নির্বাচনের আগে ইশতেহার ঘোষণায় প্রতিফলন ঘটে রাজনৈতিক দলের আদর্শ ও লক্ষ্যের। আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইতোমধ্যেই ইশতেহার ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত ৩৯টি রাজনৈতিক দল। সব দলই আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে, কেউ জোটগতভাবে আবার কেউ এককভাবে। সে হিসাবে সব রাজনৈতিক দল নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছে। আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, সিপিবি, ওয়ার্কার্স পার্টি ও জাসদ তাদের নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছে বা তারা জনগণের সঙ্গে ওয়াদা করেছে। এবারে যেহেতু বেশির ভাগ রাজনৈতিকগুলো দুই জোটে বিভক্ত, সেহেতু দুই বড় জোটে ঘোষিত ইশতেহারের প্রতি জনগণের দৃষ্টি ছিল বেশি। যদিও বিগত শাসনামলে দেওয়া ইশতেহার কোন দল কত শতাংশ বাস্তবায়ন হয়েছে সে খতিয়ান দেয়নি।
উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়ে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে ২১ দফা বিশেষ অঙ্গীকার হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। ঐক্যফ্রন্ট ১৯ দফা অঙ্গীকারসংবলিত ইশতেহারে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য আনা এবং পর পর দুই মেয়াদের বেশি প্রধানমন্ত্রী না থাকার বিধান চালু করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তবে বেশ কিছু বিষয়ে মিল রয়েছে দুই জোটের ইশতেহারে। যেমন; প্রবৃদ্ধি, ব্যাংক-বিমার উন্নয়ন, নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি ইত্যাদি। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলেছে দুই জোট। ভিন্ন জোট ও দলের ইশতেহারের বিষয়গুলোর ভিন্নতা থাকলেও সবারই লক্ষ্য এ দেশ ও দশের কল্যাণে কাজ করা। দেশের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেওয়া।
অতীতের নির্বাচনগুলোয় যত ইশতেহার দেওয়া হয়েছে, ক্ষমতায় যাওয়ার পর সেগুলোর বাস্তবায়ন খুব একটা দেখা যায়নি। বরং সরকার পরিচালনায় ইশতেহার থেকে অনেক দূরে সরে যেতেও দেখা গেছে রাজনৈতিক দলগুলোকে। বিষয়টি মোটেও সুখকর নয়। আগামী দিনে যাতে ক্ষমতাসীন দল তাদের অঙ্গীকার থেকে সরে না আসে সে প্রত্যাশাই করছে জনগণ। কারণ তারা কাগুজে ইশতেহারে বিশ্বাসী নয়, বাস্তবায়ন বিশ্বাসী।
সামগ্রিকভাবে এবারের নির্বাচনটি আর দশটা নির্বাচনের মতো গতানুগতিক নয়। স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্ণ হতে যাচ্ছে। এবার যে জোট নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠন করবে, সে সরকারই স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন করবে। ৫০ বছর আগে স্বাধীনতা সংগ্রামে জয়ী হওয়ার ৫০ বছর পরে এসে আমাদের সামগ্রিক অর্জনটা কী এবং আগামীর পথ কীভাবে চলবে-সেই দিক নির্দেশনার প্রতিফলন চায় আপামর জনগণ।
নির্বাচন পরবর্তী সময়ে ক্ষমতাসীন দলের কাছে ইশতেহারের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে বাস্তবায়ন করাটাই মূল চ্যালেঞ্জ হলেও সদিচ্ছা ও আন্তরিকতার মাধ্যমে তা অবশ্যই বাস্তবায়নযোগ্য। সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে যে দলই ক্ষমতায় আসুক, যে দলই সরকার গঠন করুক, আন্তরিকতা ও দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়ে দেশ পরিচালনা করবে এবং জনকল্যাণমুখী রাষ্ট্র উপহার দেবে-সেটা জনগণের প্রত্যাশিত চাওয়া। জনগণ বিশ্বাস করেন, ঘোষণাকৃত ইশতেহার অনুযায়ি কাজ করলে আমাদের দেশ অনেক এগিয়ে যাবে, লাখ লাখ বেকারের কষ্ট লাঘব হবে, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পাবে এবং বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হবে। ইশতেহার বাস্তবায়ন না করলে ক্ষমতাসীন দলের বিরুদ্ধে সংবিধানে শাস্তির বিধান না থাকলেও জনগণ চান, নৈতিকতার দিক থেকে হলেও এবারের ইশতেহার যেন আগামী ক্ষমতাসীন দল বা জোটের কাছে কাগুজে ইশতেহারে পরিণত না হয়।
© ২০২৩ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | কর্পোরেট সংবাদ সম্পাদক - মোঃ মিজানুর রহমান । উপদেষ্টা সম্পাদক- জেসমিন আক্তার, এফসিএস ই-মেইলঃ corporatesangbad@gmail.com । ফোনঃ ০২২২-৩৩৫৪১২৫ । মোবাইলঃ ০১৭১১০৭৬৮১৫ অফিসঃ ৫৫/বি, নোয়াখালী টাওয়ার, ১১ তলা, সুইট ১১-এফ, পুরানা পল্টন, ঢাকা ১০০০ |
কাগুজে ইশতেহারে নয়, বাস্তবায়নে বিশ্বাসী জনগণ https://corporatesangbad.com/209202/ |