সিএস প্রফেশনে আইসিএসবি বাংলাদেশের একমাত্র রিকোগনাইজড প্রতিষ্ঠান: এনামুল হক

Posted on December 10, 2018

মাহমুদুন্নবী জ্যোতি: সম্প্রতি ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড সেক্রেটারিজ অব বাংলাদেশ (আইসিএসবি) এর ৭ম কনভোকেশনে যে ৯১ জন সিএস সার্টিফিকেট অর্জন করেছেন, কর্পোরেট সংবাদ তাঁদেরকে নিয়ে ধারাবাহিকভাবে প্রতিবেদন প্রকাশ করে আসছে। তারই ধারাবাহিকতায় কর্পোরেট সংবাদের আজকের অতিথি মোঃ এনামুল হক এসিএস।

মোঃ এনামুল হক এসিএস এর জন্ম ১৯৮৩ সালের ০২ জানুয়ারি পটুয়াখালিতে। তাঁর পিতার নাম সাঈদ আহম্দে মৃধা এবং মাতা আনোয়ারা বেগম। তিনি ২০১০ সালে নাসরিন আক্তার শিমু’র সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। এনামুল-শিমু দম্পতির একমাত্র পুত্র সন্তান সাদমান এনাম ফাতিন।

শিক্ষাগত জীবনে তিনি ১৯৯৮ সালে তেগাছিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও ২০০০ সালে মোজাহার উদ্দিন বিশ্বাস কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। পরবর্তীতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন সরকারি ব্রজমোহন কলেজ (বিএম কলেজ) থেকে ইংরেজি বিভাগে অনার্স এবং ঢাকা কলেজ থেকে মাস্টার্স ডিগ্রী করেন।

২০০৭ সালে ঢাকার একটি স্কুলে শিক্ষকতার দিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন এনামুল হক। পরবর্তীতে একটি কলেজে ইংরেজি বিষয়ের শিক্ষকতা করেন। ২০১০ সালে তিনি শিক্ষকতা পেশা ছেড়ে শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড এ ট্রেনি অফিসার হিসাবে যোগদান করেন। যোগদানের কিছুদিন পর ব্যাংকের প্রধান কার্যালায়ের বোর্ড সেক্রেটারিয়েট পদে পদোন্নতি পান। পরবর্তীতে সিনিয়র অফিসার ও এসিস্ট্যান্ট এক্সিকিউটিভ অফিসার হিসাবে পদোন্নতি পেয়ে বর্তমানে এসিস্ট্যান্ট এক্সিকিউটিভ অফিসার হিসাবে বোর্ড সেক্রেটারিয়েট এ কর্মরত আছেন।

আইসিএসবি থেকে প্রাপ্ত সনদ কর্মজীবনে কতটা ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে-এমন প্রশ্নের জবাবে এনামুল বলেন, যে কোন প্রফেশনাল ডিগ্রী একজন ব্যক্তির কর্মজীবনে ইতিবাচক প্রভাব বয়ে আনে, আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দেয় এবং সর্বোপরি তাকে প্রফেশনাল হতে সহায়তা করে। আমার ব্যাংকিং ক্যারিয়ার শুরু হয়েছিল বোর্ড সেক্রেটারিয়েট-এ যোগদানের মধ্য দিয়ে। বাস্তব অভিজ্ঞতা এবং প্রফেশনাল নলেজ এই দুয়ের সমন্বয়ে আমি আমার কর্মস্থলে সুশাসন প্রতিষ্ঠাসহ অন্যান্য বিষয়ে ভুমিকা রাখতে সক্ষম হব বলে মনে করি।

আইসিএসবিতে অধ্যায়নরত অবস্থায় কোন বিষয়টিকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছিলেন-জানতে চাইলে তিনি বলেন, নিয়মিত ক্লাসে উপস্থিত থাকাটাকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। এছাড়া সহপাঠীদের নিয়ে বিভিন্ন বিষয়ে গ্রুপ স্টাডি করে বিষয়ভিত্তিক জ্ঞান অজর্নের চেষ্টা করেছি। পরীক্ষার জন্য ভাল প্রস্তুতি নেয়ার ক্ষেত্রে দুটোই আমাকে সহায়তা করেছে।

কর্পোরেট সেক্টরে আইসিএসবি’র ভূমিকা আপনি কীভাবে মূল্যায়ন করেন-প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বর্তমানে দেশের আর্থিক খাতে যে সকল অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা চলছে তা রোধ করে আর্থিক খাতকে শক্তিশালী করতে হলে কর্পোরেট সেক্টরে সুশাসন প্রতিষ্ঠার কোন বিকল্প নেই। আর এই সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সবচেয়ে জোরালো ভুমিকা রয়েছে একজন দক্ষ কোম্পানি সচিবের। আইসিএসবি বাংলাদেশের একমাত্র প্রতিষ্ঠান যেটি কোয়ালিফাইড চাটার্ড সেক্রেটারি তৈরির মাধ্যমে কর্পোরেট সেক্টরে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় অব্যাহতভাবে ভুমিকা পালন করে আসছে।

