বাংলাদেশের বন্ধুপ্রতিম দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের তেলসমৃদ্ধ দেশ সৌদি আরব। দেশটির রয়েছে আমাদের সুদীর্ঘ ও ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ এবং ঐতিহ্যগত ও সাংস্কৃতিক ঘনিষ্ঠতা। সারা পৃথিবীতে সৌদি আরবের রয়েছে শত শত বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ। কিন্তু বাংলাদেশের তাদের বিনিয়োগ হয়নি বললেই চলে। ঢাকা সফররত সৌদি আরবের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বিষয়ক মন্ত্রী মাজিদ বিন আবদুল্লাহ আল কাসাভি এ কথা স্বীকারও করেন। তবে সে অবস্থা এখন অনেকটাই কেটে গেছে। বাংলাদেশকে বিনিয়োগের জন্য একটি সম্ভাবনাময় দেশ হিসেবে উল্লেখ করে আবদুল্লাহ আল কাসাভি বলেছেন, আমাদের আরো আগেই বাংলাদেশে বিনিয়োগে এগিয়ে আসা উচিত ছিল। সাম্প্রতিক সময়ে সৌদি বাদশাহ নিজেও বাংলাদেশে বিনিয়োগ বাড়ানোর ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। সৌদি মন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন, শিগগিরই বাংলাদেশে সৌদি বিনিয়োগ গতি পাবে। সম্প্রতি দুই দেশের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও জনশক্তিসহ অন্যান্য খাতে দুটি চুক্তি ও চারটি সমঝোতা স্মারকও সই হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, খুব শিগগির সৌদি আরবের ২৫ বিলিয়ন বা আড়াই হাজার কোটি ডলারের বিনিয়োগ পেতে যাচ্ছে বাংলাদেশ।
দীর্ঘ সম্পর্ক সত্ত্বেও এখন পর্যন্ত সৌদি আরব ও বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ দেড় শ কোটি ডলারেরও কম। তার মধ্যে আবার আমদানির পরিমাণই বেশি। উভয় দেশ সচেষ্ট হলে এই পরিমাণ দ্রুত অনেক বৃদ্ধি পেতে পারে। বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি প্রবাসী আয় আসে সৌদি আরব থেকেই। প্রায় ২০ লাখ বাংলাদেশি বর্তমানে সৌদি আরবে কর্মরত রয়েছেন। কিন্তু তাঁদের বেশির ভাগই অদক্ষ শ্রমিক। তাঁরা আয়ও করেন কম। সৌদি আরবের চাহিদা অনুযায়ী দক্ষ জনবল পাঠানো গেলে বাংলাদেশের আরো বহু যুবকের সেখানে কর্মসংস্থানের সুযোগ রয়েছে। তখন প্রবাসী আয়ের পরিমাণও অনেক বেড়ে যাবে। এ ব্যাপারে দুই দেশের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারকও সই হয়েছে। বাংলাদেশে দক্ষ জনবল সৃষ্টিতে সৌদি প্রতিষ্ঠান ভূমিকা রাখবে। দুই মন্ত্রীসহ ৩৪ সদস্যের সৌদি প্রতিনিধিদল বাংলাদেশে আসে। তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গেও বৈঠক করে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে প্রাথমিকভাবে মোট ৩৫ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রস্তাব করা হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, এর বাইরেও অনেক বিনিয়োগ আসবে। এ ব্যাপারে সৌদি আরবের অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী মোহাম্মদ বিন মাজিদ আল-তাওজরিকে প্রধান করে সৌদি-বাংলাদেশ জয়েন্ট ওয়ার্কিং কমিটি অব ইনভেস্টমেন্ট গঠনে সম্মত হয়েছে দুই দেশ। এ ছাড়া খুব শিগগির একটি জয়েন্ট ইকোনমিক কাউন্সিলও গঠন করা হবে।
বর্তমান প্রতিযোগিতাপূর্ণ বিশ্বে কোনো দেশের পক্ষে এককভাবে এগিয়ে যাওয়া প্রায় অসম্ভব। আমরা আশা করি, অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক ক্ষেত্রগুলোসহ নানা ক্ষেত্রে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতার মাধ্যমে বন্ধুপ্রতিম দুই দেশই উপকৃত হবে এবং হাত ধরাধরি করে এগিয়ে যাবে। এখন আমাদের দেখতে হবে, আমলাতান্ত্রিক বা অন্যান্য জটিলতার কারণে সৌদি বিনিয়োগ যেন কোনোভাবেই নিরুৎসাহ না হয়। বরং তা যেন অদূর ভবিষ্যতে আরো বেশি উৎসাহিত হয়, সে চেষ্টাই করতে হবে আমাদের। এছাড়া তাদের বিনিয়োগের সুষ্ঠ ও নিরাপদ পরিবেশ দিতে হবে। যাতে সৌদির উৎসাহে অন্যান্য দেশও বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী হয়ে ওঠে।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশ-রাশিয়া সমঝোতা চুক্তি; নতুন দিগন্তের সূচনা
© ২০২৩ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | কর্পোরেট সংবাদ সম্পাদক - মোঃ মিজানুর রহমান । উপদেষ্টা সম্পাদক- জেসমিন আক্তার, এফসিএস ই-মেইলঃ corporatesangbad@gmail.com । ফোনঃ ০২২২-৩৩৫৪১২৫ । মোবাইলঃ ০১৭১১০৭৬৮১৫ অফিসঃ ৫৫/বি, নোয়াখালী টাওয়ার, ১১ তলা, সুইট ১১-এফ, পুরানা পল্টন, ঢাকা ১০০০ |
বাংলাদেশে সৌদি বিনিয়োগ, সম্ভাবনার নতুন দ্বার উন্মোচিত https://corporatesangbad.com/222883/ |