পুঁজিবাজার রক্ষায় কর্তৃপক্ষের বিশেষ দৃষ্টি একান্ত প্রয়োজন

Posted on October 12, 2019

দীর্ঘদিন ধরেই দেশের পুঁজিবাজারে টালমাটাল আবস্থা বিরাজ করছে। লাগাতার দরপতনের ফলে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ডিএসইএক্স সূচক প্রায় ৩ বছরের আগের অবস্থানে এসে দাড়িয়েছে। ফলে বিনিয়োগকারীদের দীর্ঘ দিনের হতাশা আতঙ্কে রূপ নিয়েছে। বিরাজমান এ সঙ্কট মোকাবিলায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে উল্লেখযোগ কোন প্রণোদনা বা নীতিগত পদক্ষেপ চোখে পড়েনি। ফলে বাজার পরিস্থিতি দিন দিন অস্থিতিশীল হয়ে উঠছে। তাই পুঁজিবাজারের সার্বিক সঙ্কট থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি দেয়া একান্ত প্রয়োজন বলে মনে করছি।

পুঁজিবাজারে ধারাবাহিক দরপতনে যারা মার্চেন্ট ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করেছেন তারা সবচেয়ে বেশি বিপদে রয়েছেন। এ অবস্থা আরো বেশি দিন বজায় থাকলে দেশের পুঁজিবাজারের পাশাপাশি শিল্প-বাণিজ্য তথা সামগ্রিক অর্থনীতি হুমকির মুখে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।কেননা জনগনের সঞ্চিত টাকা পুঁজিবাজারের মাধ্যমে শিল্পে বিনিয়োগ হয়ে শিল্পর বিকাশ ঘটে।তাই পুঁজিবাজারের ধারাবাহিক পতন ঠেকাতে শিগগিরই অর্থমন্ত্রণালয়, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও বিএসইসি’র যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন। পাশাপাশি অব্যাহত দর পতনের পরেও বড় বড় প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা কেন হাত গুটিয়ে রয়েছে তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। একইসঙ্গে পুঁজিবাজার নিয়ে দুষ্টচক্রের কারসাজিও খতিয়ে দেখতে হবে।

পুঁজিবাজারে এ ধরনের দরপতন কোনো আকস্মিক ঘটনা নয়। তবে দরপতনের ধারাবাহিকতা শঙ্কিত করে তুলছে বিনিয়োগকারিদের। বিশেষ করে ঋণগ্রস্ত বিনিয়োগকারীরা এখন পুঁজির নিরাপত্তা নিয়েই শঙ্কিত। ডিএসই’র প্রায় ৭৭ শতাংশ কোম্পানির দরপতনে বাজার মূলধন তিন হাজার কোটি টাকার বেশি কমে গেছে। এখন যদি ভয় পেয়ে সকল বিনিয়োগকারী ৯৬’ সালের মত সব শেয়ার বেচে দিতে চায় তাহলে বাজারে কোন ক্রেতা পাওয়া যাবে না। ফলস্বরূপ অনিবার্যভাবে ধ্বংসের মুখে পড়বে দেশের শেয়ারবাজার, স্তব্ধ হয়ে যাবে দেশের শিল্প বিকাশ। তাই বাজারের তারল্য সঙ্কট নিয়ন্ত্রণে নীতিগত কৌশল নিতে হবে। দেশ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার হতে দেখা যাচ্ছে। অর্থ পাচার রোধে শুল্ক বিভাগের আরো তৎপর ভুমিকা পালন করতে হবে।

বাংলাদেশ বর্তমানে কৃষি অর্থনীতি থেকে শিল্পে উত্তোরিত হচ্ছে । বাংলাদেশের শ্ল্পি পণ্য বিশ্বের শতাধিক দেশে রফতানি হচ্ছে।আধুনিক ইউরোপ এভাবেই শিল্পোন্নত হয়েছে। বাংলাদেশও ২০২১ সালের মধ্যে মধ্য আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার স্বপ্ন দেখছে। এ পরিস্থিতিতে যদি পুঁজিবাজার ভেঙে পড়ে, তাহলে শিল্পের অগ্রযাত্রা থমকে যাবে।

নব্বই দশকের দিকে চীনের কাছে হংকং হস্তান্তর হলে, হংকংয়ের শেয়ার বাজারেও ধস নামে। তখন চীন সরকার বড় বড় দেশীয় কোম্পানিকে নির্দেশ দিয়েছিল হংকং স্টক এক্সচেঞ্জের বিনিয়োগ করতে। তখন বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার নিয়ে কোম্পানিগুলো শেয়ার কেনা শুরু করেছিল এবং তিন দিনের মধ্যে বাজার ঘুরে দাঁড়িয়েছিল।

বর্তমান প্রেক্ষাপটে চীনের মতো দেশের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ বাড়াতে সরকারকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। সরকার চাইলে দেশের বড় ব্যবসায়ীদের এরকম নির্দেশ দিতে পারে। পাশাপাশি বিটিআরসিসহ কিছু সরকারি কোম্পানির হাতে অনেক টাকা আছে, তারা কিছু বিনিয়োগ করতে পারে, ব্যাংকগুলোর পুঁজিবাজারে বিনিয়োগসীমা বাড়ানো যেতে পারে। এসব করে আপাতত পতন ঠেকাতে হবে। এরপর যে কারসাজি চক্র পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রণ করছে তাদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। শুধু প্রণোদনা দিয়ে পুঁজিবাজারের উন্নয়ন সম্ভব নয়, পাশাপাশি দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি বিধান চালু করা প্রয়োজন।