ব্যাংকের টাকা গ্রাহকের পকেটে

Posted on October 17, 2018

দেশে ক্রমাগতভাবে বাড়ছে খেলাপি ঋণের পরিমাণ। হাজার হাজার কোটি ঋণ দিয়ে তা আদায় করতে ব্যর্থ হচ্ছে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। আর ঋণগ্রহীতারা কিছু অসাধু ব্যাংক কর্মকর্তার যোগসাজশে ঋণ পরিশোধ করা থেকে মুক্তি পেয়ে যাচ্ছে। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ঋণ আদায়ে ব্যর্থ হয়ে অবশেষে “অবলোপন” করে নিজেদের দায়মুক্ত রাখছে। এর ফলে ব্যাংকের টাকা চলে যাচ্ছে গ্রাহকের পকেটে, লাভবান হচ্ছে অসাধু ব্যবসায়ী ও ব্যাংক কর্মকর্তা এবং ক্ষতির মুখে পড়ছে ব্যাংক, সেই সাথে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতি।

সর্বশেষ খবর অনুযায়ি জানা গেছে, দেশের ব্যাংকসমূহ থেকে ৩৭ হাজার ২৬০ কোটি টাকা অবলোপন দেখানো হয়েছে। এই বিশাল অংকের টাকা অবলোপনের বেশির ভাগ ঘটনা ঘটেছে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকসমূহে। বেসরকারি ব্যাংকগুলোর অবলোপনের পরিমাণ কম হলেও তারাও সরকারি ব্যাংকের পদাঙ্ক অনুসরণ করছে বলে মনে হয়।

যে কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ দিতে হলে যেভাবে ঋণগ্রহীতার যোগ্যতা জানা ও জামানত নেয়া প্রয়োজন, ব্যাংকগুলো তা সঠিকভাবে অনুসরণ করছে না। এক্ষেত্রে অসাধু ব্যাংক কর্মকর্তার যোগসাজশে ঋণ গ্রহীতা স্বল্প জামানতে ঋণ নিচ্ছে বিশাল অংকের টাকা। পরবর্তী ঋণ আদায় করতে না পেরে ব্যাংক আইনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বড়জোর জামানতটা ব্যাংকের সম্পত্তি বলে ঘোষণা করতে পারে, যার মূল্য প্রদানকৃত ঋণের চেয়ে অনেকগুণ কম।

লক্ষনীয় বিষয় হলো, এই খেলাপি ঋণ ও অবলোপনের পরিমাণ বৃদ্ধি পেলেও এখনো অনিয়মতান্ত্রিকভাবে ঋণ দেয়ার প্রবণতা কমেনি। বরং বেড়েছে বলে প্রতীয়মান হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে সততার সাথে যথাযথ নিয়ম অনুসরণ না করাই ঋণ খেলাপি ও অবলোপনের মূল কারণ।

ঋণগ্রহীতার পরিচয় এবং তার শিল্প ও ব্যবসা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া, ঋণের বিপরীতে পর্যাপ্ত জামানত রাখা, যথাসময়ে ঋণ শোধের কিস্তি আদায়ের ব্যবস্থা করে তবেই ঋণ দেয়ার নিয়ম। কিন্তু এসব ক্ষেত্রে ব্যাংকের কিছু অসাধু কর্মকর্তা নিজেদের অনৈতিক স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে যথাযথ নিয়মকানুন না মেনে ভুয়া প্রতিষ্ঠানের নামেও ঋণ প্রদান করে থাকেন। প্রয়োজনীয় কাগজ হিসেবে যা জমা দেয়া হয়, তাও অনেক ক্ষেত্রে ভুয়া প্রমাণিত হয়।

ব্যাংকগুলোর বর্তমান অবস্থায় মনে হয়, অনিয়মতান্ত্রিকভাবে ঋণ প্রদান করে তা আদায়ে ব্যর্থ হয়ে অবলোপন হিসেবে গণ্য করা যেন ব্যাংকের নিয়মে পরিনত হয়েছে। অথচ একটি ব্যাংকের মূল চালিকা শক্তি হলো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সঞ্চিত অর্থ। সেই অর্থ অন্যকে ঋণ দিয়ে তা অবলোপন হওয়া মানে ব্যাংকের প্রশাসনিক দুর্বলতাকেই বোঝায়।

এভাবে চলতে থাকলে, বর্তমান ঋণগ্রহীতারাও ঋণ পরিশোধে অনাগ্রহী হয়ে উঠতে পারে বলে অনেকেই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। সেক্ষেত্রে আমাদের সবচেয়ে সম্ভাবনাময় খাত ব্যাংক সম্পর্কে গ্রাহকদের নেতিবাচক ধারণার সৃষ্টি হবে এবং ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়তে পারে আমাদের দেশের অর্থনীতি। সেজন্য “অতীত” বিবেচনায় “বর্তমানে” সজাগ না হলে “ভবিষ্যত“ হয়ে উঠবে আরো কঠিন, অর্থনীতির চাকা হয়ে যেতে পারে শ্লথ।

আরো পড়ুন: মেধাস্বত্ব আইন রক্ষায় আইপিএবি ও আইসিএসবি’র ভূমিকা