সেলিম রেজা, সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি: সিরাজগঞ্জের কাজিপুরে চলতি রবি মৌসুমে উপজেলার ১২ টি ইউনিয়নে কম বেশি সব ইউনিয়নের জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। বিশেষ করে যমুনা এপারে সরিষার বাম্পার ফলনের আশা করছে কৃষকরা। ভোজ্য তেলের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি এবং আমদানী নির্ভর ভোজ্য তেলের ওপর নির্ভশীলতা কমাতে কৃষি অধিদপ্তর কাজিপুর এর সার্বক্ষণিক পরামর্শ ও প্রণোদনায় কাজিপুরের কৃষকরা আমন ক্ষেতে সরিষা চাষ করে আশার আলো দেখছেন।
উপজেলা বিভিন্ন এলাকা ঘরে দেখা যায়, বিস্তীর্ণ মাঠ জুড়ে সরিষার হলুদ ফুলের সমাহার। আমন ধান কাটার সাথে সাথে ওই জমিতেই সরিষা চাষ করছেন কৃষকরা।
কাজিপুর কৃষি বিভাগ বলছে, খরচ ও চাষের সময় দুটোই কম হওয়ায় কৃষকের কাছে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে সরিষা চাষ। গত কয়েক বছরে নতুন নতুন জাত উদ্ভাবনের ফলে শস্যটির ফলনও আগের চেয়ে বেড়েছে।
এদিকে ভোজ্যতেলের আমদানি নির্ভরতা কমাতে সরিষাকে বিকল্প হিসেবে দেখছে সরকার। এজন্য ফসলটির উৎপাদন বাড়াতে কৃষককে বীজ ও সার সহ দেওয়া হচ্ছে পরামর্শ। ফসলের শ্রেণি বিন্যাসে পরিবর্তন এনে গতিশীল করা হচ্ছে সরিষার চাষ।
অন্যদিকে আমন ধান গোলায় তুলে বোরো চাষের বীজতলাসহ সকল প্রস্ততি সম্পন্ন করতে কৃষকের যতটুকু সময় লাগে এর মাঝেই ক্ষেত থেকে সরিষা ঘরে উঠে আনতে পারে কৃষক। তাই অনেকেই আমন ধান সংগ্রহের পর জমি ফেলে না রেখে সরিষা চাষের পর আবার বোরো ধান রোপণ করেন। এতে একই জমিতে বছরে তিনটি ফসল উৎপাদন করে বাড়তি লাভবান হতে পারে কৃষক।
বোরো আবাদের আগে ভাগে সরিষা তুলতে চায় কৃষকরা। অর্থকরি এই ফসলের জন্য তেমন একটা সার প্রয়োগ করতে হয়না। উর্বর জমিতে খুব সহজেই সরিষা রোপন করার পর তা বেড়ে ওঠে। ফলনও বেশ ভালো হয়। উপজেলার সোনামুখি, মাইজবাড়ি, চালিতাডাঙ্গা, কাজিপুর, সদর, গান্ধাইল ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় মাঠে মাঠে সরিষা চাষাবাদ লক্ষ্য করা গেছে।
কথা হয় মাইজবাড়ি ইউনিয়নের পাইকরতলী গ্রামের কৃষক শাহাজাহান আলীর সাথে, তিনি বলেন আবহাওয়া ভালো থাকায় কৃষি অফিসের সঠিক সময়ে বিভিন্ন পরামর্শ পাওয়ায় সরিষার বাম্পার ফলন হওয়ার আশা করছি। আমি ৪০ শতক জমিতে দেশী সরিষা চাষাবাদ করেছি। খুব ভালো ফলন হবে আশা করছি।
তিনি আরও বলেন, আমার দুই ভাই ৮০ শতক জমিতে সরিষা চাষাবাদ করেছে ভালো ফলন হবে। তাছাড়া উপসহকারী কৃষি অফিসার শাহীন আলম সবসময় আমাদের পরামর্শ দিয়েছেন।
পাইকরতলী গ্রামের সরিষা চাষী জাহাঙ্গীর আলম জানান, ভোজ্য তেলের দাম বৃদ্ধির সাথে সাথে সরিষার দামও বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে। ফলে বাড়তি লাভের পাশাপাশি পরিবারের চাহিদা পুরুন হচ্ছে। তাই নিজ পরিবারের চাহিদা পুরুনের পাশাপাশি বিক্রির জন্য এক বিঘা জমিতে সরিষা চাষাবাদ করেছি। আবাদ ভালো হয়েছে। আশা করছি ফলনও ভালো হবে। কোন দুর্যোগ না হলে ফসল ঘরে তুলতে পারব।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি রবি মৌসুমে ৯৩০হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ লক্ষমাত্রা ধরা হলে ও অর্জিদ লক্ষ মাত্রা ১২২৫ হেক্টর। গত বছরে রবি মৌসুমে সরিষার আবাদও ভালো হয়েছিল।
এবার কাজিপুরে বিভিন্ন জাতের সরিষা চাষাবাদ করা হয়েছে যেমন: টরি-৭, বারি-৯, বিনা সরিষা-৪, বিনা সরিষা-৯, বারি-১১ ,বারি-১৪ বারি-১৫, বারি -১৮। এছাড়া এসব জাতের মধ্যে বারি-১৪,১৭ জাতের নতুন উদ্ভাবিত বেশি ফলনশীল সরিষার আবাদ করা হয়েছে। এতে ফলনের মাত্রা ও বেশি হবে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় উৎপাদন লক্ষমাত্রার চেয়ে বেশি ফলনের আশা করছে কৃষকরা। প্রতি বিঘায় ৮ থেকে ৯ মনের সম্ভবনা রয়েছে। এছাড়াও কৃষি প্রণোদনা সহায়তায় ৫৭০ জন কৃষকের মাঝে ৫৭০ বিঘা জমিতে সরিষা চাষাবাদ করার লক্ষ্যে সার ও বীজ বিতরণ করা হয়েছে।
উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ রেজাউল করিম জানান, রবি মৌসুমে সব রকম ফসলের পাশাপাশি এখন সরিষার আবাদ বাড়ছে।
তিনি বলেন, রবি মৌসুমে এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলনও ভালো হবে। এ মৌসুমে সরিষা চাষাবাদে কৃষি অফিস থেকে মাঠ পর্যায়ে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা সঠিকভাবে কৃষকদের বিভিন্ন সময়ে প্রয়োজনীয় পরামর্শ, তদারকি ও সহযোগিতা করেছেন। বিভিন্ন সময়ে প্রণোদনার আওতায় কৃষকদের বিনামূল্যে সারও বীজ দেওয়া হয়েছে। এবার আশানুরুপ ফলন পাবে কৃষকরা।
© ২০২৩ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | কর্পোরেট সংবাদ সম্পাদক - মোঃ মিজানুর রহমান । উপদেষ্টা সম্পাদক- জেসমিন আক্তার, এফসিএস ই-মেইলঃ corporatesangbad@gmail.com । ফোনঃ ০২২২-৩৩৫৪১২৫ । মোবাইলঃ ০১৭১১০৭৬৮১৫ অফিসঃ ৫৫/বি, নোয়াখালী টাওয়ার, ১১ তলা, সুইট ১১-এফ, পুরানা পল্টন, ঢাকা ১০০০ |
কাজিপুরে সরিষার বাম্পার ফলনে আশার আলো দেখছেন কৃষকরা https://corporatesangbad.com/137/ |