নিজস্ব প্রতিবেদক : প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০৪১ অনুযায়ী বাংলাদেশ সরকার কর জিডিপি রেশিও ২১.৯% উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেছে। যা উন্নত দেশের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ২০২৬ সালের মধ্যে কর জিডিপি অনুপাত ৭.৮% থেকে ৯.৫%-এ উন্নীত করার লক্ষ্যে ২.৩৪ লক্ষ কোটি টাকা অতিরিক্ত রাজস্ব আদায়ের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে, যদিও এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন কঠিন তথাপি, অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আহরণ ব্যতিত সরকারের অন্য কোন বিকল্প থাকবেনা। জাতীয় বাজেট ২০২৩-২৪ প্রাক্কালে দি ইনষ্টিটিউট অব চার্টার্ড একাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশ (আইসিএবি)-’র বাজেট সম্পর্কিত প্রস্তাবনা জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)-এ পেশ পরবর্তী আইসিএবি’র প্রেস কনফারেন্স- এ ইনস্টিটিউটের নেতৃবৃন্দ এসব কথা সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন।
আইসিএবি’র প্রধান নিবার্হী কর্মকর্তা শুভাশীষ বসু প্রেস কনফারেন্স এ স্বাগত বক্তব্য রাখেন। প্রস্তাবনা সারসংক্ষেপ তুলে ধরেন আইসিএবি’র প্রেসিডেন্ট মোঃ মনিরুজ্জামান এফসিএ। প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে আইসিইবি’র বাজেট প্রস্তাবনার বিশদ বিবরণ তুলে ধরেন আইসিএবি’র সদস্য স্নেহাশীষ বড়ুয়া এফসিএ, অংশীদার, স্নেহাশীষ মাহমুদ এন্ড কোং, চার্টার্ড একাউন্ট্যান্টস। প্রেস কনফারেন্স এ প্রশ্ন উত্তর সেশন সঞ্চালনা করেন আইসিএবি’র কাউন্সিল মেম্বার ও সাবেক প্রেসিডেন্ট এবং টেক্সেশন এন্ড কর্পোরেট ল’জ কিমিটির চেয়ারম্যান মোঃ হুমায়ুন কবির এফসিএ।
এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন আইসিএবি’র ভাইস প্রেসিডেন্ট এমবিএম লুৎফুল হাদী এফসিএ, কাউন্সিল মেম্বার এনকেএ মবিন এফসিএ, মোহাম্মদ ফোরকান উদ্দীণ এফসিএ, মারিয়া হাওলাদার এফসিএ এবং চীফ অপারেটিং অফিসার মাহাবুব আহমেদ সিদ্দিকী এফসিএ।
আইসিএবি’র আয়কর সংক্রান্ত জাতীয় বাজেট প্রস্তাবনাসমূহ ছিল রাজস্ব আয় বৃদ্ধি ও আয়কর অধ্যাদেশ সংক্রান্ত; আইনের বৈপরিত্য ও ফাঁক-ফোকর হ্রাসকরণ সংক্রান্ত ; এবং আইনের প্রয়োগে স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণ সংক্রান্ত; মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন; কাস্টমস আইন; এবং তদসংক্রান্ত বিধিমালা সম্পর্কিত।
করের আওতা বৃদ্ধিকরণ: বাংলাদেশে যেসমস্ত বৈশ্বিক কোম্পানী রয়েছে, সেগুলোর ডিজিটাল সার্ভিসের জন্য ডিএসটি প্রবিশন চালু করা হচ্ছে। এতদ্ব ব্যতিত, পিএসআর চালুর উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে আইসিএবি।
ডিজিটালাইজেশন ও ইন্টিগ্রেশন: কর ব্যবস্থাকে ডিজিটাল পদ্ধতিতে রূপান্তর করা এবং বিভিন্ন প্রাসঙ্গিক বিভাগগুলোকে সংযোগ, কর বিভাগের একটি বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধন করবে। রিটার্ন দাখিল থেকে শুরু করে এর প্রাপ্তি স্বীকারে উৎসে কর কর্তনের তথ্য, অগ্রিম কর কর্তনের তথ্য এবং অপরিশোধিত করের বিষয়ে তথ্য প্রদান করবে।
উৎস কর কর্তনের যৌক্তিকীকরণ: বর্তমানে কর্পোরেট করের হার ২৭.৫% এ অবনমিত করা হয়েছে। কিন্তু বিভিন্ন ব্যবসার ক্ষেত্রে যেমন কাঁচামাল আমদানী, পণ্য সরবরাহ ফি পরিশোধ, যা অনিবাসী করদাতাদের দেওয়া হয়, এগুলোর ক্ষেত্রে উচ্চহারে উৎসে কর কর্তন করা হয়। সুতরাং এ সমস্ত ক্ষেত্রে উৎসে কর কর্তনের যৌক্তিকীকরণ করতে হবে।
