দুর্বল সামষ্টিক অর্থনীতি; বিশেষজ্ঞদের মূল্যায়ন আমলে নিন

Posted on June 15, 2019

নতুন অর্থবছরেরে বাজেট যখন সংসদে পেশ করা হলো, দেশের অর্থনীতিতে তখন সুবাতাস নেই। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ- সিপিডি বাজেটপূর্ব অর্থনীতি মূল্যায়ন সংক্রান্ত এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছে, বিগত দশ বছরের মধ্যে বর্তমানে সামষ্টিক অর্থনীতি সবচেয়ে বাজে অবস্থায় রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা ব্যাংকিং খাতের। ব্যাংকিং খাতের পরিস্থিতি খারাপ সেটি সবার জানা থাকলেও সামষ্টিক অর্থনীতির সবচেয়ে বাজে অবস্থায় থাকার বিষয়টি নতুন করে সামনে এসেছে।

সিপিডি সামষ্টিক অর্থনীতির যেসব সমস্যা তুলে ধরেছে তার মধ্যে রয়েছে কর আদায়ে দুর্বলতা, বৈদেশিক লেনদেনে বাড়তি চাপ, প্রবৃদ্ধিতে অসমতা, বিনিয়োগে ঘাটতি, প্রশাসনিক সুশাসনে ঘাটতি, সর্বোপরি ব্যাংকিং খাতের সমস্যা। আমরা মনে করি, নির্মোহ দৃষ্টিতে করা সিপিডির মূল্যায়নটি আমলে নিয়ে বাজেটে সে মোতাবেক পদক্ষেপ নেয়া দরকার আমাদের অর্থনীতির স্বার্থে। অস্বীকার করার উপায় নেই, বিগত দশ বছরে ব্যাংকিং খাতের পরিস্থিতি অনেক খারাপ হয়েছে। এরই মধ্যে খেলাপি ঋণ এক লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে এবং তা জ্যামিতিক হারে বাড়ছে। যে কোনো অর্থনীতির জন্য এত বিপুল পরিমাণ খেলাপি ঋণ, এমনকি তা বাড়তে থাকার প্রবণতা অশনিসংকেত। আমাদের জন্য তো বিষয়টি ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’। দুর্ভাগ্যের বিষয়, সরকারের সব পদক্ষেপই, এমনকি ব্যাংকিং খাতের কল্যাণের জন্য ঘোষণা দিয়ে নেয়া পদক্ষেপও খাতটিকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। আমরা উচ্চমধ্যম আয়ের দেশ হতে চাই; কিন্তু প্রবৃদ্ধি ও মাথাপিছু আয়ের হিসাবের বাইরে অর্থনীতির জন্য ভালো খবর নেই বললেই চলে।

এ অবস্থায় ব্যাংকিং খাতসহ অর্থনীতির সব সেক্টরে প্রশাসনিক সুশাসন ফিরিয়ে আনা গেলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে আশা করা যায়। এ জন্য দুর্বল হয়ে পড়া অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ শক্তিশালী করার উদ্যোগ নিতে হবে। সিপিডির বিশেষ ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, অর্থনৈতিক দুর্বলতার অন্যতম হল কর আদায় খাতের সমস্যা। বর্তমানে আমাদের কর আদায় জিডিপির ১০ শতাংশেরও কম।অর্থনীতিকে গতিশীল করতে বিনিয়োগ বাড়ানো, সুশাসন নিশ্চিত করা, মুদ্রা তথা টাকার মূল্যমান কমানো, হিসাবধারী কৃষকদের অ্যাকাউন্টে পাঁচ হাজার করে টাকা দেয়াসহ গুরুত্বপূর্ণ কিছু সুপারিশ করেছে সিপিডি। চীন ও ভারত মাঝে মাঝে মুদ্রার অবমূল্যায়ন করে থাকে। এতে করে বৈদেশিক মুদ্রার লেনদেনে ও বিল পরিশোধে চাপ কমতে পারে। অন্যদিকে কৃষকের জন্য ভর্তুকি হিসেবে টাকা দেয়ার বিষয়টি আমলে নেয়া দরকার। কারণ ধানে বড় ধরনের লোকসান দেয়া কৃষক চাষে আগ্রহ হারালে সেটি দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতি বয়ে আনবে। পাঁচ হাজার টাকা বেশি না হলেও প্রতীকীভাবে কৃষককে বোঝাতে হবে যে সরকার তাদের সঙ্গে আছে।

বাজেটের আকার ক্রমান্বয়ে বাড়লেও শিক্ষা খাতে বরাদ্দ না বাড়া এবং ধর্মীয় বরাদ্দকে শিক্ষার সঙ্গে মিলিয়ে শিক্ষা ব্যয় বড় করে দেখানোর শুভঙ্করের ফাঁকির কথা তুলে ধরা হয়েছে সিপিডির মূল্যায়নে। বিষয়টি দুঃখজনক। শিক্ষা খাতে ব্যয় না বাড়লে মানসম্মত শিক্ষা-গবেষণা নিশ্চিত করা যে সম্ভব নয়, তা আমরা টের পাচ্ছি। সরকারের উচিত শিক্ষা-গবেষণা ও মানবসম্পদের মতো বিষয়ে জোর দেয়া। সামষ্টিক অর্থনীতির উন্নতির জন্য সিপিডির পরামর্শের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় অন্যান্য উদ্যোগও সরকার নেবে বলে আমরা আশাবাদী।

আরও পড়ুন: বাজেট বাস্তবায়নে সকলের সহযোগিতা প্রত্যাশা করেছেন প্রধানমন্ত্রী