সন্তানের আত্মহত্যায় অনেকাংশে দায়ি অভিভাবক!

Posted on May 8, 2018
আমাদের দেশের মানুষের মাঝে আত্মহত্যার প্রবণতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষ করে কিশোর-কিশোরী কিংবা শিক্ষার্থীদের মাঝে এ আত্মঘাতি প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে আশঙ্কাজনক হারে। জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সবশেষ জরিপ অনুযায়ি, দেশে প্রতি বছর গড়ে ১০ হাজার মানুষ এবং প্রতিদিন গড়ে প্রায় ২৭ জন আত্মহত্যা করে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কিশোরী ও শিক্ষার্থী।

মাধ্যমিক বা উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ফল প্রকাশের অকৃতকার্য বা কাঙ্খিত ফল না পাওয়া শিক্ষার্থীদের মাঝে আত্মহত্যার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। এবারও এসএসসি, দাখিল ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর অকৃতকার্য হওয়ায় দেশের বিভিন্ন স্থানে ৭ কিশোরীর আত্মহত্যার খবর পাওয়া গেছে। আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে ১ কিশোরসহ ১২ জন।

আমাদের সমাজের অনেক অভিভাবক সন্তানদের পরীক্ষার ফলাফল নিয়ে উচ্চাভিলাশী হয়ে থাকেন। তাঁদের কাছে সন্তানের পড়াশোনা এখন অস্থির সামাজিক প্রতিযোগিতায় রূপ নিয়েছে। সন্তানের পরীক্ষার ফলকে তাঁরা সামাজিক সম্মান রক্ষার হাতিয়ার হিসেবে দেখে থাকেন। অনেকে আবার সন্তানদের ভবিষ্যত নিয়ে অতিমাত্রায় উদ্বেগ আর উৎকন্ঠায় থাকেন, যার প্রভাব পড়ে সন্তানের ওপর। এর ফলে আশানুরূপ ফল করতে না পেরে শিক্ষার্থীরা আত্মহত্যার মতো জঘন্য পথ বেছে নিচ্ছে।

বয়:সন্ধিকালের এই সময় কিশোর কিশোরীদের প্রতিনিয়ত পরীক্ষার প্রতিযোগিতায় ছেড়ে দেয়ার ফলে তাদের মধ্যে হতাশা অবসাদের মতো জটিল মানসিক টানাপোড়েন শুরু হয়। এ অবস্থায় তাদের শুধু পাঠ্যবইয়ের চাপে না রেখে সৃজনশীল কাজের প্রতি উৎসাহিত করা জরুরি।  ভালো ফল দিয়ে নয় বরং মানবিকতার চর্চায় যাঁরা আজ সাফল্যের শিখরে পৌঁছেছেন সেসব ব্যক্তিত্বের উদাহরণ দিয়ে সন্তানদের অনুপ্রেরণা দেয়া প্রয়োজন।

অভিভাবকদের দায়িত্ব হবে, সন্তানের পরীক্ষার ফল খারাপ হলে তাঁর ওপর কোন প্রকার রাগ না করে ভবিষ্যতের ব্যাপার উৎসাহী করা। মনে রাখতে হবে, ভালো ফলাফলের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো ভালো মানুষ হয়ে গড়ে উঠা। আর আগামী দিনের ভবিষ্যতে আজকের সন্তানদের ভালো মানুষ হিসেবে গড়ার ক্ষেত্রে সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করতে হবে অভিভাবকদের।

মনে রাখতে হবে, পরীক্ষার ফলাফলের বাইরে খেলাধুলা, গান, আবৃতি, অভিনয়, ছবি আঁকাসহ সৃষ্টিশীল কাজে প্রতিষ্ঠা পাওয়া লোকের সংখ্যা কম নয়। আত্মহত্যার প্রবণতা রোধে অভিভাবককে যেমন সচেতন হতে হবে তেমনি গণমাধ্যমে ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকেও পালন করতে হবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। আমাদের দেশ থেকে আর যাতে কোন কিশোর-কিশোরী আত্মহত্যার মতো পথে নিজেকে নিয়ে না যায়-সেটাই আমাদের প্রত্যাশা।

আরও পড়তে পারেন: অশান্ত পার্বত্য অঞ্চলের রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণ