স্বাগত বাংলা নববর্ষ-১৪২৫

Posted on April 13, 2018

সময়ের চক্রে আবারও ফিরে এলো ১লা বৈশাখ। শুভ বাংলা নববর্ষ ১৪২৫। নতুন দিন, নতুন বছরের যাত্রা শুরু হলো। পেছনের সব গ্লানি মুছে সামনে এগিয়ে যাওয়ার দিন আজ। আর এরই মাধ্যমে কালের আবর্তে হারিয়ে গেল আরও একটি বছর। প্রাণে প্রাণে হিল্লোল জাগাতে, ঐকতান রচনা করতে আর মানুষে মানুষে বিভেদ ঘুচাতে নববর্ষ নবচেতনায় স্নাত করে সবাইকে। কাকডাকা ভোরে পূর্ব দিগন্তে বছরের প্রথম সূর্যোদয়ের অপেক্ষায় বাঙালি চিত্ত অধীর হয়। নতুনকে বরণ করে নিতে নানা আয়োজন চলে গ্রাম-গ্রামান্তরে, শহরে, নগরে। ‘তোরা সব জয়ধ্বনি কর।/ঐ নূতনের কেতন ওড়ে/ কাল-বোশেখির ঝড়।’জাতীয় কবির এ শব্দকলির মতোই বাঙালি প্রাণ নতুন চেতনায় জেগে উঠে বৈশাখে।

কৃষির সঙ্গে বাংলা নববর্ষের ঘনিষ্ঠতা জড়িয়ে আছে এ সন প্রবর্তনের সূচনা থেকেই। মোগল সম্রাট আকবর প্রচলন করেন বাংলা সনের। এর আগে মোগল বাদশাহরা রাজকাজে ও নথিপত্রে ব্যবহার করতেন হিজরি সন। হিজরি চান্দ্র বছর, যা ন্যূনধিক ৩৫৪ দিনে পূর্ণ হয়। কিন্তু সৌর বছর পূর্ণ হয় ন্যূনধিক ৩৬৫ দিনে। বছরে প্রায় ১১ দিনের পার্থক্য হওয়ায় হিজরি সন আবর্তিত হয় এবং ৩৩ বছরের মাথায় সৌর বছরের তুলনায় এক বছর বৃদ্ধি পায়।

কৃষকের কাছ থেকে রাজস্ব আদায় করতে হলে সারা দেশে একটি অভিন্ন সৌর বছরের প্রয়োজন। আর এ ধারণা থেকেই সম্রাট আকবর ১৫৮৪ খ্রিষ্টাব্দের ১০ বা ১১ই মার্চ থেকে বাংলা সনের প্রবর্তন করেন। তা কার্যকর হয় তার সিংহাসন আরোহণের সময় অর্থাৎ ১৫৫৬ খ্রিষ্টাব্দের ৫ই নভেম্বর থেকে। আকবরের নবরত্ন সভার আমির ফতেউল্লাহ খান সিরাজী বাংলা সন প্রবর্তনের কাজটি সম্পন্ন করেন। প্রথমে এর নাম ছিল ফসলি সন। পরে তা বঙ্গাব্দ নামে পরিচিত হয়। বৈশাখ নামটি নেয়া হয়েছিল নক্ষত্র বিশাখার নাম থেকে। আর সেই থেকে ক্রমান্বয়ে নববর্ষের ব্যাপ্তি আরও বিস্তৃত হয়েছে। এখন এটি রূপান্তর হয়েছে বাঙালি লোকজ উৎসবে।

নতুন বছরকে বাঙালির আবহমান সংস্কৃতির নানা আয়োজনে রঙে-বর্ণে, উৎসবে দেশজুড়ে বরণ করা হবে। আবহমান এ বাংলার দিক-দিগন্ত ঔজ্জ্বল্যে ভরিয়ে দিতে; আকাশ-বাতাস ও প্রকৃতিকে রাড়িয়ে তুলতে আবার এসেছে বৈশাখ।

বর্ষবরণের উৎসবের আমেজে মুখরিত হবে বাংলার চারদিক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউট থেকে সকালে বের হবে সবচেয়ে বড় ও ঐতিহ্যবাহী শোভাযাত্রা। সবচেয়ে বড় বর্ষবরণ উৎসবটি অনুষ্ঠিত হবে রাজধানীর ঐতিহাসিক রমনার বটমূলে। এটি প্রায় ৫০ বছর ধরে আয়োজন করে আসছে দেশের শীর্ষস্থানীয় সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠান ছায়ানট। সূর্য্যেদয়ের সাথে সাথে শতাধিক শিল্পী একসাথে গেয়ে উঠবে "এসো হে বৈশাখ এসো এসো"। এ সারা দিন মুখর থাকবে রমনা ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। দেশের প্রত্যেক শহর, গ্রামগঞ্জে বাঙালিরা মেতে উঠবে প্রাণের আবাহনে। বসবে মেলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এ এক অন্যরকম দিন। অন্যরকম সর্বজনীনতা।

ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে বাঙালির প্রাণের উৎসব। রং ছিটিয়ে রঙিন করে তুলবে মন ও পরিবেশ। সরকারি ছুটির দিন। জাতীয় দৈনিকগুলো প্রকাশ করেছে বিশেষ সংখ্যা। রেডিও-টেলিভিশনে প্রচার হচ্ছে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা। সেই সঙ্গে আছে বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের নানা আয়োজন। তবে পান্তা-ইলিশ খেতে ভুল করেন না অনেকেই।

কালের বিবর্তনে নববর্ষের সঙ্গে সম্পর্কিত অনেক পুরনো উৎসবের বিলুপ্তি ঘটেছে, আবার সংযোগ ঘটেছে অনেক নতুন উৎসবেরও। বাংলা সন। বৈশাখ। এ দুটির সঙ্গে হালখাতা জড়িয়ে আছে ঐতিহ্য হয়ে। তবে পুরনো এ ‘হালখাতা’র ঐতিহ্য এখন খুব কমই দেখা যায়। যদিও অতীতে বাংলা নববর্ষের মূল উৎসব ছিল হালখাতা। চিরাচরিত এ অনুষ্ঠানটি আজও পালিত হয়। তবে তা কম।

রাজধানীতে বর্ষবরণকে ঘিরে সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। দিনটিকে নির্বিঘ্নে উদযাপন করতে শহরজুড়ে নেয়া হয়েছে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা। রমনা উদ্যানসহ বিভিন্ন স্থানে বসানো হয়েছে সিসি ক্যামেরা। রমনা বটমূলে মূলমঞ্চ তৈরির কাজ শেষ হয়েছে । সস্পূর্ণ নিরাপদে বাঙালি উদযাপিত করুক বাংলা বর্ষ, এ প্রত্যাশা করছি।

বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে কর্পোরেট সংবাদের সকল পাঠক, বিজ্ঞাপনদাতা, কলা-কুশলী ও শুভানুধ্যায়ীদের জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা। সবার জীবনে আগামীর প্রতিক্ষণ হয়ে উঠুক অনাবিল আনন্দময়-এই প্রত্যাশায়, শুভ নববর্ষ।