May 20, 2025 - 6:47 pm
তথ‌্য অ‌ধিদপ্ত‌রের নিবন্ধন নম্বরঃ ৭৭
Homeসম্পাদকীয়ইন্টারনেটের উজ্জ্বল ও অন্ধকার দিক

ইন্টারনেটের উজ্জ্বল ও অন্ধকার দিক

spot_img

একবিংশ শতাব্দীতে ইন্টারনেট নামক শব্দটি শুনেনি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া বোধহয় এখন সবচেয়ে দুষ্কর। প্রযুক্তির কল্যাণ ও প্রসারে আজ প্রায় সবাই এ শব্দটির সাথে পরিচিত। যারা এর ব্যবহার জানে না তারাও অন্তত এ শব্দটির সাথে পরিচিত। বর্তমানে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়তে থাকায় এর ব্যবহার ও অপব্যবহার নিয়ে রয়েছে বহু বিতর্ক। কেউ কেউ মনে করে থাকেন যে ইন্টারনেটের কারণে সমাজের ক্ষতিই হয়েছে বেশি। আবার কেউ কেউ মনে করেন উপকার হচ্ছে বেশি। কিন্তু বস্তুত, এ ইন্টারনেট মানুষের উদ্ভাবিত এমন এক নেটওয়ার্কিং ব্যবস্থা যার একাধারে সমানভাবে রয়েছে উজ্জ্বল ও অন্ধকার দিক। আবার, এটি এমন এক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে যা ছাড়া সমগ্র পৃথিবীও অচল হয়ে পড়তে পারে।

ইন্টারনেট হচ্ছে মূলত পরস্পরের সাথে সংযুক্ত অনেকগুলো কম্পিউটার নেটওয়ার্কের সমষ্টি যা জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত; যেখানে আইপি বা ইন্টারনেট প্রটোকল নামের এক প্রামাণ্য ব্যবস্থার মাধ্যমে ড্যাটা আদান-প্রদান করা হয় এবং যার বিস্তৃতি সমগ্র বিশ্বে। অর্থাৎ, ইন্টারনেট হচ্ছে এখন এক বৈশ্বিক ব্যবস্থা। এর মাধ্যমে বিশ্বের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে অনায়াসে তথ্য আদান-প্রদান করা যায়।

বর্তমানে এই ইন্টারনেটের বিভিন্ন ব্যবহার রয়েছে। ব্যবহারের ধরণ ও কারণ যাই হোক না কেন এর যেসব সুবিধাগুলো রয়েছে তা কিন্তু কোনভাবেই অস্বীকার করা যায় না। আজ মানুষ বিভিন্ন ওয়েবসাইটের মাধ্যমে বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে দ্রুতই জানতে পারছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ফর্ম পূরণ, ইন্টারনেটের মাধ্যমে ঘরে বসে মার্কেটিং, সরকারি বিভিন্ন বিষয়ে তথ্যাবলি জানতে, ই-মেইলের মাধ্যমে কয়েক সেকেন্ডে তথ্য আদান-প্রদান সবই হচ্ছে ইন্টারনেটের কল্যাণে। এ রকম সুবিধাগুলোর জন্যই ইন্টারনেট সেবাকে আজ বিশ্বের অনেক দেশ মানুষের মৌলিক চাহিদা হিসেবে বিবেচনা করে থাকে। তবে ইন্টারনেটে সবচেয়ে জনপ্রিয় যে ওয়েবসাইট তা হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইট। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে মানুষ আজ একে অপরের সাথে যোগাযোগ রাখতে পারছে। এমনকি সরাসরি ভিডিও কলের মাধ্যমে বিদেশে থাকা প্রিয়জনের সাথে বিনা খরচে কথাও বলতে পারছে। সবমিলিয়ে এসব দিকগুলো বিবেচনা করলে ইন্টারনেটকে আসলেই আশীর্বাদ বলতেই হয়। কিন্তু তার পার্শ¦প্রতিক্রিয়াও যে আছে সেদিকেও নজর দিতে হবে।

