রহিমা ফুডের উৎপাদনে ফেরা নিয়ে সঙ্কায় বিনিয়োগকারিরা

Posted on January 3, 2022

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের প্রধান শেয়ার বাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) তালিকাভুক্ত খাদ্য ও আনুসাঙ্গিক খাতের অন্তর্ভুক্ত রহিমা ফুড কর্পোরেশন লিমিটেড। বছরের পর বছর বিনিয়োগকারিদের হতাশ সাথে আট বছরেরো বেশি সময় উৎপাদনে না থেকেও চড়া দামে ট্রেড হচ্ছে কোম্পানিটির শেয়ার। উৎপাদনে নেই তবুও কেন এতো বেশি শেয়ারের দাম? সেই হিসাব মেলাতে না পেরে বড় কোন কারসাজি হচ্ছে বলে মনে করছেন কোম্পানিটির বিনিয়োগকারীরা।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, ৫০ কেটি টাকা অনুমোদিত মূলধন সাপেক্ষে ১৯৯৭ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় রহিমা ফুড কর্পোরেশন লিমিটেড। কোম্পানিটির বর্তমান পরিশোধিত মূলধনের পরিমান ২০ কোটি টাকা।

অস্বাভাবিক দর বৃদ্ধির কারণে দেশের দুই পুঁজিবাজার (ডিএসই এবং সিএসই) থেকে তালিকাচ্যুত হয়েছিল রহিমা ফুড কর্পোরেশন লিমিটেড। দেড় বছর পুঁজিবাজারের বাইরে থাকার পর ২০২০ সালের ডিসেম্বরের শেষ দিকে আবার লেনদেনে আসে এই কোম্পানি।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, লেনদেনে ফিরেই আবারো শেয়ার বাড়তে দেখা যায় রহিমা ফুডের। গত এক বছরে কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয় সর্বনিম্ন ১৭৫.৪০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৩৮২ টাকায়।

ডিএসই তথ্য মতে, ২০১৩ সালের জুন পর্যন্ত কোম্পানিটির উৎপাদন চালু ছিলো। গত বছরের জুনে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে কোম্পানিটির উৎপাদন শুরুর কথা ডিএসইকে জানালেও এখনো উৎপাদনে ফেরেনি রহিমা ফুডস।

এদিকে বিনিয়োগে ঝুঁকি রয়েছে রহিমা ফুড কর্পোরেশন লিমিটেডের। সাধারনত তালিকাভুক্ত কোম্পানির পিই রেশিও ৪০ টাকার ওপরে অবস্থান করলে উক্ত কোম্পানির বিনিয়োগ ঝুঁকিপূর্ণ বলে বিবেচিত হয়। সেদিকে রহিমা কর্পোরেশন ফুড লিমিটেডের বর্তমান পিই রেশিও ৪৬৬৭.১৪ টাকায় অবস্থান করছে।

কোম্পানিটি সর্বশেষ এজিএম করে ২০২১ সালের ২৭ ডিসেম্বর। ২০২১ সালে নামমাত্র ১ শতাংশ ডিভিডেন্ড দিলেও বিগত কোন বছরের ডিভিডেন্ড প্রদানের তথ্য মেলেনি রহিমা ফুড করপোরেশন লিমিটেডের।

৮ বছরেরো বেশি সময় কোম্পানির উৎপাদন নেই, বছরের পর বিনিয়োগ কারিদের লভ্যাংশ না দিয়েও কেন চড়া দামে শেয়ার ট্রেড হচ্ছে রহিমা ফুডের?

এই প্রশ্নের কোন উত্তর জানা নেই বলে কর্পোরেট সংবাদকে জানান প্রতিষ্ঠানটির কোম্পানি সেক্রেটারি মোঃ জাকির হোসেইন। কবে উৎপাদন চালু হতে পারে সেটিও জানেন না তিনি।

২০২১ সালে কোম্পানিটি এজিএম করলেও ২০২০-২০২১ অর্থবছরের বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদন অপ্রকাশিতই রয়ে গেছে কোম্পানিটির ওয়েবসাইটে।

এ প্রসঙ্গে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক মোঃ মিজানুর রহমান এফসিএস, কর্পোরেট সংবাদকে বলেন, “এসব কোম্পানির কারনেই বিনিয়োগকারিরা প্রতারনার শিকার হচ্ছেন প্রতিনিয়ত, এমনকি নতুন করে বিনিয়োগ করার সাহসও হারাচ্ছেন। যার কারনে ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে পুঁজিবাজারের”।

পুঁজিবাজারের ভাবমূর্তি রক্ষার্থে এবং বিনিয়োগকারিদের স্বার্থে নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোকে আরো কঠোর ভাবে মনিটরিং করার পরামর্শ দিয়ছেন এই বিশেষজ্ঞ।

৩১ ডিসেম্বর, ২০২১ তারিখে সমাপ্ত দ্বিতীয় প্রান্তিকের (অক্টোবর ২১- ডিসেম্বর ২১) অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে কোম্পানিটি। প্রতিবেদনে দেখা যায়, দ্বিতীয় প্রান্তিকে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি লোকসান (ইপিএস) হয়েছে ০.০৭ টাকা। গত বছর একই সময়ে ০.০৩ টাকা আয় হয়েছিল। ২য় প্রান্তিকে কোম্পানিটির নিট ওপারেরেটিং ক্যাশ ফ্লো ঋনাত্নক ০.২৫ টাকা যা একই সময় আগের বছর ধনাত্নক ছিলো ০.০৮ টাকা। ২য় প্রান্তিকে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি সম্পদ মূল্য দাড়ায় ৯.২১ টাকায় যা ৩০ জুন শেষে ছিলো ৯.২৯ টাকায়।

এদিকে আজকেও (৩০ জানুয়ারি) ১ম ঘন্টায় কোম্পানিটির শেয়ার দর বেড়েছে ৪.৬৮ শতাংশ। কোম্পানিটির গতকালের ক্লোজিং প্রাইস ছিলো ৩২৬.৭০ টাকা । আজকের ওপেনিং প্রাইস ৩৩১ টাকা। কোম্পানিটির মোট শেয়ার সংখ্যা ২ কোটি ২০০ টি। তারমধ্যে উদ্যোক্তা পরিচালকের ৩৭.৩৮ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারি ২০.৬৭, বিদেশি বিনিয়োগকারি ৪.৯৯ শতাংশ এবং বাকি ৩৬.৯৬ শতাংশ শেয়ার সাধারন বিনিয়োগকারির হাতে।