ওয়াজ মাহফিলে অন্যের জমিতে স্টল বানিয়ে ১৫ লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে মাজার কর্তৃপক্ষ

Posted on March 10, 2023

পটুয়াখালী প্রতিনিধি : পটুয়াখালী জেলার মির্জাগঞ্জ ইয়ার উদ্দিন খলিফা (রা:) এর দরবার শরীফ পটুয়াখালীসহ দেশে সকলের কাছে ধর্মীয় ও পূন্য স্থান হিসেবে সুপরিচিত। যে মাজারের রয়েছে অগনিত ভক্ত। সকলের কাছে এ মাজার ভক্তি ও শ্রদ্ধার জায়গা। এই পূন্য স্থানের বাৎসরিক ওয়াজ মাহফিলে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জমিতে স্টল ভাড়া দিয়ে জমির মালিকদের নাম মাত্র মূল্যের টাকা দিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ মাজার পরিচালনা কমিটির বিরুদ্ধে।

সূত্রে জানা যায়, দক্ষিনাঞ্চালের সুফি সাধকের এ মাজারটি প্রসিদ্ধ স্থান হিসেবে পরিচিত। মাজারটি ওয়াকফ এষ্টেট ধারা পরিচালিত হয়ে আসছে। রয়েছে পরিচলনা কমিটিও। পদাধিকার বলে কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক,তাঁর প্রতিনিধি হিসেবে মাজার দেখভাল করেন মির্জাগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার। এ মাজার অগনিত ভক্ত ও প্রতিদিন আগত দর্শনার্থী ও বিশিষ্ট ধনাঢ্য ব্যক্তিদের দানে পরিচালিত হয়। এছাড়া মাজারের নামে রয়েছে দেশের বিভিন্ন স্থানে দানের বাক্স, যেখান থেকে আয় হয় অসংখ্য টাকা। ৭ থেকে ৮ টি ব্যাংকে রয়েছে ১২ থেকে ১৪টি একাউন্ট। বিভিন্ন উৎস থেকে এতো আয়ের পরেও দরবার শরীফের বাৎসরিক দুইদিন ( ৯ ও ১০ মার্চ) ব্যাপী ওয়াজ মাহফিলে মাজার সংলগ্ন হিন্দু ধর্মাবলম্বী ও মুসলমানদের জায়গায় ছয় শতাধিক স্টল ভাড়া দিয়ে জমির প্রকৃত মালিকদের নাম মাত্র টাকা দিয়ে দরবার শরীফ পরিচালনা কমিটি প্রতিবছর হাতিয়ে নিচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা। এতে জমির মালিকরা প্রাপ্য অর্থ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। দরবার শরীফ পরিচালনা কমিটির এ রমরমা স্টল বানিজ্যের কাছে যেন জিম্মি সংখ্যালঘু জমির মালিকরা। মুখ খুললে তাদের উপর চলে শারীরিক ও মানষিক নির্যাতন।

এমনও অভিযোগ রয়েছে মাহফিলে স্টল বরাদ্দের আশ্বাস পেয়েও দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা দোকানিদের হতে হচ্ছে হয়রানির শিকার। কেউ কেউ দোকান বরাদ্দের টোকেন না পেয়ে ঘুরতে হচ্ছে দরবার শরীফ পরিচালনা কমিটির দ্বারে দ্বারে। ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা ভাড়ার স্টল নিতে হচ্ছে ৬ থেকে ৭ হাজার টাকায়। দরবার শরীফ পরিচালনা কমিটির দ্বায়িত্বরত হিসাব রক্ষক সোহাগ মল্লিকের সহায়তায় কিছু অসাধু ব্যক্তিদের কাছ থেকে তিনগুন টাকায় স্টল ভাড়া নিতে হয় দুর দুরান্ত থেকে আসা অস্থায়ী ব্যবসায়ীদের।

জমির মালিক রতন মালী বলেন, আমার জমিতে আমরা ষ্টল দিয়ে ভাড়া উত্তোলন করবো। তা না মাজার কমিটির লোকজন তারা ষ্টল দিয়ে ভাড়া তুলবেন আর আমাদের দিবেন নামে মূল্যে। এ কথা বললেই নানা ভাবে পুলিশ দিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার জমির মালিকদের হয়রানী ও মারধর করা হয়।

দরবার পরিচালনা কমিটির বিভিন্ন অনিয়ম ও কার্যকালাপের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মির্জাগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এ্যাড. আবুল বাসার নাসিরও। তিনি বলেন, আমাদের জমিতে এ মাজারটি অবস্থিত। মাজার কমিটি উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে ভুল বুঝিয়ে নিজেদের আখের গোছাতে ব্যস্ত থাকে। মাজারের আশেপাশের জমি সংখ্যালঘুদের বেশি। তাদের অভিযোগ জমির মালিক সঠিক মূল্য পায় না। আমার বোধগম্য হয় না যে মাজার কমিটি কোন আইনের বলে অন্যের জমি ভাড়া দিয়ে মাজার কমিটি নিচ্ছে। জমির মালিকদের প্রাপ্য বুঝিয়ে দেয়া হোক।

অন্যের জায়গা ভাড়া দিয়ে স্টল বানিজ্যের কথা জানতে চাইলে বক্তব্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন দরবার শরীফ পরিচালনা কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইয়েমা হাসান। তিনি কমিটির সেক্রেটারির কাছ থেকে সঠিক তথ্য নেওয়ার কথা বলেন।

মাজার কমিটি সেক্রেটারি মোঃ শহিদুল ইসলাম মল্লিক বলেন, আমাদের জমি লিচ নেয়া হয় দোকান বরাদ্ধের জন্য। দীর্ঘদিন ধরে এভাবে দোকান বরাদ্ধ দেওয়া হয়। বাক্তি মালিকানাধীন জমির মালিকদের মাহফিলের আগে মিটিং করা হয়। মাজার কমিটি দোকানদারদের কাছ থকে রিসিভের মাধ্যমে টাকা নেয়া হয় এবং উক্ত টাকা ব্যাংকে জমা দেয়া হয়। এখানে অনিয়মের কোন সুযোগ নেই। তাই দরবার শরীফের সুনাম ও আদব রক্ষার্থে পরিচালনা কমিটির অনিয়ম বন্ধের দাবী স্থানীয়দের।