শহীদ মিনারে ডা. জাফরুল্লাহর প্রতি শেষ শ্রদ্ধা বৃহস্পতিবার

Posted on April 12, 2023

নিজস্ব প্রতিবেদক : বীর মুক্তিযোদ্ধা ও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর মরদেহ বৃহস্পতিবার (১৩ এপ্রিল) সকাল ১০টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে রাখা হবে। সেখানে সর্বস্তরের মানুষের পাশাপাশি রাষ্ট্রীয়ভাবে তাকে শ্রদ্ধা জানানো হবে।

বুধবার (১২ এপ্রিল) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারপারসন আলতাফুন্নেছা সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান।

তিনি বলেন, আগামকিাল বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য তার মরদেহ রাখা হবে। সেখানেই দুপুর ২টায় রাষ্ট্রীয়ভাবে গার্ড অব অনার দেয়া হবে। সেখানে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে দুপুর আড়াইটায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ডা. জাফরুল্লাহর প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। এর পরদিন শুক্রবার (১৪ এপ্রিল) সাভারের গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে সকাল ১০টা থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন এবং বাদ জুমা তার জানাজা হবে। তবে দাফনের বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি।

তার মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী শোক প্রকাশ করেছেন।

এর আগে, মঙ্গলবার (১১ এপ্রিল) রাত সোয়া ১১টার দিকে ধানমন্ডির গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে মারা যান ডা. জাফরুল্লাহ। এ তথ্য নিশ্চিত করেন তার চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের প্রধান সমন্বয়কারী অধ্যাপক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ডা. মামুন মোস্তাফী।

গত ৫ এপ্রিল গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন ডা. জাফরুল্লাহ। পরে তাকে গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে নেয়া হয়। তার শারীরিক অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় গত রোববার (৯ এপ্রিল) দুপুরে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের নিয়ে একটি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়।

মেডিকেল বোর্ডে কিডনি, মেডিসিন, ভাসকুলার সার্জন, বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ, ইনটেনসিভিস্ট চিকিৎসক ছিলেন।

গত সোমবার শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে লাইফ সাপোর্টে নেয়া হয়। তিনি গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে নিবিড় পর্যবেক্ষণে ছিলেন।

৮২ বছর বয়সী ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী দীর্ঘদিন কিডনি জটিলতায় ভুগছিলেন। করোনার পর কিডনি সমস্যার পাশাপাশি তার লিভারের সমস্যা দেখা দেয়। এ ছাড়া তিনি অপুষ্টিসহ গুরুতর সেপটিসেমিয়ায় আক্রান্ত ছিলেন।

প্রসঙ্গত, জাফরুল্লাহ চৌধুরীর জন্ম ১৯৪১ সালের ২৭ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম জেলার রাউজান উপজেলার কোয়েপাড়া গ্রামে। তাঁর বাবা হুমায়ুন মোর্শেদ চৌধুরী ছিলেন পুলিশ কর্মকর্তা। মা হাছিনা বেগম চৌধুরী ছিলেন গৃহিণী। মা–বাবার দশ সন্তানের মধ্যে জাফরুল্লাহ চৌধুরী ছিলেন সবার বড়।

জাফরুল্লাহ চৌধুরী ঢাকা কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করে ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন। সেই সময় তিনি বাম রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ার পর হাসপাতালের অনিয়ম–দুর্নীতি নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে আলোচিত হয়ে ওঠেন। ১৯৬৪ সালে এমবিবিএম পাস করে যুক্তরাজ্যে চলে যান। সেখানে তিনি সাধারণ সার্জারি ও ভাসকুলার সার্জারিতে প্রশিক্ষণ নেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় ১৯৭১ সালে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসায় ভারতের ত্রিপুরায় বাংলাদেশ ফিল্ড হাসপাতাল গড়ে তোলায় বিশেষ ভূমিকা পালন করেন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত চিকিৎসকদের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে সংগঠিত করা, হাসপাতালের জন্য ওষুধসহ চিকিৎসা সরঞ্জাম সংগ্রহ করার ক্ষেত্রেও তাঁর বড় ভূমিকা ছিল। ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী ফিল্ড হাসপাতালের সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়েছিলেন ১৯৭২ সালে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র গড়ে তোলার ক্ষেত্রে।

কাজের স্বীকৃতি হিসেবে জীবনের নানা পর্বে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কার ও সম্মান পেয়েছেন জাফরুল্লাহ চৌধুরী। ১৯৭৭ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার দেয় সরকার। ফিলিপাইনের র‌্যামন ম্যাগসাইসাই পুরস্কার পান ১৯৮৫ সালে। ১৯৯২ সালে সুইডেন থেকে তাঁকে দেওয়া হয় রাইট লাইভলিহুড অ্যাওয়ার্ড। কানাডার ওয়ার্ল্ড অর্গানাইজেশন অব ন্যাচারাল মেডিসিন ২০০৯ সালে দেয় ডক্টর অব হিউম্যানিটেরিয়ান উপাধি। যুক্তরাষ্ট্রের বার্কলি থেকে ২০১০ সালে দেওয়া হয় ইন্টারন্যাশনাল পাবলিক হেলথ হিরোজ অ্যাওয়ার্ড।

ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী একজন ভাসকুলার সার্জন হলেও মূলত জনস্বাস্থ্য চিন্তাবিদ। ১৯৮২ সালের ওষুধ নীতি দেশকে ওষুধে প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ করে, জাফরুল্লাহ চৌধুরী ছিলেন ওই নীতি প্রণয়নের অন্যতম কারিগর। বহির্বিশ্বে তাঁর পরিচয় বিকল্পধারার স্বাস্থ্য আন্দোলনের সমর্থক ও সংগঠক হিসেবে। নাগরিক অধিকার আন্দোলনেও সোচ্চার ছিলেন জাফরুল্লাহ চৌধুরী।

আরও পড়ুন:

মানুষের কল্যাণে নিজের দেহটাও দান করে গেছেন ডা. জাফরুল্লাহ

১৬ এপ্রিল থেকে হজযাত্রীদের বায়োমেট্রিক ভিসা আবেদন

নীল অর্থনীতির সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর