দক্ষিণাঞ্চলে আমনের বাম্পার ফলন

Posted on December 31, 2022

বরিশাল অফিস: চলতি আমন মৌসুমের শুরুতে অনাবৃষ্টি ও অতিবর্ষণের ফলে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে সংশয়ে ছিলেন বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের কৃষকেরা। কিন্তু সব শঙ্কা ছাপিয়ে এবার বিভাগের সব জেলায় আমনের ভালো ফলন পেয়ে কৃষকদের মধ্যে আশার সঞ্চার হয়েছে। একই সঙ্গে বাজারে দাম ভালো হওয়ায় কৃষকেরা খুশি। আমন ধান ওঠার পর বরিশাল অঞ্চলের বাজারে চালের দামও পড়তির দিকে। ফলে ক্রেতাদের মধ্যেও স্বস্তি এসেছে কিছুটা। খুচরা বাজারে কেজিপ্রতি চালের মূল্য ৪ থেকে ৫ টাকা করে কমেছে। খেতের সব ধান উঠে গেলে দাম আরও কমবে বলে ব্যবসায়ীরা জানান।

বরিশাল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর বরিশাল বিভাগের ছয় জেলায় ৬ লাখ ৯৯ হাজার ১১২ হেক্টর জমিতে আমনের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে ২১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৪৯ দশমিক ৫ ভাগ ধান কাটা হয়েছে। এর মধ্যে ১০ লাখ ৩১ হাজার ৩৫১ টন চাল উৎপাদন হয়েছে। গত বছর এই বিভাগে ৬ লাখ ৯৯ হাজার ১১২ লাখ হেক্টর জমিতে আমন আবাদ করে চাল উৎপাদন হয়েছিল ১৫ লাখ ৯৭ হাজার ৬১১ টন। এবার বাম্পার ফলন হওয়ায় চাল উৎপাদন গত মৌসুমের চেয়ে আরও বাড়বে বলে আশা করছে কৃষি বিভাগ।

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে গত ২৩ অক্টোবর রাত থেকে ২৪ অক্টোবর রাত ৯টা বরিশালে ৩৫৪ দশমিক ৬ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছিল। এক দিনে এত বেশি বৃষ্টিপাতের রেকর্ড এ অঞ্চলে নেই। কৃষকেরা জানান, সিত্রাংয়ের প্রভাবে আমনের অনেক বীজতলা ভেসে যায়। রোপণ করা চারা পচে যায়। এতে আমনের আবাদ ও উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে গভীর সংশয় দেখা দিয়েছিল। তবে ফলনে তার প্রভাব তো পড়েইনি, বরং এবার বাম্পার ফলন হয়েছে। বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের ধান ব্যবসায়ীরা জানান, বাজারে এবার আমন ধানের দাম বেশ ভালো। প্রতি মণ ব্রি আমন ধান ১ হাজার ৪০ টাকা এবং গুটি স্বর্ণা ১ হাজার ৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

বরিশালের আঞ্চলিক খাদ্য কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীরর আলম বলেন, এবার সরকার আমন মৌসুমে ২৮ টাকা কেজি দরে ধান কিনবে। এ জন্য ধানের দাম বাজারে ভালো পাচ্ছেন কৃষক। সরকারিভাবে এ অঞ্চল থেকে ধান ও চাল দুটোই সংগ্রহ করবে সরকার।

বরগুনার আমতলী উপজেলার উত্তর রাওঘা গ্রামের কৃষক বশির উদ্দিন বলেন, এ বছর তিন একর জমিতে আমন চাষে খরচ হয়েছে ২৮ হাজার টাকা। ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। আশা করছেন, ভালোই লাভবান হব। বরিশালের উজিরপুর উপজেলার ধামুরা এলাকার কৃষক সিরাজুল ইসলাম বলেন, এবার সাড়ে ৩ একর জমিতে আমন আবাদ করেন তিনি। প্রায় ৬৫ মণ ধান পাবেন বলে আশা করছেন। তিনি বলেন, এবার বাজারে দামও ভালো। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার আগেই আমন আবাদ হওয়ায় ব্যয় বাড়েনি। তাই লাভ হবে। কিন্তু সামনে বোরো এবং আগামী আমন মৌসুমে উৎপাদন ব্যয় অনেক বেড়ে যাবে। এবার প্রতি একর জমি আবাদ করতে প্রায় ৬ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। সামনে এটা দ্বিগুণ হয়ে যাবে।

এখন এটি নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন বরিশাল বিভাগীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক মো. ফজলুল হক বলেন, অক্টোবর মাসে বৃষ্টি কম হওয়ায় খরা চলছিল। তখন আমন ধানের চারা নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলেন কৃষকেরা। ওই মাসের শেষ সপ্তাহে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের কারণে প্রচুর বৃষ্টি হয়। আর এই বৃষ্টি তখন ধানের চারার জন্য ছিল আশীর্বাদ। সময়মতো পানি পেয়ে এবার ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে।

পোর্ট রোডের খুচরা ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন বলেন, খুচরা বাজারে আমন মোটা চাল প্রতি কেজি ৫৮ টাকা, কাজলা ৪৮ থেকে ৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আগে তা ৫৫ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হতো। আমন পুরোপুরি উঠে গেলে দাম আরও কিছুটা কমবে। চালের বাজারে স্বস্তি : বরিশালের পাইকারি বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আমন মোটা ৫০ কেজি প্রতি বস্তা ২ হাজার ৬৫০ টাকা, কাজলা আমন ২ হাজার ২৫০ টাকা, দুধ কলম (চিকন) ২ হাজার ৩৫০ থেকে ২ হাজার ৪০০ টাকা দরে প্রতি বস্তা বিক্রি হচ্ছে। নগরের পাইকারি বাজার ফড়িয়াপট্টির হাওলাদার বাণিজ্য কেন্দ্র নামে একটি প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী চাল ব্যবসায়ী আলমগীর হাওলাদার বলেন, আমন আসার পর থেকে পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি চালে ৪ থেকে ৫ টাকা মূল্য কমেছে।