কারাগারে চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি

Posted on March 18, 2023

নিজস্ব প্রতিবেদক : পুলিশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার অভিযোগে দায়ের হওয়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহিকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

শনিবার (১৮ মার্চ) দুপুরে গাজীপুর আদালতে নিয়ে মাহিয়া মাহির সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। আদালতের বিচারক রিমান্ড মঞ্জুর না করে তাকে গাজীপুর জেলা কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

আদালত পুলিশের পরিদর্শক শাহাদাত হোসেন জানান, মাহিয়া মাহিকে বেলা দেড়টার দিকে কারাগারে পাঠানো হয়। সেখানে গাজীপুর মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মো. ইকবাল হোসেন মাহিকে গাজীপুর জেলা কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

সৌদি আরবে পবিত্র ওমরাহ হজ পালনের জন্য গিয়েছিলেন মাহিয়া মাহি ও তার স্বামী রকিব সরকার। কিন্তু মাহি দেশে ফিরলেও ফেরেননি রকিব। তিনি গাজীপুর মহানগরীর বাসন থানা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।

এদিকে আদালত থেকে বেরিয়ে মাহি সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, ‘জাজ আমার সঙ্গে কোনো কথা বলেন নাই। একটা কথাও বলেন নাই। তিনি জাস্ট চেয়ারে বসেছেন আর উঠেছেন। এক সেকেন্ডের মধ্যে কোর্ট কীভাবে শেষ হয়ে যায়?’

এর আগে দুপুর ১২টার দিকে মাহিকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গ্রেপ্তার করে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ। গ্রেপ্তারের পর আদালতে পাঠানো হলে সেখানে পুলিশের পক্ষ থেকে সাতদিনের রিমান্ড চাওয়া হয়। আদালত রিমান্ড মঞ্জুর না করে মাহিকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

গ্রেফতার পরবর্তী এক সংবাদ সম্মেলনে গাজীপুর মহানগর পুলিশ কমিশনার মোল্লা নজরুল ইসলাম জানিয়েছেন, মাহি দেশের ফেরার পর বিমানবন্দর থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মাহির স্বামী রকিব সরকার এখনও পলাতক।

উল্লেখ্য, অভিনেত্রী মাহিয়া মাহী ও তার স্বামী রকিব সরকারের বিরুদ্ধে গাজীপুরের বাসন থানায় দুটি মামলা হয়েছে। পুলিশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেছে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ।

শুক্রবার (১৭ মার্চ) রাতে বাসন থানার এসআই রোকন মিয়া বাদী হয়ে এ মামলা করেন।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মোঃ দেলোয়ার হোসেন ।

তিনি জানান, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে চিত্রনায়িকা মাহি মিথ্যা বলে মানুষের সহানুভূতি নেওয়ার চেষ্টা করেছেন। পুলিশের বিরুদ্ধে ঢালাও অভিযোগ করেছেন। ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। এ বিষয়ে তদন্ত চলছে।

এর আগে, শুক্রবার ভোরে স্বামীর সঙ্গে ওমরাহ পালন করতে যাওয়া চিত্রনায়িকা মাহী সৌদি আরব থেকে ফেসবুক লাইভে রকিবের গাড়ির শো-রুম ভাঙচুর ও হামলার অভিযোগ করেন।

এ সময় তিনি দাবি করেন, ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজের পূর্ব পাশে ‘সনিরাজ কার প্যালেস’ নামে তার স্বামীর একটি গাড়ির শোরুম রয়েছে। সেই শোরুমে দুর্বৃত্তরা হামলা চালিয়েছে। হামলাকারীরা তার শোরুমের গেট ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে। তারা শোরুমের বিভিন্ন আসবাব, দরজা-জানালার কাঁচ, টেবিল-চেয়ার ভাঙচুর করেছে। শোরুমের সাইনবোর্ডও খুলে ফেলেছে। ইসমাইল হোসেন ওরফে লাদেন ও মামুন সরকারের নেতৃত্বে এ হামলা চালানো হয় বলে অভিযোগ করেন মাহি।

ফেসবুকে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের বিরুদ্ধে ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার জন্য অভিযোগে মাহিয়া মাহী ও তার স্বামী রকিব সরকারের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করে পুলিশ।

এর আগে, মাহি ও রকিব ফেসবুকে লাইভে অভিযোগ করেন গাজীপুর মেট্টোপলিটন পুলিশের কমিশানার মোল্যা নজরুল ইসলাম দেড় কোটি টাকার বিনিময়ে তাদের গাড়ির শো রুম, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান প্রতিপক্ষকে দখল করে দিবেন চুক্তি করেছেন। সেই অনুযায়ী শুক্রবার ভোর ৫টায় সন্ত্রাসীরা সেখানে হামলা করেছে।

শোরুমের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জানান, শুক্রবার ভোর ৫টার দিকে সনিরাজ কার প্যালেস গেট ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে বিভিন্ন আসবাব, দরজা জানালার কাঁচ এবং টেবিল চেয়ার ভাঙচুর ও শো রুমের সাইনবোর্ড খুলে নেওয়া হয়। শো রুমের অফিসকক্ষ তছনছ করে এবং টাকা পয়সা লুট করে নেয়। খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে ছুটে গেলে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়।

এদিকে নায়িকার অভিযোগের বিষয়ে জিএমপি কমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলামের ভাষ্য, এই অভিযোগ ডাহা মিথ্যা। দুপক্ষের দ্বন্দ্বে পুলিশকে জড়ানোর কিছু নেই। একটি শ্রেণি দীর্ঘদিন ধরেই এই এলাকায় চাঁদাবাজি, দখলদার ও মাদক ব্যবসায় জড়িত। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে জিএমপি। আর তাই তারা একজন সেলিব্রেটিকে পুঁজি করে আমাদের বিরুদ্ধে সম্পূর্ণ বানোয়াট অভিযোগ এনেছে। এ ঘটনায় আমি কিংবা গাজীপুর মহানগর পুলিশের সংশ্লিষ্টতার কোনো সুযোগ নেই।

তিনি আরও বলেন, রকিব সরকার জমি দখল করে নিয়েছেন- এই মর্মে প্রতিপক্ষ গ্রুপ মামলার আবেদন করেছেন। তবে আমি জিএমপিতে যোগদানের পর কোনো পক্ষই জমির বিষয়টি আমার সামনে আনেনি। ব্যক্তিগতভাবে আমি তাদের চিনিও না। মাহির এই অভিযোগে আমি মর্মাহত।

জিএমপির বাসন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সানোয়ার জাহান বলেন, ৯৯৯-এ খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পুলিশ ছুটে যায়। সেখানে গিয়ে হামলাকারীদের কাউকে পাওয়া যায়নি। শো রুমের জায়গা নিয়ে মালিকানার দ্বন্দ্বে মারামারির ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে স্থানীয়রা। এ বিষয়ে অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মাহীর ফেসবুক লাইভের পর সংবাদ সম্মেলন করেন স্থানীয় বাসিন্দা ইসমাইল হোসেন। তিনি সংবাদ সম্মেলনে পাল্টা অভিযোগ করেন। এ বিষয়ে শুক্রবার রাতে ইসমাইল বাদী হয়ে বাসন থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন।