বিমা খাতের বড় চ্যালেঞ্জ অসুস্থ প্রতিযোগিতা

Posted on October 1, 2019

শেখ কবির হোসেন বিমা কোম্পানি মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিআইএ) প্রেসিডেন্ট। বিমা খাতের চ্যালেঞ্জ, গ্রাহকের অভিযোগ, সচেতনতার ঘাটতি ও বিমা নিয়ন্ত্রক সংস্থার সাম্প্রতিক পদক্ষেপ সম্পর্কে কথা বলেছেন তিনি।  সাক্ষাতকারটি দৈনিক শেয়ার বিজ পত্রিকার সৌজন্যে হুবহু তুলে ধরা হল।

প্রশ্ন: বর্তমান বিমা খাতের চ্যালেঞ্জগুলো কী কী?

শেখ কবির হোসেন: বিমা খাতের বড় চ্যালেঞ্জ এ খাতে অসুস্থ প্রতিযোগিতা। যে কারণে সাধারণ বিমা কোম্পানিগুলো ব্যবসা নেওয়ার জন্য নির্ধারিত সীমার চেয়ে অনেক বেশি কমিশন দিয়েছে। এতে কোম্পানি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেই সঙ্গে সেক্টরও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাই আমরা কয়েক বছর ধরে এ খাতে স্বচ্ছতা ফেরানোর কথা বলছি। সময়মতো বিমা দাবি পরিশোধের কথা বলছি। কমিশন নিয়ে নৈরাজ্য ঠেকাতে বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) পক্ষ থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আমরাও তাদের সঙ্গে একমত হয়েছি। আমরা কমিশন ব্যয় ১৫ শতাংশের মধ্যে রাখতে চাই। কোনো কোম্পানি নির্দেশনা অমান্য করে বেশি কমিশন দেওয়ার চেষ্টা করলে নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইন অনুযায়ী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেবে। বিআইএ’র পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা যে কোনো মূল্যে কমিশন নিয়ে নৈরাজ্য বন্ধ করতে চাই। সে জন্য সবাই একসঙ্গে কাজ করছি। কমিশন বাণিজ্য বন্ধ হলে সাধারণ বিমা কোম্পানিগুলো উপকৃত হবে। গ্রাহকের দাবি পরিশোধ করতে কোম্পানিগুলোকে বেগ পেতে হবে না।

প্রশ্ন: সাধারণ বিমা কোম্পানিতে দৃশ্যত কোনো এজেন্ট আছে কি-না?

শেখ কবির হোসেন: এ কথা ঠিক যে, সেই হিসেবে এখন কোনো এজেন্ট নেই। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কোম্পানির নিয়মিত বেতনভুক্তরাই পলিসি সংগ্রহ করে। তারপরও আইনে কমিশনের কথা রয়েছে। যে কারণে এখনও কমিশন দেওয়া হয়। বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় আইন সংশোধন করে এজেন্ট প্রথা বাতিল করা যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে এজেন্ট কমিশনের ব্যয় পুরোপুরি বন্ধ হবে। এ নিয়ে নৈরাজ্যের সুযোগ থাকবে না। নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইন সংশোধনের উদ্যোগ নিলে, আমরা সাধুবাদ জানাব।

প্রশ্ন: বাড়তি কমিশন বন্ধে আইডিআরএ’র ওই নির্দেশনা কোম্পানিগুলো পরিপালন করবে কি?

শেখ কবির হোসেন: নিয়ন্ত্রক সংস্থার নির্দেশনা মেনে না চলার কোনো সুযোগ নেই। সব পক্ষ একত্র হয়েই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। নির্দেশনা মানা হচ্ছে কি না, সেটা দেখার জন্য কমিটিও করা হয়েছে। কমিটি কোনো কোম্পানির বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলে তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নেবে। কমিটিতে বিআইএ’র প্রতিনিধিও আছে। তবে কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্টের কারণে সরেজমিন পরিদর্শনে আমাদের কোনো প্রতিনিধি যাবেন না। নিয়ন্ত্রক সংস্থাই মনিটরিং ও পরিদর্শনের কাজ করবে।

প্রশ্ন: বিমার প্রতি অনাগ্রহের কারণ হিসেবে দাবি পরিশোধে কালক্ষেপণকে দায়ী করা হয়, বর্তমান পরিস্থিতি কেমন?

শেখ কবির হোসেন: বিমা দাবি পূরণে কালক্ষেপণের অভিযোগ অনেক কম। এখন সাধারণ বিমায় এমন অভিযোগ নেই বললেই চলে। তবে জীবন বিমার ক্ষেত্রে কিছু কিছু কোম্পানির নামে এমন অভিযোগ থাকতে পারে। মানুষ জীবন বিমায় হয়রানির শিকার হলে তার দায়টাও সাধারণ বিমা কোম্পানির ওপর চাপিয়ে দেয়। আবার কিছু ক্ষেত্রে ভালোভাবে না জেনে-বুঝেও অনেক গ্রাহক অভিযোগ করে বসে। তাই বিমা গ্রাহকের হয়রানি কমানো ও বিমা সম্পর্কে মানুষের সচেতনতা বাড়ানোর জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। আশা করছি, অবস্থার উন্নতি হবে।

প্রশ্ন:  আপনারা সম্প্রতি কয়েক দফায় অর্থ মন্ত্রণালয় ও আইডিআরএ’র সঙ্গে বৈঠক করেছেন, এসব বৈঠকে আপনারা কোন বিষয়ে দায়িত্বশীলদের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছেন?

শেখ কবির হোসেন: আমরা সব সময়েই এ খাতে অসুস্থ প্রতিযোগিতা বন্ধ করার কথা বলছি। এক্ষেত্রে বড় পরিবর্তন আসছে। এখন আমরা ব্যবসার পরিধি বাড়াতে সহায়তা করার কথা বলছি। আমরা দেশের সরকারি-বেসরকারি সব বাণিজ্যিক ও আবাসিক ভবনের বিমা বাধ্যতামূলক করার কথা বলছি। এটা এখন সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে। রাজধানীতে বসবাসকারীরা প্রায় প্রত্যেকেই কোনো কোনোখানে ভবনে থাকেন। সেই আবাসিক ভবন বা বাসার বিমা করার কথা বলছি। রাজধানীবাসীরা যেখানে চাকরি করেন, কিংবা কাজের প্রয়োজনে যেসব বাণিজ্যিক ভবন-শপিংমলে যান সেগুলোর বিমা করার কথা বলছি। বিশ্বের প্রায় প্রত্যেকটি দেশেই এসব ক্ষেত্রে বিমা বাধ্যতামূলক। আমরাও এ বিষয়ে আইনি নির্দেশনা চাইছি। এতে প্রিমিয়াম আয় বাড়বে, জিডিপিতে বিমা খাতের অবদানও বাড়বে।

আরও পড়ুন: ‘শরিয়াহ্ভিত্তিক ব্যাংকিংয়ে সচেতনতার ঘাটতি রয়েছে’