৭ মাসে বাণিজ্য ঘাটতি এক লাখ ৪৩ হাজার কোটি টাকা

Posted on March 7, 2023

অর্থ-বাণিজ্য ডেস্ক : চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) দেশে বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৩৩৯ কোটি মার্কিন ডলার। যা বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ এক লাখ ৪৩ হাজার ১৬৬ কোটি টাকা। আমদানি ব্যয়ের চেয়ে রপ্তানি আয় কম হওয়ায় বড় অঙ্কের এ ঘাটতি দেখা দিয়েছে।

একই সময়ে বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যে ঘাটতিও ৫০৩ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে। যা দেশীয় মুদ্রায় প্রায় ৫২ হাজার ৮১৫ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মতে, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে মোট ৪ হাজার ৪০৩ কোটি ডলারের বিভিন্ন ধরনের পণ্য আমদানি হয়েছে দেশে। গত অর্থবছরের (প্রথম সাত মাস) একই সময়ের চেয়ে ৫.৬৬ শতাংশ কম আমদানি হয়েছে। গত ২০২১-২২ অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারি সময়ে ৪ হাজার ৬৬৭ কোটি ডলারের বিভিন্ন পণ্য আমদানি করেছিল বাংলাদেশ।

চলতি অর্থবছরের একই সময়ে আমদানির বিপরীতে দেশ থেকে পণ্য রপ্তানি হয়েছে ৩ হাজার ৬৪ কোটি ডলারের পণ্য। গত অর্থবছর একই সময়ে (জুলাই-জানুয়ারি সময়) ২ হাজার ৭৮৬ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছিল।

হিসাব বলছে, এক বছরের ব্যবধানে আমদানি বেড়েছে ৯.৯৮ শতাংশ। এতে রপ্তানির চেয়ে আমদানি বেশি হওয়ায় বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৩৩৯ কোটি ডলার। গত ডিসেম্বর শেষে বাণিজ্য ঘাটতি ছিল এক হাজার ২৩০ কোটি ডলার। হিসাব বলছে, এক মাসের ব্যবধানে (জানুয়ারি শেষে) বাণিজ্য ঘাটতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০৮ কোটি ডলারে।

সরকারের বৈদেশিক মুদ্রা আয়-ব্যয়ের হিসাবে ঘাটতি হওয়ায় এ খাতের ভারসাম্যে ব্যবধান তৈরি হয়েছে। ফলে ঘাটতিতে পড়েছে সরকারের বৈদেশিক মুদ্রার চলতি হিসাবেও। বাণিজ্য ঘাটতি অব্যাহত থাকলে সরকারকে ঋণ নিয়ে তা পূরণ করতে হয়। সে হিসাবে উন্নয়নশীল দেশের চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত থাকা ভালো। তবে দেশে কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ব্যালান্স এখন ঋণাত্মক।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের জানুয়ারি শেষে দেশে চলতি হিসাবের ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫০৩ কোটি ডলার। যা আগের অর্থবছরে একই সময়ে ছিল ১ হাজার ২৬ কোটি ডলার। সে হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে চলতি হিসাবের ঘাটতি কমেছে ৫১ শতাংশ।

আলোচিত জুলাই-জানুয়ারি সময়ে সেবা খাতের বাণিজ্য ঘাটতিও বেড়েছে। জানুয়ারি শেষে সেবা খাতে দেশ আয় করেছে ৫২৬ কোটি ডলার। একই সময়ে এ খাতে ব্যয় হয়েছে ৭৫০ কোটি ডলার। সে হিসাবে এ খাতে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ২২৪ কোটি ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ে ঘাটতি ছিল ২০২ কোটি ডলার।

একই সময়ে সামগ্রিক লেনদেনেও (ওভার অল ব্যাল্যান্স) ঘাটতিতে পড়েছে দেশ। জানুয়ারি শেষে সামগ্রিক লেনদেনের (ঋণাত্মক) পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭৩৯ কোটি ডলার, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ২০৫ কোটি ডলার। হিসাব বলছে, এক বছরের ব্যবধানে ঘাটতি বেড়েছে প্রায় ২৬০ শতাংশ।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিশ্ববাজারে পণ্যমূল্য বেড়ে গেছে। এতে রপ্তানি আয়ের তুলনায় আমদানি ব্যয় বেশি হচ্ছে। তাছাড়া প্রবাসী আয়ও আশানুরূপ আসছে না। এসব কারণে বহির্বিশ্বের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতিতে পড়েছে দেশ।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তাদের মতে, বাংলাদেশ ব্যাংকের এলসি খোলা নিয়ে নানা পদক্ষেপের কারণে বড় অঙ্কের বাণিজ্য ঘাটতি কিছুটা কমেছে। অপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানিতে কড়াকড়ি আরোপ করায় ধীরে ধীরে আমদানি ও রপ্তানির ব্যবধান কমে আসছে।

আলোচিত সময়ে বাংলাদেশে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) বেড়েছে। গত ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) ২৭৩ কোটি ডলারের এফডিআই পেয়েছিল দেশ। আর চলতি অর্থবছরের একই সময়ে সেটি বেড়ে ৩০৬ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে। হিসাব মতে, বছরের ব্যবধানে বিদেশি প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ বেড়েছে ১২.৩১ শতাংশ।

দেশের বিভিন্ন খাতে সরাসরি মোট বিদেশি বিনিয়োগ থেকে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান মুনাফার অর্থ নিয়ে যাওয়ার পর যেটা অবশিষ্ট থাকে সেটাই নিট এফডিআই। আলোচিত সময়ে নিট বিদেশি বিনিয়োগও বেড়েছে। এ সময়ে নিট বিনিয়োগ বেড়ে ১৩৪ কোটি ৩০ লাখ ডলারে দাঁড়িয়েছে। গত অর্থবছর একই সময়ে যা ছিল ১২৯ কোটি ডলার।