কর সংক্রান্ত ব্যয়কে নিয়ন্ত্রণ: প্রত্যেক দেশের সরকার প্রিন্সিপাল অব ইকোনমি নামক একটি পলিসি গ্রহণ করে থাকে, এর অর্থ হলো কর আদায়ের বিপরীতে উচ্চ খরচ পরিহার করা। সুতরাং আমাদের দেশেও কর বা VAT আদায়ের বিপরীতে অযাচিত খরচ পরিহার করে কর রাজস্বকে বাড়াতে হবে।
মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন, ২০১২ এবং মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক বিধিমালা, ২০১৬ সম্পর্কিত আইসিএবির উল্লেখযোগ্য প্রস্তাবনাসমূহঃ
সামগ্রীক ডিজিটাল পদ্ধতি অনুসরণ: আংশিক ডিজিটাল অনুসরণ না করে সামগ্রিক ডিজিটাল পদ্ধতি অনুরণ করলে মূল্য সংযোজন কর আদায়ের অংক অনেক বৃদ্ধি পাবে। বর্তমানে শুধুমাত্র নিবন্ধন ও রিটার্ন জমা দেওয়া অনলাইনে সম্ভব হচ্ছে। এই প্রক্রিয়া অন্যান্য ধাপগুলোতে ডিজিটাল পদ্ধতিতে রুপান্তর করার প্রয়াস নেওয়া দরকার।
নির্ধারিত সীমার অতিরিক্ত টার্নওভার অর্জনকারী একক বা যৌথ মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানসমূহকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে LTU তালিকাভুক্ত করা এবং সকল বৃহৎ কর অঞ্চলে এলটিইউ তে স্থাপন করতে হবে।
উৎপাদন ব্যয় ও হয়রানি হ্রাসের লক্ষ্যে উৎপাদক বা সেবাপ্রদানকারী হিসাবে মূল্য সংযোজন কর/ভ্যাটে নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানের ব্যবহার্য কাঁচামাল/উপকরণের ক্ষেত্রে অগ্রিম কর রহিত করা উচিত বলে মনে করে আইসিএবি ।
কাস্টমস আইন ১৯৬৯ সম্পর্কিত আইসিএবির উল্লেখযোগ্য প্রস্তাবনাসমূহঃ রপ্তানির বৈচিত্র্যকরণ এর সুবিধার্থে স্পেশাল বন্ড সুবিধা, প্রচ্ছন্ন রপ্তানিকারকগনকে প্রদত্ত বন্ড সুবিধার বাহিরে অবস্থিত রপ্তানিকারকদের জন্য কেন্দ্রীয় বন্ড ব্যবস্থা প্রবর্তন করা যায়। উক্ত বন্ডকে এর ব্যবহারকারী শিল্প, বন্ড কমিশনারেট এর সিস্টেমের সাথে সংযুক্ত রাখতে হবে। এতে বর্তমানে অকার্যকর ডিউটি ড্রব্যাক এর হয়রানি হতে রপ্তানিকারকগণ রেহাই পাবে।
মূল্যায়ন: শুল্ক নির্ধারণ আইনের সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ এবং মুদ্রা বিনিময় হার অনুসরণ করে আমরা সঠিকভাবে শুল্ক নির্ধারণ করতে পারি। বৈশ্বিক বাজার বিভিন্ন দ্রব্যাদির সকল তথ্য প্রদান করে থাকে যা সংগ্রহ করে এনবিআর-এ আমদানীকৃত দ্রব্য এবং রপ্তানী পণ্যের ডাটাবেস তৈরি করা যেতে পারে। ঐ সমস্ত ডাটাবেস থেকে সংশ্লিষ্ট শুল্ক হার এবং মূল্য সম্পর্কে একটি প্রাক্কলন করা সম্ভব। শুল্কনীতি, শুল্কের হার ঘন ঘন পরিবর্তিত হওয়া বাঞ্ছনীয় নয়। দীর্ঘমেয়াদি নীতি প্রবর্তিত হলে আমদানিকারক forecasting এর ক্ষেত্রে সুবিধা পাবেন এবং দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে।
এই ডিভিএস পদ্ধতি প্রবর্তনের পরিপ্রেক্ষিতে আর্থিক বিবরণী তৈরি করার ক্ষেত্রে একটি শৃংঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এক্ষেত্রে এনবিআর এর উচিত হবে কর বিভাগ, মূল্য সংযোজন কর বিভাগ এবং শুল্ক বিভাগের কর্মকর্তারা ফল প্রসূভাবে দক্ষতার সাথে এই পদ্ধতি অনসরণ করছে কিনা তা তদারকি করা। এর ফলে কর জিডিপি’র অনুপাত অনেকগুণ বৃদ্ধিপাবে বলে মনে করছে আইসিএবি ।
© ২০২৩ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | কর্পোরেট সংবাদ সম্পাদক - মোঃ মিজানুর রহমান । উপদেষ্টা সম্পাদক- জেসমিন আক্তার, এফসিএস ই-মেইলঃ corporatesangbad@gmail.com । ফোনঃ ০২২২-৩৩৫৪১২৫ । মোবাইলঃ ০১৭১১০৭৬৮১৫ অফিসঃ ৫৫/বি, নোয়াখালী টাওয়ার, ১১ তলা, সুইট ১১-এফ, পুরানা পল্টন, ঢাকা ১০০০ |
আসন্ন জাতীয় বাজেট সম্পর্কিত প্রস্তাবনা নিয়ে প্রেস কনফারেন্স-এ আইসিএবি’র নেতৃবৃন্দ https://corporatesangbad.com/20528/ |