উজ্জ্বলতার পাশাপাশি ইন্টারনেটে ব্যবহারের অন্ধকার দিকও যে রয়েছে সেটাও অস্বীকার করা যায় না। ইন্টারনেটে রয়েছে বিভিন্ন পর্নোগ্রাফির ওয়েবসাইট যার কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থের শিকার হচ্ছে দেশ ও সমাজের তরুণ প্রজন্ম। অনেক বখাটেরা মেয়েদের অজান্তে তাদের ছবি তুলে বিভিন্ন পর্ন ওয়েবসাইটে ছড়িয়ে দিচ্ছে। এর ফলে বহু নারীকেও বিভিন্ন ধরনের হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। কিশোর-কিশোরীরা কিছু বুঝে ওঠার আগেই তারা এসব ওয়েবসাইটে যেয়ে বিকৃত সব যৌন ধারণা পাচ্ছে যা তাদের মন-মানসিকতা বিকাশে বাধা হয়েও দাড়াচ্ছে। ইন্টারনেটের কারণে আরো যে বিষয়টি অহরহ ঘটছে, তা হচ্ছে তথ্য ফাঁস। মানুষের ব্যক্তিগত তথ্য থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় অনেক গোপন তথ্য আর গোপন থাকতে পারছে না। ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক ওয়েবসাইটে অনেকে অযথাই সময় পার করছে। বিশেষ করে তরুণ বা ছাত্র-ছাত্রীরা। বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষার সময় ফেসবুকসহ অন্যান্য সামাজিক যোগযোগের মাধ্যমে প্রশ্নপত্র ছেড়ে দেয়া হচ্ছে। ফলে নকলের আরেক সহজ কৌশল মাধ্যম হয়ে উঠছে এই ইন্টারনেট। এসব কিছু দেখলে ইন্টারনেটকে সত্যিই অভিশাপ হিসেবে মনেই হবে।

কিন্তু ইন্টারনেট এখন যে বিষয় দাঁড়িয়েছে তাকে এড়িয়ে চলারও সুযোগ নেই। ইন্টারনেটের আদলে তো আরব বসন্তের মত বিপ্লবী আন্দোলনেরও সূচনা হয়েছিল। ইন্টারনেটের কারণে মানুষ দূর প্রান্ত থেকে একে অপরের সাথে যোগাযোগ করতে পারছে। তাহলে এর ব্যবহার কিরূপ হলে তার অভিশাপ থেকে বাঁচা যায়? উত্তরটি খুব সহজ, আর তা হচ্ছে মানুষের সচেতনতা। ইন্টারনেট সঠিক ব্যবহারের শিক্ষাও চালু করা যেতে পারে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে। অভিভাবকদের অবশ্যই এ ব্যাপারে নজর দিতে হবে। সন্তান-সন্ততি ইন্টারনেটে কি করছে, কোন কোন ওয়েবসাইটে যাচ্ছে Ñ এসব বিষয়গুলোতে নজর দিতে হবে। আর সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে একটি নির্দিষ্ট সময়ে ব্যবহার করা যেতে পারে। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম অবশ্যই অনেক উপকারী; কিন্তু তাই বলে অযথা এখানে সময়ের অপচয় করারও কোন মানে হয় না। আর ইন্টারনেটের মাধ্যমে যারা অপরাধ কর্মকান্ডে লিপ্ত হচ্ছে তাদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। যারা বিভিন্ন ওয়েবসাইট হ্যাকিং-এর মাধ্যমে তথ্য চুরিসহ ব্যাংক ওয়েবসাইট হ্যাক করে অর্থ পাচার করছে তাদের চিহ্নিত করতে প্রয়োজনে বিশেষ বাহিনীও গঠন করা যেতে পারে। আর সাইবার অপরাধ কি কি এবং এর ক্ষতিকারক দিকগুলো কি কি তা আগে মানুষকে বুঝাতে হবে। অনেকে নিজের অজান্তে সাইবার অপরাধ করে বসেন।

