আ.লীগ ক্ষমতাকে জনগণের সেবা করার সুযোগ হিসেবে দেখে : প্রধানমন্ত্রী

Posted on March 23, 2023

কর্পোরেট সংবাদ ডেস্ক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তাঁর সরকার ক্ষমতাকে জনগণের সেবা করার সুযোগ হিসেবে দেখে। তিনি ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত, সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে তাঁর অটল অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা ক্ষমতাকে জনগণের সেবা করার সুযোগ হিসেবে দেখি। অনেক বাধা-বিপত্তি মোকাবিলা করে ২০০৮ সালের সাধারণ নির্বাচনে জয়লাভ করে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকায় দেশের উন্নয়ন করা সম্ভব হয়েছে।’

বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে জাতীয় পর্যায়ে নিজ নিজ ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ নয় বিশিষ্ট ব্যক্তি ও একটি প্রতিষ্ঠানকে সর্বোচ্চ জাতীয় বেসামরিক পুরস্কার ‘স্বাধীনতা পুরস্কার-২০২৩’ তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনক ও তাঁর পরিবারের অধিকাংশ সদস্যকে হত্যার পর গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় বারবার বাধাগ্রস্ত হয় এবং স্থিতিশীলতার অভাবের কারণে বাংলাদেশ এর আগে খুব একটা অগ্রগতি দেখতে পায়নি।

দেশের সার্বিক উন্নয়নে তাঁর সরকারের সময়োপযোগী ও সুপরিকল্পিত পদক্ষেপের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দিয়ে সরকার প্রধান বলেন, বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা অর্জন করেছে কারণ, আমরা কখনো এডহক ভিত্তিতে কোন পরিকল্পনা নেই নি।

তিনি বলেন, ‘আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা অক্ষুন্ন রেখে এগিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছি। সুনির্দিষ্ট ও দূরদর্শী পরিকল্পনা নিয়ে আমরা সবকিছু করেছি। আমরা কোন এডহক ভিত্তিতে কিছুই করিনি। পরিকল্পনার ক্ষেত্রে আমরা সবসময় দেশের জনগণের কল্যাণকে প্রাধান্য দিই।’

স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্তরা হলেন, মুক্তিযুদ্ধ ক্যাটাগরিতে বীর মুক্তিযোদ্ধা কর্নেল (অব.) শামসুল আলম, প্রয়াত লেফটেন্যান্ট এজি মোহাম্মদ খুরশীদ (মরণোত্তর), শহীদ খাজা নিজামউদ্দিন ভূঁইয়া (মরণোত্তর) এবং মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী (মায়া) বীর বিক্রম।

‘সাহিত্য’ ক্যাটাগরিতে প্রয়াত ড. মোহাম্মদ মাইনুদ্দিন আহমেদ (সেলিম আল দীন) (মরণোত্তর) এবং ‘সাংস্কৃতিক’ এবং ‘ক্রীড়া’ ক্যাটাগরিতে যথাক্রমে পুরস্কার পেয়েছেন পবিত্র মোহন দে এবং এএসএম রকিবুল হাসান। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর ‘সমাজ সেবা/জনসেবা’ বিভাগে এবং ‘গবেষণা ও প্রশিক্ষণ’ ক্যাটাগরিতে বেগম নাদিরা জাহান (সুরমা জাহিদ) এবং ড. ফেরদৌসী কাদরী পুরস্কার পেয়েছেন।

এর আগে ৯ মার্চ স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্তদের নাম ঘোষণা করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। প্রত্যেক পুরস্কার প্রাপ্তরা প্রত্যেকে একটি করে স্বর্ণপদক, একটি সার্টিফিকেট এবং সম্মানী চেক পেয়েছেন।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন এবং পুরস্কার প্রাপ্তদের সংক্ষিপ্ত জীবনবৃত্তান্ত তুলে ধরেন।
পুরস্কার প্রাপ্তদের মধ্যে ড. ফেরদৌসী কাদরী অনুষ্ঠানে তার নিজস্ব অনুভূতি ব্যক্ত করেন।

শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার বাংলাদেশকে একটি উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে পরিণত করার লক্ষে ‘রূপকল্প-২০২১’ বাস্তবায়নে প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০১০-২১ ও পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। তিনি আরো বলেন, উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা লাভের পর তাঁর সরকার এখন ‘রূপকল্প ২০৪১’ বাস্তবায়নের মাধ্যমে ২০৪১ সালের মধ্যে দেশকে একটি উন্নত, সমৃদ্ধ ও ‘স্মার্ট বাংলাদেশে’ পরিণত করতে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এছাড়াও তাঁর সরকার একটি দীর্ঘ মেয়াদী ‘ডেল্টা প্ল্যান-২১০০’ গ্রহণ করেছে, যাতে প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম অন্যের ওপর নির্ভর না করে বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে উন্নত ও সম্মানজনক জীবন কাটাতে পারে।

সরকার প্রধান আরো বলেন, ‘আমরা খেলাধুলা, সংস্কৃতি, সাহিত্য, অর্থনীতি এবং অন্যান্যে প্রতিটি ক্ষেত্রে এগিয়ে যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সবকিছু করছি।’

শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার দারিদ্র্য ৪০ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশে নামিয়ে এনেছে ও মাথাপিছু আয় বাড়িয়েছে। তিনি আরো বলেন, আমরা সম্ভবত একটি বিশ্লেষণের পর আপনাকে দারিদ্র্য হ্রাস সম্পর্কে কিছু সুসংবাদ দিব।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ দিয়েছে এবং প্রত্যেক গৃহহীন ও ভূমিহীন মানুষকে বিনামূল্যে বাড়ি দিচ্ছে। জনগণের দোরগোড়ায় সঠিক শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিচ্ছে এবং প্রতিটি খাতে অগ্রগতির লক্ষ্যে গবেষণাকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে- যার মধ্যে কৃষি, স্বাস্থ্য বিজ্ঞান ও বিজ্ঞান অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

দরিদ্রদের জন্য খাদ্য সহায়তা কর্মসূচি সম্পর্কে তিনি বলেন, সরকার পারিবারিক কার্ডের মাধ্যমে এক কোটি মানুষকে প্রতি কেজি ৩০ টাকা ভর্তুকি দিয়ে চাল দিচ্ছে ও অন্য ৫০ লাখ মানুষকে ১৫ টাকা কেজি দরে চাল দেয়া হচ্ছে। শেখ হাসিনা বলেন, সরকার রমজান মাসে আরও ৫০ লাখ মানুষকে (প্রতি কেজি ১৫ টাকায়) চাল দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যাতে মানুষ কষ্ট না পায়।
তিনি আরো বলেন, চাল দেয়ার পাশাপাশি রমজান মাসে (দরিদ্রদের জন্য ভর্তুকি মূল্যে) ডাল, ভোজ্যতেল, চিনি ও ছোলাসহ আরও কিছু নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহ করার পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে।

সরকার প্রধান বলেন, ‘আমরা সম্ভাব্য সব ব্যবস্থা নিচ্ছি- যাতে রমজানে কাউকে খাবারের জন্য কষ্ট করতে না হয়।’ শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে দারিদ্র্য ও ক্ষুধা, বৈষম্য ও নিপীড়নমুক্ত একটি দেশ বিনির্মাণে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে সবকিছুই করেছে। জাতির পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়নে দু:স্থ মানুষকে একটি মর্যাদাপূর্ণ ও সুন্দর জীবন দিতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সরকার।

তিনি আরো বলেন, বঙ্গবন্ধু যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি দেশকে মাত্র তিন বছর সাত মাসের মধ্যে স্বল্পোন্নত দেশে পরিণত করেছিলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ হবে তলাবিহীন ঝুড়ি-মুক্তিযুদ্ধকে সমর্থন করেনি এমন অনেক দেশের এমন ধারণাকে জাতির পিতা মিথ্যা প্রমাণ করেন।

শেখ হাসিনা আরো বলেন, যখন দেশি-বিদেশী স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি বুঝতে পারল যে, বাংলাদেশকে আর দমিয়ে রাখা যাবে না, তখন তারা ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট বাংলাদেশের জাতির পিতাকে হত্যা করল।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর বাংলাদেশের অগ্রগতি থেমে যায়, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধ্বংস ও ইতিহাসকে বিকৃত করা হয়।’ সূত্র-বাসস।

আরও পড়ুন:

টেকসই পানি ব্যবস্থাপনার জন্য আন্তর্জাতিক অর্থায়নের আহ্বান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর

জাতিসংঘে পানি সম্মেলনের সহ-সভাপতি নির্বাচিত হয়েছে বাংলাদেশ

বাংলাদেশকে বিমান চলাচল কেন্দ্র করতে রোডম্যাপ জরুরি: প্রধানমন্ত্রী