ফসলের মাঠে প্রয়োজন ভেজালবিরোধী অভিযান

Posted on February 19, 2019

বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ। আমাদের দেশের জাতীয় অর্থনীতিতে কৃষি একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ খাত। বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়নের সূত্র মতে মোট দেশজ উৎপাদনের তথা জিডিপিতে কৃষিখাতের অবদান ১৯.১ শতাংশ এবং কৃষিখাতের মাধ্যমে কর্মসংস্থান হয়েছে ৪৮.১ শতাংশ মানুষের।

আধুনিক বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে আমাদের দেশের সকল ক্ষেত্রে ব্যবহার হচ্ছে আধুনিক প্রযুক্তি। ফলে বাড়ছে কৃষি উৎপাদন এবং কমছে বেকারত্বের হার। চাষাবাদ পদ্ধতিতেও আধুনিক যন্ত্রপাতির প্রয়োগ বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। কিন্তু এই আধুনিকতার অপব্যবহার করে অসাধু কিছু সংখ্যক ব্যক্তি বিভিন্নমহলের ছত্রছায়ায় অতিরিক্ত মুনাফার লোভে কৃষিক্ষেতে মিশাচ্ছে নানা ধরনের ক্ষতিকর কেমিক্যাল- যা মানবদেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। গবাদি পশু ও মাছের খাবারে মেশানো হচ্ছে বিষাক্ত ফরমালিন। আর এর ফলে দেশের জনসংখ্যার বৃহৎ অংশ আক্রান্ত হচ্ছে নানা ধরণের মরণব্যথিতে। বিষাক্ত কেমিক্যালের ব্যবহারের বিষয়টি সরকারের পক্ষ থেকে মনিটরিং করার কোন উল্লেখযোগ্য উদ্যোগ দেখা যায় না। যে কারণে দুর্নীতিবাজ ও অসাধুরা থেকে যাচ্ছে ধরা-ছোঁয়ার বাইরে এবং রোগাক্রান্ত মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে আশঙ্কাজনক হারে।

ইয়াবা থেকে শুরু করে সকল ধরণের নেশাজাতীয় দ্রব্য যেমন মানুষের শরীরের জন্য ক্ষতিকর তেমনি বিষাক্ত কেমিক্যালসহ ক্ষতিকর ফরমালিনও মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ। খাদ্যদ্রব্য কৃষিক্ষেত থেকে স্থানীয় ব্যবসায়ী বা মধ্যস্বস্তভোগীর মাধ্যমে একাধিক হাত বদল হলে হয়ে ভোক্তার কাছে যায়। দেখা যায়, ক্ষেতে ক্ষতিকর কেমিক্যাল মেশানোর পর আড়ৎ বা মধ্যস্বত্বভোগীরা মেশায় ক্ষতিকর ফরমালিন। একাধিকভাবে মেশানো এ সকল ক্ষতিকর কেমিক্যাল এবং ফরমালিনের কারণে মানবদেহে যে বিষক্রিয়া তৈরি হচ্ছে, তাতে করে মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে নানা ধরণের মরণব্যথিতে।

বর্তমানে সরকারের বিভিন্ন বাহিনী ভেজালবিরোধী অভিযান পরিচালনা করছে বিভিন্ন আউটলেট, রেস্তোরা এবং ডিপার্টমেন্টাল ষ্টোরগুলোতে। এটা নিঃসন্দেহে একটি প্রসংশনীয় উদ্যোগ। জনস্বার্থ বিবেচনায় এবার ফসলের মাঠে ও বিভিন্ন আড়ৎ এ ভেজালবিরোধী অভিযান পরিচালনা করা জরুরি। দুর্নীতিবাজ ও অসাধুদের মূল উৎপাটন করতে হলে এর কোনো বিকল্প নেই। সেইসাথে দেশে ভেজালবিরোধী আইনের যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমে দায়িদের আনতে হবে আইনের আওতায় এবং দিতে হবে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি। এর জন্য প্রয়োজনে জেল-জরিমানার বিধান রেখে আইনে কঠোরতা আনতে হবে। প্রয়োজনে আলাদা ট্রাইব্যুনাল গঠন করা যেতে পারে।

যে কৃষকের মাধ্যমে আমাদের অর্থনীতি সচল হচ্ছে অব্যাহতভাবে, সেই সকল কৃষক তথা সকল শ্রেণির মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর কেমিক্যাল ও ফরমালিন ব্যবহার বন্ধে সরকারের জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করতে হবে। রক্ষা করতে হবে এদেশের সর্বস্তরের মানুষকে অকাল মৃত্যুর হাত থেকে।

আরও পড়ুন: ঋণখেলাপীদের পুরষ্কারে হুমকির মুখে ব্যাংকিং খাত