পৃথিবীতে আবিষ্কার হওয়া সবকিছুরই ভাল ও খারাপ দিক রয়েছে। ক্ষতিকর দিকগুলো সম্পর্কে সবাই সজাগ থেকে এড়িয়ে চলতে পারে তাহলে তা আর ক্ষতিকর হয় না। তাই অনেকে যেভাবে ইন্টারনেটকে খারাপ মনে করে সেটি আসলে ঠিক নয়। ইন্টারনেট ব্যবহারের বিভিন্ন দিক নিয়ে আরো বিস্তর গবেষণা হওয়া উচিত যেন এর উজ্জ্বল ও অন্ধকার দিক সম্পর্কে আরো ভালভাবে জানা যায়। এর অপব্যবহার রোধে শিক্ষা, আইন ও সচেতনতাই সবচেয়ে বেশি সহায়ক হিসেবে কাজ করবে।

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

সর্বশেষ সংবাদ

সাবেক ছাত্রলীগ নেতা এখন শাহজাদপুর কলেজ ছাত্রদলের সভাপতি

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি: সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর সরকারি কলেজে ছাত্রদলের আংশিক কমিটিতে সভাপতি পদে জায়গা পেয়েছেন মো. সাব্বির হোসেন নামের এক ব্যক্তি, যিনি অতীতে উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক...

ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের সর্বোচ্চ দর পতন

পুঁজিবাজার ডেস্ক: সপ্তাহের চতুর্থ কার্যদিবস মঙ্গলবার (২০, মে ২০২৫) দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) লেনদেনে অংশ নেওয়া ৩৯০ টি কোম্পানির মধ্যে ১০৪...

স্টারলিংকে জাতীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার কোন সুযোগ নেই

কর্পোরেট সংবাদ ডেস্ক: স্টারলিংকের ইন্টারনেট ব্যবহারের কারণে জাতীয় নিরাপত্তা কোনভাবে বিঘ্নিত হবে না বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার ডাক টেলিযোগাযোগ এবং তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক বিশেষ সহকারী...

দরবৃদ্ধির শীর্ষে ফু-ওয়াং ফুড

পুঁজিবাজার ডেস্ক: সপ্তাহের চতুর্থ কার্যদিবস মঙ্গলবার (২০, মে ২০২৫) দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) লেনদেনে অংশ নেওয়া ৩৯০ টি কোম্পানির মধ্যে ২১১...

নড়াইলে ধর্ষণ মামলার প্রধান পলাতক আসামি গ্রেফতার

উজ্জ্বল রায়, নড়াইল জেলা প্রতিনিধি: নড়াইলের কালিয়া উপজেলায় ধর্ষণ মামলার প্রধান পলাতক আসামি রাব্বি শেখ (২২) নামে এক যুবককে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-৬ ভাটিয়াপাড়া ক্যাম্প...

ঝিনাইদহে সক্রিয় হানিট্র্যাপ চক্রের ফাঁদে নারী- পুরুষ: স্বামী বিদেশ থাকলেও গর্ভবতী হচ্ছে স্ত্রী!

ঝিনাইদহ জেলা সংবাদদাতা: ১১ বছর ধরে স্বামী থাকেন বিদেশ, কিন্তু স্ত্রী আসমা খাতুন সাথী তিন মাস পরপর গর্ভবতী হচ্ছেন! শুনতে আবাক হলেও ঝিনাইদহ আদালতে...

এনসিসি ব্যাংক ও বিকাশের মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর

কর্পোরেট ডেস্ক: এনসিসি ব্যাংক পিএলসি. এবং বিকাশ লিমিটেড সম্প্রতি একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে, যার মাধ্যমে ২৪/৭ স্বয়ংক্রিয় ক্যাশ ম্যানেজমেন্ট সেবা চালু করা হয়েছে।...

গাজায় ৪৮ ঘণ্টায় ১৪ হাজার শিশুর মৃত্যুর আশঙ্কা জাতিসংঘের

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: দ্রুত ত্রাণ না পৌঁছালে ফিলিস্তিনের গাজায় আগামী ৪৮ ঘণ্টায় ১৪ হাজার শিশুর মৃত্যু হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘের মানবিক কার্যক্রম...