আজ জাতীয় শোক দিবস, বাঙালি জাতির জন্য কলঙ্কময় একটি বেদনাবহ দিন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি, সবর্কালের সবের্শ্রষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নৃশংসভাবে হত্যা করে এ দেশের বিপথগামী কিছু সেনা সদস্য। ঘাতকদের হাতে ওইদিন রেহাই পায়নি বঙ্গবন্ধুর শিশুপুত্র রাসেল কিংবা পুত্রবধূরাও। ঘনিষ্ঠজনসহ সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার ঘটনা শুধু ব্যক্তিকে হত্যাপ্রয়াস ছিল না, ছিল জাতির স্বাধীনতার শক্তিকে হত্যার অপচেষ্টা। বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সাবের্ভৗমত্ব এবং অস্তিত্বের শত্রুরা বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাধ্যমে প্রকারান্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতাকেই হত্যা করতে চেয়েছিল।
বঙ্গবন্ধুর জন্ম না হলে আমরা স্বাধীন সাবের্ভৗম বাংলাদেশ পেতাম না। জন্ম তার শুভক্ষণে শুভদিনে কিন্তু পরাধীনতার মধ্যে। দুই পবের্র পরাধীনতা ও শোষণ তাকে ভোগ করতে হয়েছে। প্রথমত ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শোষণ দ্বিতীয়ত পাকিস্তানি শোষণ-নিযার্তন, জেল-জুলুম-হুলিয়া আরও কত কী। কোনো কিছুই দমাতে পারেনি তাকে। এমনকি মৃত্যুও।
স্মরণে রাখতে হবে জীবিত বঙ্গবন্ধুর চেয়ে মৃত বঙ্গবন্ধু অনেক বেশি শক্তিশালী, চিরস্থায়ী ও চিরঅম্লান। প্রাতিষ্ঠানিক নামকরণ কিংবা ব্যাপক গবেষণার মাধ্যমে তাকে টিকিয়ে রাখার কোনো প্রয়োজন নেই। যতদিন বাংলাদেশ টিকে থাকবে ততদিন তার নাম-নিশানা কেউ মুছে ফেলতে পারবে না হাজার চেষ্টাতেও।
রাজনীতিতে দূরদশির্তা ও রাষ্ট্রনায়কোচিত গুণাবলির অধিকারী না হলে কেউ সফল রাজনীতিবিদ ও রাষ্ট্রনায়ক হতে পারেন না। এ ক্ষেত্রে শেখ মুজিবের ছিল বতর্মান ও ভবিষ্যৎ সম্পর্কের গভীর জ্ঞান। তিনি স্পষ্টতই বুঝতে পেরেছিলেন পাকিস্তানি সেনাবাহিনী হয়তো তাকে গ্রেপ্তার করবে। এ কারণেই জাতিকে প্রস্তুতি গ্রহণের জন্য তিনি বজ্রকণ্ঠে বলেন, আমি যদি হুকুম দিবার নাও পারি, যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে। প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুগর্ গড়ে তোলো।
বাংলার মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি আমরণ সংগ্রাম করে গেছেন। তিনি স্বপ্ন দেখতেন ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশের। অথচ স্বাধীনতার এত বছরেও তার স্বপ্নের বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলতে পারিনি। এর মূল কারণ রাজনৈতিক বিদ্বেষ ও দলীয় সংকীণর্তা ও হানাহানি।
মনে রাখতে হবে. শেখ মুজিব কেবল একটা নাম নয়, একটি প্রতিষ্ঠান। তাকে অন্য কোনো ব্যক্তির সঙ্গে তুলনা করা, কোনো দলের বিশেষ মানুষ বা নেতা ভাবা, তার নাম ভাঙিয়ে ব্যবসা করা অত্যন্ত গহির্ত অপরাধ।
এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, বঙ্গবন্ধুর জন্ম না হলে আমরা একটি স্বাধীন দেশ পেতাম না। কারণ বাঙালির স্বাধিকার ও স্বায়ত্তশাসন প্রশ্নে নেতৃত্ব দেয়ার মতো যোগ্য লোক পূবর্বাংলায় দ্বিতীয়জন ছিলেন না। আমাদের আজও পশ্চিম পাকিস্তানিদের গোলামি করতে হতো। আজ যে বাঙালিরা স্বাধীন দেশে রাষ্ট্রীয় উচ্চপদে আসীন আছেন, স্বাধীনভাবে কাজ করছেন, মুক্ত বাতাসে ইচ্ছামতো ঘুরে বেড়াচ্ছেন, এর কোনো সুযোগ ছিল না। দেশের যে বতর্মান সমস্যা-সঙ্কট তা নিতান্তই আমাদের, কারও চাপিয়ে দেয়া নয়। আমরা ইচ্ছা করলেই এই সমস্যা-সঙ্কট ও সীমাবদ্ধতা থেকে বেরিয়ে আসতে পারি। তবে পদে পদে জাতির জনককে নিয়ে বিভাজন ও বিতকের্র মাধ্যমে সম্ভব নয়। এখন প্রয়োজন জাতির পিতা প্রশ্নে ঐকমত্য।
আরো পড়ুন:
© ২০২৩ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | কর্পোরেট সংবাদ সম্পাদক - মোঃ মিজানুর রহমান । উপদেষ্টা সম্পাদক- জেসমিন আক্তার, এফসিএস ই-মেইলঃ corporatesangbad@gmail.com । ফোনঃ ০২২২-৩৩৫৪১২৫ । মোবাইলঃ ০১৭১১০৭৬৮১৫ অফিসঃ ৫৫/বি, নোয়াখালী টাওয়ার, ১১ তলা, সুইট ১১-এফ, পুরানা পল্টন, ঢাকা ১০০০ |
জাতির পিতার প্রশ্নে প্রয়োজন ঐকমত্য https://corporatesangbad.com/181045/ |