আইসিএসবি’র সবচেয়ে সফল দিক বিষয়ে এনামুল বলেন, আইসিএসবি বাংলাদেশের একমাত্র রিকোগনাইজড প্রতিষ্ঠান, যারা চাটার্ড সেক্রেটারি ডিগ্রী প্রদান করছে। এখান থেকে শিক্ষা লাভ করে আসিএসবি’র মেম্বারগণ দেশি-বিদেশি বিভিন্ন কোম্পানিতে কোম্পানি সেক্রেটারি হিসাবে সফলতার সাথে দায়িত্ব পালন করছেন এবং কোম্পানির উন্নয়ন ও কমপ্লায়েন্স ইস্যুতে গুরুত্বপূর্ন ভুমিকা পালন করছেন। তাছাড়া, সিপিডি প্রোগ্রামের মাধ্যমে আইসিএসবি’র সদস্যগণকে কোম্পানি আইন, ডিএসই ও বিএসইসি এর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আপডেটেড রাখার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।

সিএস কোর্স করার সময় আইসিএসবি থেকে কোন প্রকার তিক্ত অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হয়নি বলে জানান এনামুল। আইসিএসবি’র সিলেবাস বিষয়ে তাঁর অভিমত, প্রতিষ্ঠানটির সিলেবাস আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন। একজন ব্যক্তিকে দক্ষ কোম্পানি সচিব তৈরিতে যে সকল বিষয়ে সম্যক ধারনা থাকা আবশ্যক সেসব বিষয়গুলোর উপর যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে সিলেবাস প্রণয়ন করেছে। সময়ের প্রয়োজনে ও পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে হয়তো আইসিএসবি’র সিলেবাস পরিবর্তনের প্রয়োজন হতে পারে। তবে যে সকল বিষয় একজন কোম্পানি সচিবের কাজের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত নয় সে সকল বিষয়গুলোতে অযথা গুরুত্ব দেয়ার প্রয়োজন আছে বলে মনে করেন না এনামুল।

ক্যারিয়ার গড়তে আইসিএসবি’র গুরুত্ব তুলে ধরে বর্তমান প্রজন্মের উদ্দেশ্যে এনামুল হক বলেন, কর্রোপেট সেক্টরে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা বর্তমান সময়ের অন্যতম আলোচিত একটি বিষয়। একটি কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানে সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য যার ভূমিকা সবচেয়ে বেশি তিনি হচ্ছেন কোম্পানি সচিব। সুতরাং, সুশাসন প্রতিষ্ঠার তাগিদ যত বেশি হবে একজন দক্ষ চার্টার্ড সেক্রেটারির প্রয়োজনীয়তা তত বেশি অনুভূত হবে। তাছাড়া, কোম্পানি আইনের প্রয়োজনীয় সংশোধনের মাধ্যমে কোম্পানি সচিব হওয়ার জন্য সিএস ডিগ্রী এবং পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির জন্য সেক্রেটারিয়াল অডিট বাধ্যতামূলক হলে সি এস প্রফেশনের গুরুত্ব আরো অনেকগুণ বেড়ে যাবে। সে ক্ষেত্রে বর্তমান প্রজন্ম চার্টার্ড সেক্রেটারি’র মাধ্যমে নিজেদের ক্যারিয়ার গড়তে পারেন। এছাড়া মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা, আর্থিক ব্যবস্থাপনা, ইন্টারনাল কন্ট্রোল এন্ড কমপ্লায়েন্স ইত্যাদি পেশায় যারা কাজ করতে আগ্রহী তাদের জন্য প্রফেশনাল ডিগ্রী হিসাবে চার্টার্ড সেক্রেটারি ডিগ্রী অনেক বেশি সাহায্য করবে। সুতরাং, নতুন প্রজন্মকে আমি অবশ্যই সিএস ডিগ্রী অর্জন করে কর্পোরেট সুশাসনে ভুমিকা রাখার আহবান জানাব।

এনামুল হকের প্রিয় শখ বই পড়া ও ভ্রমণ। আমেরিকান কবি রবার্ট ফ্রস্ট এর গ্রামীণ জীবন নিয়ে লেখা কবিতাগুলো পাঠে মুগ্ধ হন তিনি। দেশের নানা জায়গা তিনি ঘুরে বেড়িয়েছেন।

এনামুল হক নিজের অর্জিত জ্ঞান, অভিজ্ঞতা ও শ্রম দিয়ে কর্পোরেট সেক্টরে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় ভুমিকা রাখার সুপ্ত বাসনায় সাজিয়েছে রেখেছেন ভবিষ্যত পরিকল্পনা।

আরো পড়ুন: কর্পোরেট সেক্টরের স্পেশালাইজড প্রতিষ্ঠান ‘আইসিএসবি’: আব্দুল আলীম
আইসিএসবি’র মুল লক্ষ্য হল দক্ষ চাটার্ড সেক্রেটারি তৈরি করা: সাহিনুর কবির