লেকে ভাসমান শহরের মকআপ উন্মোচন হুলহুমালে

Posted on February 27, 2023

ওমর ফারুক খোন্দকার,অনিক (মালদ্বীপ) প্রতিনিধি: বিশ্বে অন্যতম সৌন্দর্যের দেশগুলোর মধ্যে বহুদ্বীপের সমন্বয়ে গঠিত মালদ্বীপ। এর রয়েছে সৌন্দর্যপূর্ণ অনেকগুলো দ্বীপ। মালদ্বীপ বিশ্বের সবচেয়ে নিচু দেশগুলোর মধ্যে একটি। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে মালদ্বীপের গড় উচ্চতা এক থেকে দেড় মিটার মাত্র। ১২০০টি দ্বীপ নিয়ে এই দ্বীপরাষ্ট্র গঠিত। ভারত মহাসাগরের বুকে প্রায় ৯০ হাজার বর্গকিলোমিটার জুড়ে মালদ্বীপের অবস্থান। মজার বিষয় হলো সমগ্র মালদ্বীপের আয়তন এর ৯৯ ভাগই জলরাশি।এদেশের স্থলভাগের পরিমাণ মাত্র ১৯৮ বর্গ কিলোমিটার। ধারণা করা হচ্ছে, চলতি শতাব্দীর শেষ নাগাদ বিশ্বে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা এক মিটার বাড়বে। ফলে ডুবে যেতে পারে প্রায় পুরো মালদ্বীপ। এই কথা মাথায় রেখে নতুন পরিকল্পনা হিসেবে ভাসমান শহর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দ্বীপ দেশটির সরকার। ভাসমান শহরের লেকটি রাজধানী মালের পার্শ্ববর্তী হুলেমালে শহরে করা হবে, শহরটিতে যেতে সময় লাগে রাজধানী মালে থেকে ১৫ মিনিট প্রায়। শহরটির কাজ পুরোপুরি শেষ হলে অন্তত ২০ থেকে ২৫ হাজার মানুষ বসবাস করতে পারবেন।

স্থানীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য মতে, শহরটির নকশা করা হয়েছে মানুষের মস্তিষ্কের আকৃতিতে। শহরটিতে নানা রকম অবকাঠামোগত ব্যবস্থা আছে।২০২৪ সালে ভাসমান শহরটি খুলে দেয়া হবে। তবে এ মাসেই শহরটির প্রাথমিক অংশ উন্মোচন করা হবে। পুরো শহরের নির্মাণকাজ শেষ হবে ২০২৭ সালে। বিদেশি আবাসন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ডাচ ডকল্যান্ডস ও মালদ্বীপ সরকারের যৌথ উদ্যোগে শহরটি নির্মিত হচ্ছে। শহরটিকে নানা রং দিয়ে সাজানো হচ্ছে। দেখলে যেন মনে হবে রংধনুর সাত রং দিয়ে সাজানো। এর প্রত্যেকটি বাড়ি বিভিন্ন রং দিয়ে আবৃত করা। ফলে শহরটি দেখে মন ভরে ওঠবে স্থানীয়দের পাশাপাশি আগন্তুক পর্যটকদেরও। ভাসমান শহরটিতে বসবাসকারী মানুষ যাতায়াতের জন্য ছোট ছোট নৌকা ব্যবহার করতে পারবেন। শহরটি মূলত নৌকা চলাচলের উপযোগী করে তৈরি করা হয়েছে। এছাড়া শহরটির বালিভরা রাস্তাগুলো সাজানো হয়েছে মানুষের চলাচলের জন্য। এসব রাস্তায় বাসিন্দারা হাঁটতে এবং সাইকেল ও ইলেকট্রিক স্কুটার চালাতে পারবে।

সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ার মতো জলজ্যান্ত বর্তমান সমস্যার সমাধান হিসেবে শহরটি তৈরি করা হচ্ছে। এখানে খেয়ালি কোনো পরীক্ষা বা সুদূর ভবিষ্যতের উপযোগী নকশা তৈরি করা হয়নি। সমুদ্রের উচ্চতা বাড়ায় শহরটি যাতে ডুবে না যায় সেই দিকটি মাথায় রেখেই শহরটির পরিকল্পনা করা হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের মতো বিষয়গুলো মাথায় রেখে শহরটির নকশা করা হয়েছে। শহরটি ভাসমান অবস্থায় থাকবে। সমুদ্রের উচ্চতা বাড়লে, শহরটিরও উচ্চতা বাড়বে। এটি পাঁচ লাখ মালদ্বীপবাসীকে নতুন আশা দেখাচ্ছে বলে মন্তব্য শহরটির নকশাকারী প্রতিষ্ঠানের কোয়েন ওলথুইসের। তিনি বলেন, মালদ্বীপবাসী এখন জলবায়ু উদ্বাস্তু থেকে জলবায়ু উদ্ভাবক হয়ে ওঠবে।

নতুন ভাসমান শহরটি পরিবেশবান্ধব, এমনভাবে তৈরি করা হচ্ছে যাতে ৫,০০০ প্লট ইস্যু করা যেতে পারে এবং এতে পর্যটকদের জন্যও কিছু জায়গা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। মস্তিষ্ক আকৃতির প্রবালের নকশায় তৈরি ভাসমান শহরটিতে থাকবে একটি ইয়ট মেরিনা, দুটি পাঁচ তারকা রিসোর্ট এবং স্থানীয়দের জন্য ছোট পিকনিক আইল্যান্ড এবং হাসপাতাল, স্কুল, শপিংমল, কাউন্সিল, সরকারি অফিসও নির্মাণ করা হবে। এছাড়াও শহরটিতে পানি ও বর্জ নিষ্কাশনের জন্য সুন্দর ব্যবস্থা করা হয়েছে। শহরের বাসিন্দারা এসব ব্যবহার করবে সানন্দে।