নিজস্ব প্রতিবেদক : বীর মুক্তিযোদ্ধা ও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বুধবার (১২ এপ্রিল) এক শোক বার্তায় প্রধানমন্ত্রী প্রয়াতের আত্মার শান্তিকামনা করে এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
শোক বার্তায় শেখ হাসিনা বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধ, ওষুধ শিল্প ও জনস্বাস্থ্য খাতে ডা. জাফরুল্লাহর অবদান স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
এর আগে, গত মঙ্গলবার রাতে গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন ডা. জাফরুল্লাহ। ৮২ বছর বয়সী এই বীর মুক্তিযোদ্ধা দীর্ঘদিন ধরেই কিডনি সমস্যার পাশাপাশি বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় ভুগছিলেন। গত সোমবার তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়েছিল।
প্রসঙ্গত, জাফরুল্লাহ চৌধুরীর জন্ম ১৯৪১ সালের ২৭ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম জেলার রাউজান উপজেলার কোয়েপাড়া গ্রামে। তাঁর বাবা হুমায়ুন মোর্শেদ চৌধুরী ছিলেন পুলিশ কর্মকর্তা। মা হাছিনা বেগম চৌধুরী ছিলেন গৃহিণী। মা–বাবার দশ সন্তানের মধ্যে জাফরুল্লাহ চৌধুরী ছিলেন সবার বড়।
জাফরুল্লাহ চৌধুরী ঢাকা কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করে ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন। সেই সময় তিনি বাম রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ার পর হাসপাতালের অনিয়ম–দুর্নীতি নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে আলোচিত হয়ে ওঠেন। ১৯৬৪ সালে এমবিবিএম পাস করে যুক্তরাজ্যে চলে যান। সেখানে তিনি সাধারণ সার্জারি ও ভাসকুলার সার্জারিতে প্রশিক্ষণ নেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় ১৯৭১ সালে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসায় ভারতের ত্রিপুরায় বাংলাদেশ ফিল্ড হাসপাতাল গড়ে তোলায় বিশেষ ভূমিকা পালন করেন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত চিকিৎসকদের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে সংগঠিত করা, হাসপাতালের জন্য ওষুধসহ চিকিৎসা সরঞ্জাম সংগ্রহ করার ক্ষেত্রেও তাঁর বড় ভূমিকা ছিল। ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী ফিল্ড হাসপাতালের সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়েছিলেন ১৯৭২ সালে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র গড়ে তোলার ক্ষেত্রে।
কাজের স্বীকৃতি হিসেবে জীবনের নানা পর্বে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কার ও সম্মান পেয়েছেন জাফরুল্লাহ চৌধুরী। ১৯৭৭ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার দেয় সরকার। ফিলিপাইনের র্যামন ম্যাগসাইসাই পুরস্কার পান ১৯৮৫ সালে। ১৯৯২ সালে সুইডেন থেকে তাঁকে দেওয়া হয় রাইট লাইভলিহুড অ্যাওয়ার্ড। কানাডার ওয়ার্ল্ড অর্গানাইজেশন অব ন্যাচারাল মেডিসিন ২০০৯ সালে দেয় ডক্টর অব হিউম্যানিটেরিয়ান উপাধি। যুক্তরাষ্ট্রের বার্কলি থেকে ২০১০ সালে দেওয়া হয় ইন্টারন্যাশনাল পাবলিক হেলথ হিরোজ অ্যাওয়ার্ড।
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী একজন ভাসকুলার সার্জন হলেও মূলত জনস্বাস্থ্য চিন্তাবিদ। ১৯৮২ সালের ওষুধ নীতি দেশকে ওষুধে প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ করে, জাফরুল্লাহ চৌধুরী ছিলেন ওই নীতি প্রণয়নের অন্যতম কারিগর। বহির্বিশ্বে তাঁর পরিচয় বিকল্পধারার স্বাস্থ্য আন্দোলনের সমর্থক ও সংগঠক হিসেবে। নাগরিক অধিকার আন্দোলনেও সোচ্চার ছিলেন জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
আরও পড়ুন:
নীল অর্থনীতির সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর
© ২০২৩ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | কর্পোরেট সংবাদ সম্পাদক - মোঃ মিজানুর রহমান । উপদেষ্টা সম্পাদক- জেসমিন আক্তার, এফসিএস ই-মেইলঃ corporatesangbad@gmail.com । ফোনঃ ০২২২-৩৩৫৪১২৫ । মোবাইলঃ ০১৭১১০৭৬৮১৫ অফিসঃ ৫৫/বি, নোয়াখালী টাওয়ার, ১১ তলা, সুইট ১১-এফ, পুরানা পল্টন, ঢাকা ১০০০ |
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রীর শোক https://corporatesangbad.com/24185/ |