ব্যাংকিং সেবা পাচ্ছেন সুবিধাবঞ্চিত মানুষ: আরফান আলী

Posted on September 16, 2018

ব্যাংকের শাখা নেই এমন অঞ্চলের মানুষদের ব্যাংকিং সেবার আওতায় আনার প্রচেষ্টা হিসেবে যাত্রা শুরু করে এজেন্ট ব্যাংকিং। সর্বপ্রথম এটি শুরু করে ব্যাংক এশিয়া। এখন ১৭টি ব্যাংক এটি চালু করেছে। টাকা জমানো, উত্তোলন, ঋণ গ্রহণ, পরিশোধ, বিভিন্ন সেবার বিল পরিশোধ ইত্যাদি কাজ করা যাচ্ছে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে। ব্যাংক এশিয়ার যে কর্মকর্তার হাত ধরে সর্বপ্রথম এজেন্ট ব্যাংকিং শুরু হয় সেই আরফান আলী এখন ব্যাংকটির প্রেসিডেন্ট ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

অভিনব এই ব্যাংকিং সম্পর্কে তার মন্তব্য এটি ব্যাংক নয়, দেখতে ব্যাংকের মতো; এখানে গেলে গ্রাহকের অনুভবও ব্যাংকে যাওয়ার মতোই। এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের স্বরূপ ও সম্ভাবনা নিয়ে তিনি কথা বলেছেন একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকার সাথে। 

প্রশ্ন: এজেন্ট ব্যাংকিং শুরু সম্পর্কে আপনার অভিজ্ঞতা বলেন?
আরফান আলী: সেবাবঞ্চিত মানুষদের ব্যাংকিং সেবার আওতায় আনার জন্য আমরা সর্বপ্রথম ২০১৪ সালে এজেন্ট ব্যাংকিং চালু করি। শুরুতে এটি সম্পর্কে অনেকের নেতিবাচক ধারণা ছিল। স্বল্প আয়ের মানুষদের সেবা দিয়ে সেই মডেল টেকসই হবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ ছিল। কিন্তু এখন সেই সংকট নেই। ১৭টি ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং চালু করেছে। কোনো জিনিস শুরু করে সফল হলে যে আনন্দ পাওয়া যায় তা এখন পাচ্ছি।

প্রশ্ন: শুরুতে চ্যালেঞ্জগুলো কী ছিল?
আরফান আলী: আমরা যখন শুরু করি তখন দেশে এটি সম্পূর্ণ নতুন। সামনে কোনো মডেল ছিল না। অন্য দেশের সিস্টেম সম্পর্কে পড়াশোনা করে আমাদের দেশের জন্য মানানসই একটি মডেল দাঁড় করিয়েছি। শুরুতে সবচেয়ে বেশি সমস্যা ছিল গ্রাহকের আস্থা ও বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করা। আসলেই এজেন্টের পেছনে ব্যাংক আছে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ ছিল। সেটি দূর হয়েছে। সেই সময় নেটওয়ার্ক কানেকটিভিটির দুর্বলতা ছিল। তখন ২জি ছিল তাও আবার সব জায়গায় নেটওয়ার্ক ছিল না। এজেন্ট ব্যাংকিং পরিচালনা করা হয় মূল ব্যাংকিংয়ের সফটওয়্যার দিয়ে। অনেক সময় সিস্টেম কানেকটিভিটির কারণে কাজ করত না। সেই কানেকটিভিটির সমস্যা দূর হয়েছে। এগুলো এখন কেটে গেছে। দ্রæত এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা প্রসারিত হচ্ছে।

প্রশ্ন: বর্তমানে কী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হচ্ছে এবং সম্ভাবনাগুলো কী?
আরফান আলী: শুরু থেকে যেসব সংকট ছিল এখন সেটি নেই। এখন মূল চ্যালেঞ্জ বেগবান করা। কাক্সিক্ষত পর্যায়ে নিয়ে গিয়ে লাভবান হতে হবে। এজেন্টদের আন্তরিকতা প্রচেষ্টা বাড়াতে হবে। ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। অনেক ব্যাংক অতি অল্প বিনিয়োগ করছে।

আর সম্ভাবনা রয়েছে অনেক। যেখানে ব্যাংকের শাখা নেই সেখানে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের আউটলেট করা হচ্ছে। আমরা ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারকে ব্যবহার করছি। আঙুলের ছাপ দিয়ে মানুষ লেনদেন করতে পারছে। আগামীতে সরকার ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারগুলোকে আলাদা বাজেটের মাধ্যমে পরিচালিত করবে। এর মাধ্যমে সরকারের ৫০-৬০টি সেবা দেওয়া হবে। সেন্টারের চেয়ারম্যান, সদস্য ও অন্যান্য স্টাফকে বেতনভাতাদি প্রদান করা হবে। আর যেখানে সেবা সেখানে আর্থিক কর্মকান্ড হয়ে থাকে। সুতরাং এজেন্ট বুথগুলো গ্রামীণ অর্থনীতির বড় হাবে পরিণত হবে। এ ছাড়া এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে শেয়ার লেনদেনের জন্য বিও অ্যাকাউন্ট খোলা, ই-কমার্স লেনদেন, টেলিমেডিসিন ইত্যাদি করা সম্ভব।

প্রশ্ন: ঋণ প্রদান করা হচ্ছে কীভাবে?
আরফান আলী: চার বছর আগেই ঋণ কার্যক্রমসহ এজেন্ট ব্যাংকিং পরিচালনার জন্য আমরা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে আবেদন করি। তবে ঋণ প্রদান করতে সময় লেগেছে। এ জন্য সম্পূর্ণ অনলাইন সিস্টেম তৈরি করতে হয়েছে। এটি করতে সহায়তা করেছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক ডাটা সংস্থা ডিএফআইডি। অনলাইন সিস্টেম গড়ে তোলার জন্য সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যার তৈরি করে দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এ সিস্টেম ব্যবহার করে অনলাইনে ঋণ আবেদন গ্রহণ ও দেওয়া হচ্ছে।
গ্রাহকের বাড়িতে গিয়ে এজেন্ট অনলাইনে আবেদন করছেন। সেটি অনলাইনে যাচাই-বাছাই হচ্ছে। অনলাইনের ঋণ বিতরণ করা হচ্ছে। আবার সেভাবে ঋণের কিস্তি আদায় করা হচ্ছে। অর্থাৎ ডিজিটাল ঋণ প্রদান কাঠামোর মাধ্যমে ঋণসংক্রান্ত কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।

প্রশ্ন: এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে অর্থনীতি কীভাবে এগোবে?
আরফান আলী: এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের সবচেয়ে বড় সুফল হচ্ছে সেবা ছড়িয়ে দেওয়া। ব্যাংকের সেবা যত ছড়িয়ে পড়বে ঝুঁকি তত কমবে। একক গ্রাহককে বড় অংকের ঋণ দিলে পোর্টফোলিও ঝুঁকির মধ্যে পড়বে, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতেও প্রভাব পড়বে। এটি হলে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বাড়বে। গ্রামীণ অর্থনীতি সরাসরি প্রাতিষ্ঠানিক অর্থনীতির সঙ্গে যুক্ত হবে। এতে প্রবৃদ্ধি বাড়বে।

সৌজন্যে: দৈনিক আমাদের সময়