দেশের সর্ববৃহৎ ইফতার মাহফিল সাতক্ষীরার নলতায়

Posted on March 26, 2023

শহীদুজ্জামান শিমুল, সাতক্ষীরা : রমজান মাস জুড়ে দৈনিক ১০ হাজার মানুষের ইফতারের আয়োজন করা হয় সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ উপজেলার নলতায়।প্রতি বছর পহেলা রমজান থেকে ৩০শে রমজান নলতা কেন্দ্রীয় আহ্ছানিয়া মিশন মাসব্যাপী এ ইফতার মাহফিলের আয়োজন করে। এলাকাবাসী ও কর্তৃপক্ষের দাবী বিশ্বের ২য় ও বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ ইফতার মাহফিল এটি।ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ, শিক্ষা সংস্কার সমাজহিতৈষী, ধর্ম প্রচারক ও উচ্চ স্তরের আউলিয়া খান বাহাদুর হ্ছানউল্লাহ ১৯৩৫ সালে সাতক্ষীরার নলতায় কেন্দ্রীয় আহছানিয়া মিশন প্রতিষ্ঠা করেন। সে সময়ে স্বল্প পরিসরে ইফতার মাহফিলের য়োজন করতেন তিনি। ধীরে ধীরে বেড়েছে এর ব্যাপ্তি।

রোজাদারদের ইফতার করানোর জন্য আলাদাভাবে তৈরি করা হয় বিশাল প্যান্ডেল দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এসে প্রতিদিন একসাথে বসে ইফতার করে প্রায় ৫ হাজারের বেশি রোজাদার। এখানে ১০ হাজার মানুষের ইফতারের আয়োজন থাকলেও ৫ হাজার মানুষের বসিয়ে ইফতার করানো হয় এবং বাকি ৫ হাজার ইফতার জেলার বিভিন্ন মসজিদ, এতিমখানায় পাঠানো হয়।
ইফতারের আইটেমগুলো প্যান্ডেলের পাশেই তৈরি বা রান্না হয়। ইফতার তৈরি করতে ভোর ৫ টা থেকে কাজ শুরু করে প্রায় ৪০-৫০ জন মানুষ চলতে থাকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত। এরপর ইফতার সামগ্রী পরিবেশন ও বিতরণের জন্য কাজ করে এলাকার প্রায় সাড়ে আড়াই শতাধিক স্বেচ্ছাসেবক। আসরের নামাজের পরপরই সেচ্ছাসেবকদের মাধ্যমে ইফতারি প্লেটে বন্টন ও লাইনে সাজানোর কাজ শুরু হয়।

প্রতিদিন ইফতারের তালিকায় থাকে ফিরনি, ছোলা ভুনা, কলা, চিড়া, খেঁজুর, সিংড়া ও ডিম। সেচ্ছাসেবক তারেক আহসান বলেন, আমার এখানে প্রতিদিন ২৫০-৩০০ সেচ্ছাসেবী ৪ টি দলে বিভাক্ত হয়ে কাজ করি। আমাদের খুব ভালো লাগে প্রতিদিন একসাথে ৫-৭ হাজার রোজাদারদের খেদমত করতে পেরে সিংড়া তৈরির বাবুচী ফরহাদ হোসেন বলেন, আমরা প্রতিদিন ভোর ৫টা থেকে রান্নার কাজ শুরু করি। শেষ হতে বেলা ৫টা বেজে যায়। এখানে আমরা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার সাথে সিংড়া, ছোলা, ফিরনি তৈরি করি।ইফতার করতে আসা তানজির কচি বলেন, লোক মুখে শুনে এসেছি প্রতি বছর নলতা আহ্ছানিয়া মিশনে হাজার হাজার মানুষ একসঙ্গে ইফতার করে, কিন্তু কখনও আসার সুযোগ হয়নি। এ বছর আসতে পেরে নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে হচ্ছে।জাহিদ হাসান বলেন, ছোটবেলা থেকেই আমি এখানে ইফতার করতে আসি। একসাথে সকলে মিলে ইফতারি করতে খুব ভাল লাগে। আমি এই উপজেলার সন্তান হিসেবে এই ইফতার মাহফিলের আয়োজন নিয়ে গর্ববোধ করি।

নলতা কেন্দ্রীয় আহ্ছানিয়া মিশনের সাবেক সাধারন সম্পাদক ও আজীবন সদস্য মো. এনামুল হক খোকন জানান, খান বাহাদুরের জীবদ্দশায় এখানে ইফতার চালু হয়। সেটা ১৯৩৫ সাল নলতায় প্রতিষ্ঠা করেন আহ্ছানিয়া মিশন। সেই সময় থেকে নলতার আশেপাশের সকলের বাড়িতে রমজান মাসে রান্না করা খাবার এখানে নিয়ে এসে একসাথে বসে ইফতার করতেন। সেখান থেকে ধীরে ধীরে এই ইফতার মাহফিল চালু হয়। দিন দিন বাড়তে থাকে এর পরিধি। বর্তমানে বাড়তে বাড়তে ৮-১০ হাজারে দাঁড়িয়েছে। করোনার আগে দৈনিক ১০ হাজার মানুষের জন্য ইফতার তৈরি করা হতো কিন্তু করোনার ২ বছর বন্ধ থাকার পর আবারো শুরু করেছি বর্তমানে ৫-৭ হাজার মানুষের ইফতার তৈরি করা হচ্ছে রোজা যত বাড়তে থাকবে মানুষের সমাগম বাড়বে। খানবাহাদুর আহছানউল্লার অনুসারীরা শুধু বাংলাদেশ নয় ভারত,পাকিস্তানসহ বিভিন্ন দেশ থেকে এখানে আসে ইফতার করতে। এবং একসাথে মাগরিবের জামাত আদায় করে ধর্মপ্রান মুসলমানরা।###