহানির অবস্থায়। এ ব্যাপারে আমরা উপরেও যোগাযোগ করছি রীট উঠে যাওয়ার পরে আমরা ব্যবস্থা নিতে পারবো।

যশোর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদ জানান, রাস্তায় যে গাছ গুলো আছে অত্যন্ত পুরাতন গাছ। গাছের ভিতর যে উড ভ্যালু সেটা একদমই নাই। গাছের মালিক জেলা পরিষদ, যদিও আমরা সড়ক ও জনপথ এগুলো মেইনটেইন করি তারপরেও গাছের মালিকানা জেলা পরিষদের। ফলশ্রুতিতে রোডস এন্ড হাইওয়ে এই গাছগুলো অপসারণ করতে পারে না। জেলা পরিষদকে আমরা অনুরোধ করেছি এই গাছগুলো যে অপসারণ করা হয়। ভবিষ্যতে আমাদের যে পরিকল্পনা, যে সিক্স লেন প্রকল্প সেটি যেন আমরা বাস্তবায়ন করতে পারি। গাছ অপসারণ না করলে প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্ভব হবে না।

যশোরের জেলা প্রশাসক মো: তমিজুল ইসলাম খান বলেন, যশোর থেকে বেনাপোল ঐতিহাসিক যশোর রোডে যে ঐতিহাসিক প্রাচীন গাছ গুলো রয়েছে, সে বৃক্ষগুলো আদালতের একটি নিষেধাজ্ঞা থাকায় সেগুলো অপসারণ করা কর্তন করা বা অন্য কিছু করা বা রাস্তা সম্প্রসারণ করা যাচ্ছে না। সম্প্রতি আমরা লক্ষ করেছি যে কিছু গাছ ইতিমধ্যে মরে গেছে। এই মৃত গাছগুলো অপসারণ না করলে দুর্ঘটনা ঘটার একটি সম্ভবনা আছে। এভাবে স্থানীয় জনগণের মধ্যে থেকে বিশেষ করে জনপ্রতিনিধিগণ আমাকে অবহিত করেছেন। আমরা বিষয়টি আদালতের নোটিশে আনার জন্য আমাদের সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়কে অবহিত করেছি।