ফেসবুকে শেয়ার নিয়ে গুজব: হল্টেড মিজানকে ১ লাখ টাকা জরিমানা

Posted on February 28, 2023

নিজস্ব প্রতিবেদক : সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ারের মূল্যসহ অন্যান্য বিষয়ে পূর্বাভাস বা গুজব ছড়িয়ে বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে প্রতারণাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এরই ধরাবাহিকতায় ফেসবুকে ভবিষ্যৎ বাণী দিয়ে বিনিয়োগকারীদের বিভ্রান্ত করে প্রতারণা করার অভিযোগে মোহাম্মদ মিজানুর রহমান ওরফে হল্টেড মিজান নামে একজন ব্যক্তিকে এক লাখ টাকা জরিমানা করে কমিশন। বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে।

জানা গেছে, ২০২০ সালের ২ সেপ্টেম্বর বিএসইসির জারি করা আদেশ লঙ্ঘনের অভিযোগে মোহাম্মদ মিজানুর রহমানকে এক লাখ টাকা জরিমানা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

এদিকে মিজানুর রহমান বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার দর ভবিষ্যতে বাড়ার তথ্য দিয়ে বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বিভিন্ন তথ্য ছড়াতেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তিনি ছাড়াও অরো বেশ কিছু ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ভবিষ্যৎ বাণী দিয়ে বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগ রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধেও কমিশন কাজ করছে বলে জানা গেছে।

তথ্য মতে, গত বছরের আগস্টের শেষের দিকে মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ খতিয়ে দেখতে বিএসইসির অতিরিক্ত পরিচালক মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসাইন সাক্ষরিত এক আদেশে ২ সদস্যর একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স, ১৯৬৯ (১৮ নং আইন, ১৯৬৯) এর সেকশন ২০ এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে পুঁজিবাজার ও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে উল্লেখিত আদেশটি জারি করা হয়। উল্লিখিত আদেশটি অমান্য করলে অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে সিকিউরিটিজ আইন এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮ অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে বলে উল্লেখ করা হয়।

গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্যরা হলেন- বিএসইসির সহকারী পরিচালক মো. কামাল হোসাইন ও এইচ.এম সালেহ সাদমান। গঠিত কমিটিকে ১০ দিনের মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মিজানুর রহমান, আশরাফুল ইসলাম, শরিফুল ইসলাম, আয়মান নাহিয়ান কল্লোলসহ অন্যান্য গুজব রটনাকারীদের নিয়ে তদন্ত রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়। এরই ধরাবাহিকতায় গঠিত তদন্ত কমিটি মিজানুর রহমানের দুটি ফোন নাম্বার ও মেইল আইডি সনাক্ত করে। তা দিয়ে তার বিও হিসাব খুঁজে বের করা হয়। গুজব ছড়িয়ে বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্টের মাধ্যমে মিজানুর রহমান কি পরিমাণ লাভবান হয়েছেন, তা বের করা হয়। এরপর অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিয়েছে কমিশন।

এর আগে চলতি বছরের গত ১৭ মে ফেসবুক পেজের মাধ্যমে বিভিন্ন সময় পুঁজিবাজার নিয়ে গুজব সৃষ্টিকারী মো. মাহবুবুর রহমানকে ব্রাক্ষ্মণবাড়ীয়া থেকে গ্রেফতার করে ডিবি পুলিশের একটি দল। বিএসইসর দায়ের করা সাধারণ ডায়েরির ভিত্তিতে তাকে গ্রেফতার করা হয়। তার আগে ২০২১ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর বিএসইসির অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ৩১টি গুজব সৃষ্টিকারী ফেসবুক আইডি নিষ্ক্রিয় করা হয়। পর্যায়ক্রমে গুজব সৃষ্টিকারী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের সব আইডির বিরুদ্ধে প্রযোজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানা যায়।

প্রসঙ্গত, বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, হোয়াটস অ্যাপসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ারবাজার নিয়ে গুজব রটনাকারীদের চিহ্নিত করতে ‘সোস্যাল মিডিয়া মনিটরিং সেল’ গঠন করে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। বিএসইসি’র মার্কেট সার্ভিল্যান্স অ্যান্ড ইন্টেলিজেন্স ডিপার্টমেন্টের (এমএসআইডি) কমিশনার অধ্যাপক ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদের তত্ত্বাবধানে এ ‘সোস্যাল মিডিয়া মনিটরিং সেল’ এর কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এছাড়া পুঁজিবাজারে গুজব নিযন্ত্রণে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিযন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) ও বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের ডিজিটাল সিকিউরিটি এজেন্সির সঙ্গে সমন্বিতভাবে কাজ করে আসছে বিএসইসি।

এদিকে রোববার (২৬ ফেব্রুয়ারি) পুঁজিবাজারে চলমান অস্থিরতা নিরসনের লক্ষ্যে ১২টি প্রস্তাব বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদ। এর মধ্যে পুঁজিবাজারে কারসাজি রোধে বিএসইসি’র নেতৃত্বে ডিজিএফআই, এনএসআই এবং বাংলাদেশ পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের (এসবি) কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে একটি পৃথক ইউনিট গঠন করার দাবি জানিয়েছেন বিনিয়োগকারীরা।