সলঙ্গা নৃশংসতম গণহত্যা দিবস আজ

Posted on April 25, 2023

সেলিম রেজা, সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি: সলঙ্গা নৃশংসতম গণহত্যা দিবস আজ (২৫ এপ্রিল)। ১৯৭১ সালের এই দিনে সিরাজগঞ্জের সলঙ্গা থানার চড়িয়া মধ্যপাড়া গ্রামে নির্মম হত্যাযজ্ঞ চালায় পাক হানাদার বাহিনী। এদিন পাকিস্তানি সৈন্যদের ব্রাশফায়ারে প্রায় দুই শতাধিক মুক্তিকামী বাঙালী মারা যান।

জানা যায়, ১৯৭১ সালের ২০ এপ্রিল পাবনা জেলার কাশিনাথপুর ডাববাগান নামক স্থানে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মুখযুদ্ধে অর্ধশতাধিক হানাদারের মৃত্যু হয়। এ ঘটনার প্রতিশোধ নিতে হানাদার বাহিনী ২৫ এপ্রিল সৈয়দপুর ক্যান্টনমেন্ট থেকে কাশিনাথপুরের উদ্দেশে যাত্রা করে। পথে বগুড়া-নগরবাড়ী সড়কের সলঙ্গা থানার চড়িয়া শিকার নামক এলাকায় ব্যারিকেডের মুখে তারা যাত্রাবিরতি করেন। চড়িয়া শিকারের পূর্ব দক্ষিণ পাশে কাশিনাথপুর নামে অন্য একটি গ্রামের সন্ধান পান তারা। এ গ্রামকেই পাবনা জেলার কাশিনাথপুর মনে করে পাকবাহিনী খুঁজতে থাকে মুক্তিযোদ্ধাদের ঘাঁটি'।

তারা দেশীয় দোসর রাজাকার-আলবদরদের সহযোগিতায় সন্ধান পান চড়িয়া মধ্যপাড়ায় মুক্তিযোদ্ধা প্রশিক্ষণ ঘাঁটির। তখন গ্রামের নিরীহ মানুষ ঘুমিয়ে ছিলেন। পাকবাহিনী সূর্যোদয়ের পূর্ব হতে গুলি চালাতে শুরু করেন এবং সকাল ৯টা পর্যন্ত গুলি অব্যাহত থাকে। ভস্মীভূত করে দেয় এলাকার ঘরবাড়ি। ওইদিন বিকেলে তারা চড়িয়া শিকারসহ আশেপাশের ৫-৭টি গ্রামের প্রায় দুই শতাধিক মুক্তিকামী মানুষকে আটকের পর দুই লাইনে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করেন'। এ গণহত্যার শিকার পাটধারী গ্রামের ২৯ জন, কালীবাড়ী গ্রামের ১৩ জন, শিকার মগপাড়া গ্রামের ৮ জন, চড়িয়া শিকার দক্ষিণ পাড়া গ্রামের ১০ জন, গোলকপুর গ্রামের ৫ জন, কাচিয়ার গ্রামের ১ জনের নাম পরিচয় পাওয়া যায়। বাকিদের পরিচয় এখন পর্যন্তও জানা যায়নি।

পাকিস্তানী হায়েনাদের হাত থেকে বেঁচে যাওয়া চড়িয়া মধ্যগ্রামের আবুল কালাম (কাঙ্গাল মন্ডল') জানান, ওইদিন সকালে পাকিস্তানী বাহিনী আব্দুল মজিদের পুকুরের পাশে, ইয়ার আলীর পুকুরের পাশে সারিবদ্ধ দাঁড় করিয়ে নির্মমভাবে গুলি চালায়। ঘটনাস্থলে ৩৫ জনের মৃত্যু হয়। ভাগ্যের জোরে তিনি ৪টি গুলি খেয়েও বেঁচে যান।

পাক বাহিনীর হত্যাযজ্ঞের শিকার চড়িয়া মধ্যপাড়া গ্রামের বাহাজ উদ্দিন, ইয়াকুব আলী, আদম আলীম, ইউছুব আলী, মেছের উদ্দিন মুন্সী, ছলিম উদ্দিন, আজিজুল হক,গগন মন্ডল, ডা.শাহজাহান আলী, মোহাম্মদ আলী, তারা সরকার,কানছু সরকার, আবু বকর প্রামানিক,আবেদ আলী, আব্দুর কাইয়ুম, ডা. মুজিবর রহমান, ফজল প্রামাণিক, আমানত আলী, আবু তাহের, আহসান আলী, শাহজাহান, কাফি, আবু তালেব, ছানু ফকির, কাঞ্জু প্রামাণিক, আব্দুস ছাত্তার, মাহাম খা, দারোগ আলী, মজিবর রহমান, আজিজ, হাকিুমুদ্দীন, আব্দুল মজিদ, পাওমুসা, শমসের আলী ও তারা প্রামাণিক।

এছাড়াও ওইদিন পাটধারী গ্রামের ২৯ জন, কালীবাড়ী গ্রামের ১৩ জন, শিকার মগপাড়া গ্রামের ৮জন, চড়িয়া শিকার দক্ষিণ পাড়া গ্রামের ১০ জন, গোলকপুর গ্রামের ৫ জন, কাচিয়ার গ্রামের ১ জনসহ নাম না জানা অনেককে নির্মমভাবে হত্যা করে হানাদার পাকিস্তানী বাহিনীরা। আজও বেঁচে আছেন আবুল কালাম (কাঙ্গাল মন্ডল')